
কোটা আন্দোলনের খেলারাম কারা?
হাসান শান্তুনু
যেসব রাষ্ট্রে ‘স্ট্রংম্যান মডেলের’ সরকার ক্ষমতাসীন, সেখানে কতিপয় গোষ্ঠী কখন কার ইশারায় কোন দাবিতে মাঠে নামে, তা চটজলদি বলা মুশকিল। রাষ্ট্রগুলোতে ‘গণতন্ত্র, বিরোধীমতের চর্চা’ আছে, এমনটা বোঝাতে প্রায় সময় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা কিছু গোষ্ঠীকে নির্দিষ্ট দাবিতে মাঠে নামান। ‘আন্দোলনের’ ফল ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পক্ষে নিয়ে তারা সরকারের ‘জনমত’ বাড়ান। অনেক সময় সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দল, শক্তিও বিভিন্ন গোষ্ঠীকে মাঠে নামিয়ে ফায়দা নেয়। ‘স্ট্রংম্যান মডেলের’ সরকার বলে বিরোধীদলের পক্ষে প্রায় সময় তা সম্ভব হয় না। সরকারি বিশ্ববদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রত্যয় পেনশন কর্মসূচি বাতিল করে ‘বিশ্বমানের শিক্ষক’ হিসেবে সুবিধা পেতে যাদের নেতৃত্বে আন্দোলন করছেন, তাদের মধ্যে অনেকে যতোটা না শিক্ষক, এর চেয়ে বেশি সরকারের ‘গুণমুগ্ধ আবেদ’। এ আন্দোলন তাই যথেষ্ট সন্দেহের। শ্রেণিকক্ষে পাঠ বন্ধ রেখে কোন উদ্দেশ্যে রাস্তায় নেমেছেন, শিক্ষকের বদলে ‘রাজপথের রাজা’ সাজছেন, কার কাছে রাবীন্দ্রিক, শরৎচন্দ্রীয় সুরে আবেদন জানাচ্ছেন, তাদের কর্মসূচি পালনের ধরন দেখে তা আঁচ করা কঠিন। তাদের আন্দোলনের গন্তব্যের চিন্তা কর্মসূচিতে নেই।
শিক্ষকদের কর্মসূচিতে একঘণ্টার বক্তব্যের মধ্যে প্রায় আটান্ন মিনিট থাকে সরকারের প্রশংসা। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সরকার দেশে তাক লাগানো অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে। বৈশ্বিক সুদের কারবারি বিশ্বব্যাংক, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মুরব্বিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সরকার। সরকারের প্রশংসাগীতি গাইতে মূল দায়িত্ব শ্রেণিকক্ষে পাঠ বাদ দিয়ে শিক্ষকদের কেন পথের পথিক হয়ে ওঠতে হবে, এর পক্ষে যুক্তি নেই। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে মাঠে নামা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীরা মিশেছেন বলে দাবি সরকারের একাধিক মন্ত্রীর। এবার শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি পালনের শুরু থেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা বিষয়টিকে আদালতের ওপর ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানান। বিএনপিও শিক্ষার্থীদেরকে উস্কানি দিচ্ছে, ‘তারা যেভাবে কোটা বাতিলের জন্য লড়ছেন, সেভাবে যেন বিএনপির হয়ে ভোটের জন্য লড়েন।’
সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার চীন সফরের আগে শুরু হওয়া কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের মিত্র আর সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হতে না পারার যন্ত্রণায় কাতর রাশেদ খান মেনন, দিলীপ বড়ুয়ার মতো চৈনিক বামরা বলছেন অন্য কথা। সরকারের মিত্র হয়েও তাদের ভিন্ন কথায় খটকা লাগছে। সরকারে না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুতে তারা সরকারের সুরেই কথা বলেন। কোটা সংস্কার নিয়ে চৈনিক বামদের সুর ভিন্ন কেন? সংসদের পোষ্য বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদেরও ‘ঝোপ বোঝে’ কথা বলছেন। তিনি কখন কী বলেন, না বলেন, এগুলোর সবই হচ্ছে সরকার থেকে জাতীয় পার্টির সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে। বেশ্যারও একসময় সতীত্ব থাকে, জাতীয় পার্টির তা কখনোই ছিলো না। এ দলের কে কী বললেন, এর কোনো রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই। কোটা নিয়ে আজকের হযবরল অবস্থার জন্য সরকার দায়ী। শিক্ষার্থীদের আগেরবারের আন্দোলনের সময় সরকার এর যৌক্তিক সমাধান করলে বিষয়টি এতোদূর গড়াতো না। আদালতের ওপর দায় না চাপিয়ে সরকার আন্তরিক হলে বিষয়টির সমাধান কয়েক মিনিটের মধ্যে সম্ভব। চাকরির বিষয়টি প্রশাসনিক, এর সমাধানের দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের।
