প্রতি লাখ ক্যানসারে আক্রান্ত ১১৪ জন
শাহীন খন্দকার : [১] বাংলাদেশে প্রতি লাখে ১১৪ জনের ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে। পুরুষ প্রতি লাখে ১২০ জন, নারী ১০৮ জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ প্রকাশিত এক গবেষণায় বিষয়টি উঠে এসেছে।
[২] গতকাল মঙ্গলবার সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাললের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সেমিনারে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় ৫১-৬০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পুরুষদের ১৮ শতাংশ ক্যানসার পাওয়া গেছে। এরমধ্যে বয়স অনুসারে পুরুষরা সবচেয়ে বেশি ক্যানসারে আক্রান্ত।
[৩] দেশের ২৭ হাজার ৭৮৭টি বাড়িতে থাকা ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৭৫ জনের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়েছে। এতে ১১৩ জন ক্যানসার রোগী পাওয়া গেছে। হার হিসেবে তা প্রতি লাখে ১১৪ জন। গত বছরের ২০২৩ ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এই গবেষণা কার্যক্রম চালানো হয়। সে অনুসারে বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা হিসাবে দেশে ক্যানসারের রোগী সংখ্যা ২ লক্ষাধিক।
[৪] পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রধান গবেষক ডা. মো. খালেকুজ্জামান পিএইচডি জানান, এই গবেষণার উদ্দেশ্য হলো বালাদেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্যানসার পরিস্থিতি নির্ণয় করা। এসময়ে তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পুমদি, শাহেদল, আড়াইবাড়িয়া এবং গোবিন্দপুর ইউনিয়নে এ গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে।
[৫] সেমিনারে আলোচকরা ক্যানসার প্রতিরোধের তথ্যসমূহ তুলে ধরাসহ ক্যাইসার নির্ণয় কেন্দ্রগুলো একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা, রোগীদের রেজিস্ট্রি সঠিকভাবে রাখা, চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন। বর্তমান বিশ্বে গ্লোবোক্যান এর রিপোর্টে ২০২২ সালে বাংলাদেশে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৫৬ ও মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৯৮ জন উল্লেখ করা হলেও জনংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রির অভাবে বাংলাদেশে ক্যানসারের সঠিক পরিস্থিতি জানার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
[৬] গবেষণার ফলাফলে হিসেবে উল্লেখ করা হয়, প্রতি লাখে ১১৪ জন (পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ১২০ জন ও নারীর ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ১০৮ জন)। ৫১ থেকে ৬০ বৎসর বয়সী নারী (১৬.৫%) এবং পুরুষের (১৮ দশমিক ০ শতাংশ) মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে ক্যাইসার রোগী পাওয়া গেছে। পুরুষদের মধ্যে স্বরণালীর ক্যাইসারের হার সবচেয়ে বেশি (১৩ দশমিক ২ শতাংশ) আধিক্যের দিক থেকে শীর্ষ অন্যান্য ক্যাইসার হচ্ছে পাকস্থলি (১০ দশমিক ২ শতাংশ), ঠোট ও মুখগহ্বর (৮ দশমিক ৮ শতাংশ) ফুসফুস (৭ দশমিক ৪ শতাংশ) এবং খাদ্যনালীর (৭ দশমিক ৪ শতাংশ) ক্যাইসার।
[৭] নারীদের মধ্যে স্তন ক্যাইসারের হার সর্বোচ্চ (৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ)। শীর্ষ অনগুলোর মধ্যে রয়েছে জরায়ুমুখ (১২ দশমিক ৩ শতাংশ), ঠোক ও মুখগহ্বর (১০ দশমিক ৮ শতাংশ), থাইরয়েড (৭ দশমিক ৪ শতাংশ) এবং ওভারির (৪ দশমিক ৬ শতাংশ) ক্যাইসার। এছাড়াও ক্যাইসার রোগীদের মধ্যে ২৮দশমিক ৬শতাংশ উচ্চরক্তচাপ, ১১ দশমিক ৩শতাংশ ডায়াবেটিস, ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হার্টের রোগ এবং ৩ শতাংশ হারে কিডনি জটিলতা এবং স্ট্রোক বিদ্যমান। ক্যাইসার আক্রান্ত ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষের মধ্যে নিয়মিত ধুমপান, ৪১ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ নারী ধোয়াবিহীন তামাক সেবন এবং ৬৪ দশমিক ৭শতাংশ পুরুষ ও ৭৫ দশমিক ৪ শতাংশ নারীর মধ্যে নিয়মিত পানসুপারি খাওয়ার ইতহাস রয়েছে।
[৮] ক্যানসার রোগীদের মধ্যে ১৩ শতাংশ শুধু কেমোথেরাপি, ১১ দশমিক ৩ শতাংশ শুধু সার্জারী, ২ দশমিক ৩ শতাংশ শুধু রেডিওথেরাপি, ৯ দশমিক ৭ শতাংশ শুধু প্যালিয়েটিভ সেবা এবং ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ উল্লিখিত সবগুলোর একের অধিক সেবা গ্রহণ করেছেন। এদিকে রেজিস্ট্রিকৃত ক্যানসার রোগীর ৪ দশমিক ৫ শতাংশ কোনো প্রকার চিকিৎসেবা গ্রহণ করেননি। সেমিনারে উল্লেখ করা হয়, ক্যানসারের পরিস্থিতি, ক্যাইসারের পাশাপাশি থাকা অন্য রোগসমূহ, ক্যানসার চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ক্যানসারের বিদ্যমান ঝুঁকির কারণগুলোর উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে ক্যানসার মোকাবেলার জন্য নীতিমালা তৈরি করা যেতে পারে।
[৯] এসময়ে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিভেনটিভ এ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক, পিএইচডি এবং তিনি স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
[১০] আলোচনায় অংশ নেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (এনসিডিসি) অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন, বাংলাদেশ ক্যাইসার সোসাইটি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এমএ হাই। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন দেশের ক্যাইসার বিশেষজ্ঞগণ, চিকিৎসক এবং গবেষকরা।