
মেহেরপুর জেলায় ৬০ হাজার পরিবার ছাগল পালন করছে : জেলা প্রাণীসম্পদ অফিস
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : [১] ৮০র দশকে জাপানের জাইকা বিএডিসির মাধ্যমে মেহেরপুরে ব্লাকবেঙ্গল ছাগলের খামার গড়ে উঠে। ব্লাকবেঙ্গলখ্যাত ছাগলটি এখন গরীবের গাভীখ্যাত, আয়ের উৎস এখন। ছাগলটি দ্রুত প্রজননশীল উন্নতমানের মাংস এবং ব্লাকবেঙ্গল ছাগলের চামড়ার জন্যও বিখ্যাত বলে জানিয়েছেন চাষীরা।
[২] এই ছাগল পালনের মধ্যদিয়ে বেকার সমস্যা দূরীকরণ, দারিদ্র বিমোচন, পুষ্টি সরবরাহবৃদ্ধি এবং বৈদেশিকমুদ্রা অর্জনে অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে বলেও জানিয়েছেন। অতীতকাল থেকেই মেহেরপুরের পাশেই চুয়াডাঙ্গা জেলাকে ব্লাকবেঙ্গল জাতের ছাগল জেলাকে ব্রান্ডিং করেছে।
[৩] ব্লাকবেঙ্গল ছাগল চাষী ফরমান মিঞা বলেন, সেই ৮০র দশকে জাপানের জাইকা বিএডিসির মাধ্যমে মেহেরপুরে ছাগল খামার গড়ে এই অঞ্চলে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাঠা ছাগলের মাধ্যমে ক্রস করার ফলে বর্তমানে ব্লাকবেঙ্গল হারিয়ে যাবার পথে।
[৪] তিনি বলেন, ব্লাকবেঙ্গলকে ফিরিয়ে আনতে সামাজিক সংগঠন,ওয়েভ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনের মাধ্যমে আয়-বৃদ্ধিকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথ দেখাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি ভ্যালুচেইন উন্নয়ন প্রকল্প ইফাদ এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন এর সহযোগিতায় মেহেরপুর জেলায় ৬ হাজার পরিবারকে মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী করেছে।
[৫] ফলে এই জেলার ৬ হাজার পরিবারে ব্লাক বেঙ্গল এনে দিয়েছে সমৃদ্ধি। ওয়েভ ফাউন্ডেশন শুধুমাত্র ছাগল উৎপাদনের সাথেই জড়িত না, সংগঠনটি ছাগল উৎপাদনের জন্য আরো যে সমস্ত বিষয়গুলো গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে যেমন, খাদ্য বিক্রেতা, ঔষধ বিক্রেতা, গ্রাম্য পশু চিকিৎসকসহ কসাই বেপারী তাদের সবাইকে নিয়েই কাজ করে।
[৬] ফোরমান আরও বলেন, প্রকল্পটি ছাগল উৎপাদনকারী ছাড়াও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদেরও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতন করে ছাগল উৎপাদন ও নিজেদের আয়বৃদ্ধিতে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ জন্যই এ প্রকল্পটির নাম ভ্যালু চেইন উন্নয়ন প্রকল্প, অর্থ্যাৎ ছাগল উৎপাদনে যে সমস্ত চেইনের ভূমিকা আছে তার সবগুলোর উন্নয়নের লক্ষেই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ২৫০ জন খামারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি ২৫ জন খাদ্য বিক্রেতা ও ঔষধ বিক্রেতাকে, ২৫ জন বেপারী এবং কসাইসহ ২৫ জন কাঁচাঘাষ চাষীকে, ২০ জন গ্রাম্য পশু চিকিৎসককে প্রশিক্ষন দিয়েছে।