এবার শিক্ষার্থীরা নতুন করে কর্মসূচিতে নামার পর সমাধানের দিকে না গিয়ে তাদেরকে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার আহবান জানায় সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষা কার্যক্রম বাদ দিয়ে যখন মাঠে, শিক্ষার্থীরা তখন শ্রেণিকক্ষে গিয়ে কী করবেন? দলীয় শিক্ষকদেরকে আগে না ফিরিয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরার আহবান জানানো যথারীতি মশকরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরো চাঙা করতে একইসময় শিক্ষকদেরকে মাঠে রাখতে খেলারামরা খেলেননি, এটা কী হলফ করে বলা যায়? যে পক্ষ শুরু থেকেই বলছে, এটা রাজাকারদের উত্তরসূরির আন্দোলন, তারা কতিপয় শিক্ষার্থীর ‘রাজাকার’ শ্লোগানের পর বলতে পারবে, আমরা ঠিকই বলেছি। তারা এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রসঙ্গ সামনে আনবেন বেশি করে। কোটা আন্দোলন বিতর্কিত হবে। শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক পরিণতি পাওয়ার সম্ভাবনা ক্রমে কমবে। কোটা সমস্যা ঝুলে যেতে পারে।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামী লীগের সরকার করেছে। দলটি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে জনমত দলটির দিকে বেশি থাকে। খেলা যা-ই হোক, কোটা আন্দোলন থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, এর সরকারের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। লেখার শুরুতে যা বলেছিলাম, ‘কতিপয় গোষ্ঠী কখন কার ইশারায় কোন দাবিতে মাঠে নামে, তা চটজলদি বলা মুশকিল।’ কোটা আন্দোলনের খেলারাম কারা?
যেসব রাষ্ট্রে ‘স্ট্রংম্যান মডেলের’ সরকার ক্ষমতাসীন, সেখানে কতিপয় গোষ্ঠী কখন কার ইশারায় কোন দাবিতে মাঠে নামে, তা চটজলদি বলা মুশকিল। রাষ্ট্রগুলোতে ‘গণতন্ত্র, বিরোধীমতের চর্চা’ আছে, এমনটা বোঝাতে প্রায় সময় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা কিছু গোষ্ঠীকে নির্দিষ্ট দাবিতে মাঠে নামান। ‘আন্দোলনের’ ফল ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পক্ষে নিয়ে তারা সরকারের ‘জনমত’ বাড়ান। অনেক সময় সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দল, শক্তিও বিভিন্ন গোষ্ঠীকে মাঠে নামিয়ে ফায়দা নেয়। ‘স্ট্রংম্যান মডেলের’ সরকার বলে বিরোধীদলের পক্ষে প্রায় সময় তা সম্ভব হয় না। সরকারি বিশ্ববদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রত্যয় পেনশন কর্মসূচি বাতিল করে ‘বিশ্বমানের শিক্ষক’ হিসেবে সুবিধা পেতে যাদের নেতৃত্বে আন্দোলন করছেন, তাদের মধ্যে অনেকে যতোটা না শিক্ষক, এর চেয়ে বেশি সরকারের ‘গুণমুগ্ধ আবেদ’। এ আন্দোলন তাই যথেষ্ট সন্দেহের। শ্রেণিকক্ষে পাঠ বন্ধ রেখে কোন উদ্দেশ্যে রাস্তায় নেমেছেন, শিক্ষকের বদলে ‘রাজপথের রাজা’ সাজছেন, কার কাছে রাবীন্দ্রিক, শরৎচন্দ্রীয় সুরে আবেদন জানাচ্ছেন, তাদের কর্মসূচি পালনের ধরন দেখে তা আঁচ করা কঠিন। তাদের আন্দোলনের গন্তব্যের চিন্তা কর্মসূচিতে নেই।
