
কাল নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

মাসুদ মিয়া: [১] সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি কমেছে, অথচ বাংলাদেশে বেড়েছে। বাজারে চলছে ডলারের সংকট। ব্যাংকগুলোতে টাকাও নেই। আর্থিক খাতের এসব সমস্যা সমাধানের মূল দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। তবে কোনোভাবেই সংকটের লাগাম টানতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
[২] মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে বাড়ানো হয়েছে নীতি সুদহার। ব্যাংক ঋণের সুদহার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বাজারের ওপর। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ডলারের সংকটও কাটেনি। বরং ১৩ বছরের মধ্যে রেকর্ড হয়েছে মূল্যস্ফীতি। ডলার রিজার্ভ কমছেই। এরপরও মুদ্রানীতি নিয়ে একই পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। [৩] আগামীকাল ১৮ জুলাই নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেদিন আগের মতোই নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থবছরে দুবার মুদ্রানীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা রক্ষার চেষ্টা করে। এরই ধারাবাহিকতায় কাল বৃহস্পতিবার আসবে নতুন মুদ্রানীতি। [৪] এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাজস্বনীতির সঙ্গে সমন্বয় করে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি সংকোচনমূলকই রাখা হবে। এ খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ আসবে না। দেখতে হবে তদারকির বিষয়টি।
[৫] সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ তুলে দেওয়া হয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে। নতুন নিয়ম ‘স্মার্ট পদ্ধতিতে’ সুদহার নির্ধারণের ভিত্তি ধরা হয়। যেখানে স্মার্ট সুদহারের সঙ্গে ৩.৭৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করার কথা বলা হয়। এ পদ্ধতির শুরুতে গত বছরের জুলাইয়ে ব্যাংক ঋণের সুদহার ছিল ১০ দশমিক ১০ শতাংশ, যা গত এপ্রিলে এসে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশে। এরপর ৮ এপ্রিল থেকে সুদহার বাজারভিত্তিক করা হয়। কোনো কোনো ব্যাংকের সুদের হার ১৮ শতাংশের কাছাকাছি চলে যায়। সে হিসাবে এক বছরে সুদহার বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতেও ব্যাংক ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক রাখা হবে।
[৬] অন্যদিকে বাজারে অর্থের প্রবাহ কমাতে আগেই নীতি সুদহার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও মূল্যস্ফীতি নিয়ে কোনো সুখবর আসেনি। গত অর্থবছরের জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ শতাংশ। সেখানে সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা বিগত ১৩ বছরে সর্বোচ্চ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংক এবার নীতি সুদহার আরও বাড়াতে পারে। এর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে ৭ শতাংশের কম।
[৭] এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সবগুলো টুলসই ব্যবহার করেছে। সুদের হার নিয়ন্ত্রণ বা বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, টাকার সরবরাহ কমিয়ে পণ্যের দাম কমিয়ে আনার নীতিও কাজ করছে না। কারণ এখানে সিন্ডিকেট, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং বিশ্ববাজারের অনেক বিষয়ের ওপর বাজার নিয়ন্ত্রণ নির্ভর করে। ১৮ জুলাই যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে এজন্য এরই মধ্যে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
[৯] গভর্নরের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন চার ডেপুটি গভর্নর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা, অর্থনীতিবিদ আবু ইউসুফ, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হুসেইন ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম।স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাজস্ব নীতির সঙ্গে সমন্বয় করে এবারের মুদ্রানীতিও রাখা হবে সংকোচনমূলক। [১০] গত দুবারের মুদ্রানীতিতে মানি সাপ্লাই বেজড মুদ্রানীতি থেকে বেরিয়ে ইন্টারেস্ট রেট বেজড মুদ্রানীতি করেছি। চলতি অর্থবছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে পারবো।
