৩ দিনে ৯৯৯-এ কল আসে সোয়া লাখ
নিজস্ব প্রতিবেদক : [১] সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে হওয়া আন্দোলনে গত ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই রাজধানীসহ সারা দেশে সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসময় সারা দেশে অনেকে হতাহত হন। [২] এই তিনদিনে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ সরকারি ও ব্যক্তিগত যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। যদিও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্দোলনের নামে নাশকতার সঙ্গে তারা জড়িত নয়।
[৩] সহিংস আন্দোলনের এই তিন দিনে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল আসে ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১টি। এর মধ্যে অগ্নিসংযোগের কল ছিল ৬৫২টি। অগ্নিসংযোগের কলের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি কল ৯৯৯-এ করা হয় রাজধানী ঢাকা থেকে। [৪] জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ সূত্রে জানা যায়, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল আসে ২০-২২ হাজার। করোনাকালে মানুষ লকডাউনসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে ফোন দিত। তখন প্রতিদিন ৩০-৩২ হাজার কল আসত। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়েও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ফোন কল আসতে শুরু করে। এসব কলের অধিকাংশ ছিল আন্দোলনের সময় চলা নাশকতা, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষ ও পুলিশ আটকে থাকার কল।
[৫] জানা গেছে, এসব কল পাওয়ার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেবা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এর পক্ষ থেকে। কিন্তু আন্দোলনের কারণে অনেক ক্ষেত্রে সেবা দেওয়া যায়নি। বিশেষ করে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) ভবনে আগুন লাগার পর একাধিক কল যায় জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ। [৬] ফায়ার সার্ভিসকে বিষয়টি জানানো হয় ৯৯৯-এর পক্ষ থেকে। কিন্তু রামপুরা এলাকায় আন্দোলন চলায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি বিটিভির ভবনের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। [৭] জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ সূত্রে জানা যায়, গত ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই অনেক পুলিশ সদস্য সহায়তা চেয়ে কল দিয়েছে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ। পুলিশ সদস্যরা ৯৯৯-এ কল দিয়ে বলেছেন, আন্দোলনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা নিজেদের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন।
[৮] আন্দোলনকারীরা ঘিরে ধরে রেখেছে যেকোনো সময় তাদের ওপর হামলা হতে পারে, তাই তাদের যেন দ্রুত উদ্ধার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশ। এ ছাড়া অনেক পুলিশ সদস্য কল দিয়ে বলেছেন, তারা সহিংসতায় একা আটকে আছেন তাদের যেন দ্রুত উদ্ধার করা হয়।
[৯] অন্যদিকে, অনেক সাধারণ মানুষ আন্দোলনের সময় চলা সহিংসতায় আটকে পড়ে উদ্ধার করার করার জন্য জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেন। এর মধ্যে ছিল অগ্নিসন্ত্রাসে আটকে পড়া ও যানবাহন ভাঙচুরের সময় আটকে পড়ার সময়। আবার অনেক মানুষ জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ সহিংস আন্দোলন চলার সময় কল দিয়ে জানতে চেয়েছেন কোন রাস্তা দিয়ে নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারবেন। সংঘাত প্রবণ এলাকাগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি কল এসেছে। যেমন যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর ও বনানী এলাকা থেকে কল এসেছে বেশি।
[১০] জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৮ জুলাই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কলে এসেছে ৩৪ হাজার ২৩৪টি। গত ১৮ জুলাই অগ্নিকাণ্ডের কল এসেছে সারাদেশ থেকে ২৬০টি। অগ্নিসংযোগের কলগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি ছিল রাজধানী ঢাকা থেকে।
[১১] গত ১৯ জুলাই জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল আসে ৪৮ হাজার ৯৯টি। তার মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের কল আসে ২৫৭টি। এই ২৫৭টি কলের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি কল আসে রাজধানী ঢাকা থেকে। এ ছাড়া গত ২০ জুলাই জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল আসে ৪২ হাজার ৭৪৮টি। এর মধ্যে অগ্নিসংযোগের কল আসে ১৩৫টি। যার মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি অগ্নিসংযোগ সংক্রান্ত কল আসে রাজধানী ঢাকা থেকে।
[১২] আরও জানা যায়, ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাইয়ের পরবর্তী দিনগুলোতেও প্রতিনিয়ত কল আসছে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ। সাধারণ মানুষ কারফিউ কখন শিথিল হবে, ইন্টারনেট কবে চালু হবে, রাস্তায় গণপরিবহন যাত্রা কখন থেকে শুরু হবে– এসব সহ বিভিন্ন নাগরিক সেবার বিষয়ে জানতে ও সেবা নিতে কল দিচ্ছেন।
[১৩] আন্দোলন চলাকালীন ও এর পরবর্তী সময়ে ৯৯৯-এ আসা কল নিয়ে জাতীয় জরুরি সেবার গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার বলেন, গত ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই আন্দোলনে সৃষ্টি পরিবেশ এবং নৈরাজ্য সংক্রান্ত কল এসেছে সব থেকে বেশি সেতু ভবন ও বিটিভিসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করার পর সেখানকার কর্মচারীরা সহায়তা চেয়ে কল দিয়েছে।
[১৪] কল আসার পর আমরা সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানা ও সংস্থাকে জানিয়েছি। কিন্তু রাস্তায় সংঘাত চলমান থাকায় এসব কলের বিপরীতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি পুলিশ। সংঘাত চলমান থাকায় সেবা প্রত্যাশীদের সেবা দেওয়ার কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।