গুদামে শস্য জমা দিয়ে ঋণ নিয়েছেন কৃষকরা
এস.ইসলাম জয় : [১] কৃষি বিপণণ অধিদপ্তরের পরিচালক ড.ফাতেমা ওয়াদুদ জানিয়েছেন, দেশব্যাপী ৮১টি গুদাম শস্য ঋণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব গুদামে কৃষকরা ৪ হাজার ৩ টন শস্য জমার বিপরীতে ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার ও মানসম্পন্ন বীজ সংরক্ষণ হলে কৃষকরা শস্যের ন্যায্য মূল্য পাবে।
[২] সম্প্রতি রাজধানীর ফার্মগেটের কেআইবি অডিটরিয়ামে এক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
[৩] তিনি জানান, শস্য গুদাম ঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের উৎপাদিত শস্য গুদামে সংরক্ষনের বিপরীতে তাদেরকে ঋণ ও বিপণন সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। কৃষকের অভাব তাড়িত বিক্রয় রোধ করে ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে সহায়তা করা; কৃষি পণ্যকে মানসম্পন্ন উপায়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা; জমাকৃত শস্যের বিপরীতে ব্যাংক ঋণ দিয়ে কৃষকদের আর্থিক স্বচ্ছলতা ও কৃষি কাজে আগ্রহ ধরে রাখা; বীজ সংরক্ষণের মাধ্যমে বীজ সংকট দূরীকরণ ও কৃষকের জন্য উন্নত বীজ সহজলভ্য করা এবং স্থানীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
[৪] ফাতেমা ওয়াদুদ বলেন, শস্য গুদাম ঋণে ভূমিহীন বর্গাচাষী, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক ও সর্বোচ্চ ৫ একর পরিমাণ চাষাধীন জমির মালিক কৃষক সুবিধা নিতে পারবে। ধান, গম, ডাল, সরিসা, তিল, তিসি, ভুট্টা প্রভৃতি দানা জাতীয় শস্য গুদামে জমা রাখা যাবে। তবে উপদেষ্টা কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন কোন শস্য জমার জন্য অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন।
[৫] তিনি আরও বলেন, শস্য গুদামের বিষয়ে দেশব্যাপী মাঠ পর্যায়ে চার ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে মোট ৫ হাজার ৫৯৫ জন কৃষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এই প্রশিক্ষণে ব্যয় হয় ১১৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ২৭ জেলায় ৫৬ উপজেলায় ৮১টি শস্য গুদাম রয়েছে। দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও একটি এলাকা কার্যালয় রয়েছে। ঢাকা বিভাগে- মানিকগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও শরীয়তপুর। খুলনা বিভাগে- মাগুরা, নড়াইল, যশোর ও ঝিনাইদহ। রাজশাহী বিভাগে- নওগাঁ, পাবনা, বগুড়া, রাজশাহী ও জয়পুরহাট। রংপুর বিভাগে- গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও পঞ্চগড়। বরিশাল বিভাগে- ঝালকাঠি জেলায় শস্য গুদাম রয়েছে।
[৬] তিনি বলেন, চলমান গুদামসমূহের মাধ্যমে বাৎসরিক গড়ে ৪ হাজার ১১৬ জন কৃষক পরিবারকে ৪ হাজার ৩ টন শস্য জমার বিপরীতে ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়ে থাকে (বিগত ৫ বৎসরের অগ্রগতির গড় হিসাব)। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ৫৬০ জন কৃষককে ৪ হাজার ৮০৪ টন শস্যের বিপরীদে ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ হাজার ৯৮৯ জন কৃষককে ৩ হাজার ৯০২ টন শস্যের বিপরীদে ৫ কোটি ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকসহ ৬টি সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসব ঋণ প্রদান করা হয়।
[৭] কৃষি বিপণন অধিদপ্তর মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম বলেছেন, খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার ও মানসম্পন্ন বীজ সংরক্ষণ এবং কৃষকদের শস্যের নায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। খাদ্য সংরক্ষণে গুদামের ঋণ কার্যক্রম কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ। এতে অর্জিত সাফল্য সামগ্রীক দেশের তুলনায় অত্যন্ত কম হলেও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এটি একটি জনপ্রিয় ও সফল মডেল। দীর্ঘমেয়াদে এই কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা গেলে এ দেশের প্রান্তিক কৃষক জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে।
[৮] তিনি বলেন, শস্য গুদামের ঋণ কার্যক্রমের ১৯৭৮ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৫১১ জন কৃষক এ সুবিধা পেয়েছে। ২০০৭-০৮ সালে এসে কৃষকদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি ছিল। নতুন গুদাম সম্প্রসারণ না হওয়া এবং পুরনো গুদামগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়াও বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার কারণে এই কার্যক্রমে আগ্রহ হারিয়েছে কৃষক। কারণ এখন ক্ষুদ্র, প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা কমেছে। তাদের আর্থিক অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে। এছাড়া তারা আরও বিভিন্নভাবে ঋণ পাচ্ছেন।
[৯] তিনি আরও বলেন, কৃষকের ন্যায় মূল্য প্রাপ্তিতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর শস্য গুদাম ঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে সুবিধা পাচ্ছে সাধারণ কৃষকরা।