শিক্ষকদের কর্মসূচিতে একঘণ্টার বক্তব্যের মধ্যে প্রায় আটান্ন মিনিট থাকে সরকারের প্রশংসা। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সরকার দেশে তাক লাগানো অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে। বৈশ্বিক সুদের কারবারি বিশ্বব্যাংক, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মুরব্বিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সরকার। সরকারের প্রশংসাগীতি গাইতে মূল দায়িত্ব শ্রেণিকক্ষে পাঠ বাদ দিয়ে শিক্ষকদের কেন পথের পথিক হয়ে ওঠতে হবে, এর পক্ষে যুক্তি নেই। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে মাঠে নামা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীরা মিশেছেন বলে দাবি সরকারের একাধিক মন্ত্রীর। এবার শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি পালনের শুরু থেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা বিষয়টিকে আদালতের ওপর ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানান। বিএনপিও শিক্ষার্থীদেরকে উস্কানি দিচ্ছে, ‘তারা যেভাবে কোটা বাতিলের জন্য লড়ছেন, সেভাবে যেন বিএনপির হয়ে ভোটের জন্য লড়েন।’
সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার চীন সফরের আগে শুরু হওয়া কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের মিত্র আর সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হতে না পারার যন্ত্রণায় কাতর রাশেদ খান মেনন, দিলীপ বড়ুয়ার মতো চৈনিক বামরা বলছেন অন্য কথা। সরকারের মিত্র হয়েও তাদের ভিন্ন কথায় খটকা লাগছে। সরকারে না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুতে তারা সরকারের সুরেই কথা বলেন। কোটা সংস্কার নিয়ে চৈনিক বামদের সুর ভিন্ন কেন? সংসদের পোষ্য বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদেরও ‘ঝোপ বোঝে’ কথা বলছেন। তিনি কখন কী বলেন, না বলেন, এগুলোর সবই হচ্ছে সরকার থেকে জাতীয় পার্টির সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে। বেশ্যারও একসময় সতীত্ব থাকে, জাতীয় পার্টির তা কখনোই ছিলো না। এ দলের কে কী বললেন, এর কোনো রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই। কোটা নিয়ে আজকের হযবরল অবস্থার জন্য সরকার দায়ী। শিক্ষার্থীদের আগেরবারের আন্দোলনের সময় সরকার এর যৌক্তিক সমাধান করলে বিষয়টি এতোদূর গড়াতো না। আদালতের ওপর দায় না চাপিয়ে সরকার আন্তরিক হলে বিষয়টির সমাধান কয়েক মিনিটের মধ্যে সম্ভব। চাকরির বিষয়টি প্রশাসনিক, এর সমাধানের দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের।
এবার শিক্ষার্থীরা নতুন করে কর্মসূচিতে নামার পর সমাধানের দিকে না গিয়ে তাদেরকে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার আহবান জানায় সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষা কার্যক্রম বাদ দিয়ে যখন মাঠে, শিক্ষার্থীরা তখন শ্রেণিকক্ষে গিয়ে কী করবেন? দলীয় শিক্ষকদেরকে আগে না ফিরিয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরার আহবান জানানো যথারীতি মশকরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরো চাঙা করতে একইসময় শিক্ষকদেরকে মাঠে রাখতে খেলারামরা খেলেননি, এটা কী হলফ করে বলা যায়? যে পক্ষ শুরু থেকেই বলছে, এটা রাজাকারদের উত্তরসূরির আন্দোলন, তারা কতিপয় শিক্ষার্থীর ‘রাজাকার’ শ্লোগানের পর বলতে পারবে, আমরা ঠিকই বলেছি। তারা এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রসঙ্গ সামনে আনবেন বেশি করে। কোটা আন্দোলন বিতর্কিত হবে। শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক পরিণতি পাওয়ার সম্ভাবনা ক্রমে কমবে। কোটা সমস্যা ঝুলে যেতে পারে।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামী লীগের সরকার করেছে। দলটি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে জনমত দলটির দিকে বেশি থাকে। খেলা যা-ই হোক, কোটা আন্দোলন থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, এর সরকারের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। লেখার শুরুতে যা বলেছিলাম, ‘কতিপয় গোষ্ঠী কখন কার ইশারায় কোন দাবিতে মাঠে নামে, তা চটজলদি বলা মুশকিল।(‘লেখক: সাংবাদিক) ফেসবুক থেকে নেয়া।