[৭] সেই সঙ্গে ছাগল উৎপাদনসহ ও ছাগলের মৃত্যুহার কমাতে অবদান রাখছে সংস্থাটি। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে মেহেরপুর জেলায় ৬০ হাজার পরিবার ছাগল পালন করছে। বর্তমানে এসব জেলার হত দরিদ্র পরিবার গড়ে ১টি, দরিদ্র পরিবার গড়ে ২টি এবং ক্ষুদ্র-উদ্যোক্তা (নন-পুওর) গড়ে ৩টি করে ছাগল প্রচলিত পদ্ধতিতে বছরব্যাপী পালন করছে।
[৮] এসব পরিারের প্রায় ৮০ ভাগ মহিলা ছাগল পালনের সাথে জড়িত। তারা গড়ে ১টি ছাগল পালনের মাধ্যমে বাৎসরিক প্রায় ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করছে। উন্নতমানের মাংস, বিশ্ববিখ্যাত চামড়া, অধিক সংখ্যায় বাচ্চা দেয়া, স্বল্প খাদ্যভোগী, স্বল্প পুঁজি ও অল্প জায়গায় করা যায় ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের জাতটি যুগযুগ ধরে বাংলাদেশে পারিবারিকভাবে পালিত হয়ে আসছে।
[৯] ওয়েভ ফাউন্ডেশন ৬ হাজার নারী সদস্যর মধ্যে ২০১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৫ হাজার ২৫০ জন দুস্থ নারী সদস্যকে ব্ল্যাকবেঙ্গল ছাগল পালনের উপর প্রশিক্ষন প্রদান করেছে। ৫শ জন সদস্যকে মাঁচা পদ্ধতিতে ছাগল পালনের জন্য ২ হাজার টাকা করে উৎসাহ ভাতা প্রদান করার ফলে ৫০০টি খামার গড়ে উঠেছে। প্রকল্পের সহযোগিতায় ১৫ জন অতি দরিদ্র ব্লাকবেঙ্গল জাতের পাঠা পালনে আর্থিক সহযোগিতা করেছে।
[১০] মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আজান গ্রাামের জাহানারা বেগম জানান-ছাগল পালনে ওয়েভ ফাইন্ডেশনে প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি ছাগল দিয়ে তিনি ছাগল পালন শুরু করেন। বর্তমানে ছোট বড় সব মিলিয়ে ১৩টি ছাগল আছে। মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করায় ছাগলের তেমন রোগ বালাই নেই বলে জানান।
[১১] মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের হাসেম আলী জানান,পাঁচ বছর আগে ওয়েভ ফাইন্ডেশনের মাধ্যমে ছাগল পালনে প্রশিক্ষণ নিয়ে দু’টি ছাগল দিয়ে ছাগল পালন শুরু করেন। বর্তমানে তার ১৮ টি ছাগল রয়েছে। এ বছর কোরবানির ঈদে প্রায় ১ লাখ টাকার ছাগল বিক্রি করেছেন বলে জানান।
[১২] জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেবেন্দ্রনাথ সরকার জানান, ব্লাকবেঙ্গল বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। এটিই ছাগলের একমাত্র জাত। একটি ছাগি দৈনিক দেড় লিটার দুধ দেয়। দুধ প্রদানকাল থেকে ৩ মাস। দুধে ৪ দশমিক ৫ ফ্যাট, ৩ দশমিক ৫ প্রোটিন, ৫ দশমিক ২ ল্যাকটোজ এবং ১৬ শতাংশ খনিজ থাকে। উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় প্রতিবারে ৩ থেকে ৪টি বাচ্চা দেয়।
[১৩] এ ব্লাকবেঙ্গল মেহেরপুরের শতকরা ৪৫ ভাগ পরিবার ১টি করে ছাগল পালন করে কোরবাণীর চাহিদা মেটাতে। এছাড়া জেলায় ছোট বড় মিলে ২৮ হাজার ৫৩০ জন খামারী বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ছাগল পালন করছে। জেলায় বর্তমানে ৩ লাখ ৫ হাজার ৫শ ছাগল আছে।
