মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে অর্থনীতির একের পর এক জট, আমেরিকার আকাশে মন্দার কালো মেঘ?
বিশ্বজিৎ দত্ত : [১]বিশেষজ্ঞদের দাবি, একের পর এক অর্থনীতি সংক্রান্ত জট মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে আমেরিকায়। সরকার অর্থনীতি সামলাতে কিছুটা হলেও হোঁচট খাচ্ছে।
[২]বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি রয়েছে আমেরিকায়। তাদের মুদ্রাই বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি। বিশ্বের নানা প্রান্তে কোথাও কোনও দেশ বিপদে পড়লে আমেরিকা অর্থসাহায্য করে থাকে।
[৩]বিশেষজ্ঞদের দাবি, একের পর এক অর্থনীতি সংক্রান্ত জট মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে আমেরিকায়। সরকার অর্থনীতি সামলাতে কিছুটা হলেও হোঁচট খাচ্ছে। এতে খুব শীঘ্র বিপদের আশঙ্কা না থাকলেও ভবিষ্যতের জন্য সিঁদুরে মেঘ ঘনাচ্ছে।
[৪]১৯২৯ সালে মন্দা আঘাত হেনেছিল আমেরিকার অর্থনীতিতে। টানা ১০ বছর পর্যন্ত সেই মন্দা চলেছিল। শুধু আমেরিকা নয়, বিশ্বের অনেক দেশকেই প্রভাবিত করেছিল সেই মন্দা। [৫]অত বড় মাপের না হলেও শীঘ্রই মন্দা আমেরিকার বাজার গ্রাস করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। [৬]সংবাদমাধ্যম ‘ফক্স বিজনেস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘বিসিএ রিসার্চ’-এর প্রধান কুশলী পিটার বেরেজিন সতর্ক করেছেন, চলতি বছরের শেষে বা ২০২৫ সালের প্রথমে মন্দা দেখা দিতে পারে আমেরিকায়।
[৭]ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, শেয়ার বাজারের মন্দা, ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং ইউরোপ ও চিনের অর্থনীতির মন্থর বৃদ্ধি নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পিটার।
[৮] অর্থবর্ষের পর পর দু’টি ত্রৈমাসিকে জিডিপি পতন হলে বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিবিদেরা মন্দার আশঙ্কা করেন। ‘ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকোনমিক রিসার্চ’ মন্দাকে কোনও দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উল্লেখযোগ্য পতন হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
[৯]আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজার্ভের নীতিনির্ধারণী সংস্থা ‘ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটি’ জুন মাসে অনুমান করেছে, ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে সে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হতে পারে মাত্র এক শতাংশ।
[১০]ফেড রিজার্ভ ২০২৩ সালে চার বার সুদের হার বাড়িয়েছে। যা আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারকে টেনে নামিয়েছে। পাশাপাশি অনুমান, আমেরিকার অনেক সংস্থার অর্থনৈতিক বৃদ্ধিও এ বছর কম হতে পারে।
[১১]ফোর্বসের মতে, ২০২২ সাল থেকে অন্তত একটি ইঙ্গিত আমেরিকার আসন্ন আর্থিক মন্দাকে নির্দেশ করছে। দাবির সমর্থনে ট্রেজারি নোটের বৃদ্ধির বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করেছে তারা।
[১২]বিভিন্ন সমীক্ষার মতে, আমেরিকার কর্মসংস্থানের অবস্থাও খুব একটা ভাল নয়। আমেরিকার বেকারত্বের হার ঐতিহাসিক ভাবে কম, মাত্র ৩.৮ শতাংশ। [১৩]সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভোক্তা মূল্য সূচক (কনজিউমার প্রাইস ইনডেস্ক)-ও খুব কম মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
[১৪]আমেরিকায় সরকারের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ধর্মঘটও। গত বছরেই দেশের গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থাগুলির কর্মীরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। ক্রমে ধর্মঘটের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছিল। ফলে আমেরিকার অর্থনীতির একটা বড় ভরসার জায়গা নড়বড়ে হয়ে উঠেছে বলে খবর।
[১৫]বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু গাড়ি নয়, সামগ্রিক ভাবে আমেরিকার নির্মাণশিল্পের গতিই সম্প্রতি শ্লথ হয়েছে। নতুন করে ডালপালা মেলতে পারছে না। উৎপাদন কমে এসেছে।
[১৬]কোভিড অতিমারির ধাক্কাও আমেরিকা ঠিক মতো এখনও সামলে উঠতে পারেনি বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
[১৭]গত বছরের শেষে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, আমেরিকার বিভিন্ন ব্যাঙ্কে সুদের হার ক্রমশ বাড়ছে। অর্থনীতিবিদেরা সেই বিষয়টিকেও খুব ভাল চোখে দেখছেন না।
[১৮] এতে ভবিষ্যতে সে দেশের অর্থনীতির উপর প্রভাব পড়তে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
[১৯]অর্থনীতিবিদেরা এই কারণগুলিকে তুচ্ছ করে দেখার পক্ষপাতী নন। আগামী দিনে এই ছোট সমস্যাগুলিই মন্দা ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
[২০]আমেরিকা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ায় সেখানে মন্দা দেখা দিলে তার প্রভাব পড়তে পারে অন্য দেশের উপরেও। সর্বত্র মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতির মতো সমস্যা প্রকট হবে।
[২১]সার্বিক ভাবে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার দিকে এগিয়ে যাবে। তাই আমেরিকার অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির দিকে বিশেষ নজর রাখছেন বিশেষজ্ঞেরা।