আন্দোলনে আহত ছাত্র-ছাত্রীদের চিকিৎসার দেখভাল করবে সরকার : আইনমন্ত্রী
আনিসুর রহমান তপন : [১] আন্দোনে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী যারা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার দেখবাল করবে সরকার। মামলার বিষয়ে বলা যায়, এ সংক্রান্ত তথ্য আমাদের কাছে দিলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী যারা এই কোটা বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের বিষয়ে যদি কোন মামলা হয়ে থাকে সেগুলো অবশ্যই দেখা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
[২] মঙ্গলবার গুলশানের সরকারি বাসভবনে কোটা বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এক এই সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। [৩] তিনি বলেন, শিক্ষর পরিবেশ ফিরিয়ে আনা ও সকল ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার পরিবেশ সরকার তৈরী করবে।
[৪] সরকার এই বাতিলের পক্ষে এবং হাইকোর্টের রায়ে যে কোটা বাতিল পরিপত্রকে পুর্নবহাল করা হলো সেই জন্য তার বিপক্ষে তিন দিনের মধ্যে আপীল বিভাগে আপীল করে সরকার। আপীল করার আগেই যদিও কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা হাইকোর্টে যখন মামলা শুনানী হয় কোন পক্ষাভূক্ত হয় নাই এবং সরকার যখন আপীল করে তখনও তারা পক্ষভূক্ত হয় নাই। সেই ক্ষেত্রে যখন এটাকে চেম্বার জাজ আপীল বিভাগের ফুল বেঞ্চে পাঠানো হয় তখন আপীল বিভাগ এই বিষয়ে শুনানী করবে বলে তারিখ নির্ধারণ করে।
[৫] ইতোবসরে কোটা আন্দোলনকারীরা এই আপীল শুনানীর আগে একটা পক্ষভূক্ত হন। তারা পক্ষভূক্ত হওয়ার পরে সেই পক্ষভূক্তের দরখাস্তের উপরে যখন শুনানী হয় তখন আপীল বিভাগ একটা আদেশ দেন। সেই আদেশে আপীল বিভাগ অত্যন্ত পরিস্কারভাবে বলেন যে, স্ট্যাটাসকো মেইনটেইন করতে হবে এবং হাই কোর্ট বিভাগের কোটা বাতিলের পরিপত্র যে বাতিল করে দেন সেটা অকার্যকর থাককে। যতদিন পর্যন্ত আপীল বিভাগে এই বিষয়ে শুনানী না হবে। অর্থাৎ সেই দিন থেকে এই দেশে কোন কোটা আর ছিল না। এবং তারিখ নির্ধারণ করেন যে, অগাস্টের ৭ তারিখ এই মামলার শুনানী হবে। এক দিকে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা যখন এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলো তখন এর সুযোগ নিয়ে কিছু মহল এই আন্দোলনকে অন্য দিকে প্রবাহিত করার জন্য সহিংসতা অবলম্বন করে।
[৬] এক পর্যায়ে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা বলেন কােটা সংস্কার আন্দোলনের পাশাপাশি তারা আলোচনা করতে চান। তখন আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি নিয়ে জানিয়েছি, যখনই তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইবে আমরাও তখন তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছি। পরে সেদিন রাতে আমি পরিস্কারভাবে জানিয়েছি কোটা বিরোধী যে মামলা আপীল বিভাগে আছে সেটা ৭ তারিখে শুনানী তা এগিয়ে আনার জন্য সরকার ব্যবস্থা নেবে। সেইদিনই বিজ্ঞ এটর্নি জেনারেলের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলার শুনানী এগিয়ে এনে শুনানীর জন্য ২১ জুলাই দিন নির্ধারণ করে আপীল বিভাগ। এদিন শুনানী করে আপীল বিভাগ সবিস্তারিত রায় দিয়েছেন। সেইখানে আপীল বিভাগ বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে তারা কোটার বিষয়ে একটা নির্দেমনাও দিয়েছেন। সেই নির্দেশনায় আপীল বিভাগ বলেন, মেধা ভিত্তিক শতকরা ৯৩ ভাগ, শতকরা ৫ ভাগ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিরাঞ্জনাদের সন্তানদের জন্য, শতকরা এক ভাগ শারিকি প্রতিবন্ধী ও আর এক ভাগ নৃগোষ্ঠি ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য।
[৭] আমার সঙ্গে যখন কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের নেতারা আমাদের সঙ্গে যখর বৈঠকে বসেন কোটা আন্দোলনকারীদের দাবি পেশ করার জন্য। আলোচনা শেষে বাইরে এসে আমি বলেছি কোটার যে হিসাব আলোচনা হয়েছে তাতে এ বিষয়ে একটি সুস্থ সমাধানে আসা সম্ভব। ২১ জুলাই আপীল বিভাগের রায়ের পর আমি গণমাধ্যমে জানিয়েছিলাম এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন কবে জারি হবে। তখন সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়েছিলাম মঙ্গলবার এটা জারি করবে সরকার। আমরা এ বিষয়ে আমাদের দেয়া কথা রেখেছি। এটা আজ (মঙ্গলবার) জারি হয়েছে।
[৮] কোটা সংস্কার সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি, আধাসরকারী, স্বায়ত্বশাসিত/আধাস্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরীতে/কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন। সরকার এই মর্মে আদেশ জারি করছে যে, সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠির প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থৎ সরকারি, আধাসরকারী, স্বায়ত্বশাসিত/আধাস্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরীতে/কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল গ্রেডে নিম্ন রুপভাবে কোটা নির্ধারণ করা হইল।
কখনোই কোটা নিয়ে কোন আইন ছিল না। এটা সবসময় সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয় ছিল। আগে সব সময় এ বিষয়টি পরিপত্র ও প্রজ্ঞাপন দিয়েই নিয়োগের ক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত আদেশ দেয়া হতো।
তিনি বলেন, তবে এখন যেহেতু দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপীল বিভাগের পূর্ণঙ্গ বেঞ্চ একটা আদেশ দিয়েছেন, তাই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সরকার সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রতিপালন করেছে।
আনিসুল হক বলেন, এ কারণে আপীল বিভাগের রায়ের একটা দাড়ি, কমা, সেমিকোলন পরিবর্তনের ক্ষমতা সরকারের নেই। আদালত যেভাবে রায় দিয়েছে সেভাবেই প্রতিপালন করেছে সরকার।
সর্বোচ্চ আদালত অত্যন্ত সুদুরপ্রসারী ও বিচক্ষণ একটা রায় দিয়েছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, সর্বোচ্চ আদালত পরিস্কার করে ৪টি শ্রেণীতে ভাগ করে কোটা সংস্কার সংক্রান্ত আদেশ দিয়েছেন। এর বাইরে সরকার যেতে পারবে না। কারণ এটা আপীল বিভাগের রায়। এর বাইরে যাওয়ার কোন অভিপ্রায়ও সরকারের নাই।
কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র, জঙ্গি, বিএনপি, জামায়াত, শিবির এবং ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা এই আন্দোলনে যুক্ত হয়ে দেশটাকে নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল। এটা পরিস্কার কোটা বিরোধী আন্দোলনের সুযোগে তারা সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার ওপর সহিংসভাবে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।