
ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরির্দন করলেন প্রধানমন্ত্রী

শাহীন খন্দকার : [১] প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর রামপুরায় সহিংসতায় ধ্বংসাত্মক রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন পরিদর্শন করেছেন। তিনি গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা দিকে বিটিভি ভবনে প্রবেশ করেন এবং কোটা-সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত চক্রের গত বৃহস্পতিবারের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত সমস্ত বিভাগ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।
[২] তিনি বলেন, যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, সারাদেশের আনাচে-কানাচে যে যেখানে আছেন তাদের খুঁজে বের করুন। তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে সহযোগিতা করুন। আমি দেশবাসীর কাছে সে আহ্বান জানাই।
[৩] এসময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি, আমার বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে। তারা নিজেরাই নিজেদের রাজাকার বলে স্নোগান দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
[৪] এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনে দুষ্কৃতকারীদের খুঁজে বের করতে জনগণের সহায়তা চেয়ে সরকার প্রধান বলেন, যারা এই ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত, আনাচে-কানাচে যেসব হামলাকারী লুকিয়ে আছে, তাদের খুঁজে বের করে সাজা নিশ্চিত করতে দেশের জনগণকে সহযোগিতা করতে হবে। এই শত্রুদের খুঁজে বের করতে জনগণের সহযোগিতা চাই বললেন, প্রধানমন্ত্রী। [৫] শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়ত অতীতের মতোই অগ্নি সন্ত্রাস করেছে। এবার তারা গান পাউডার ব্যবহার করেছে। দেশের বাইরে আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট ও মানুষের রুটি রুজি বন্ধের পাঁয়তারা করছে তারা।
[৬] বিটিভি ভবনের ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করে প্রধানমন্ত্রীকে হতাশ ও অসন্তুষ্ট দেখা গেছে। বিটিভি ভবনে ধ্বংসযজ্ঞ দেখে বিটিভি কর্মকর্তারা তাদের চোখের পানি ধরে রাখার চেষ্টা করার সময় বাতাস ভারী হয়ে উঠলে, প্রধানমন্ত্রীকেও অশ্রুসিক্ত দেখা গেছে।
[৭] প্রধানমন্ত্রী বিটিভি’র ক্রন্দনরত মহাব্যবস্থাপক মাহফুজা আক্তারকে অশ্রুসিক্ত নয়নে সান্তনা দেন। এই সময় বিটিভি’র মহাপরিচালক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিটিভি ভবনে ভয়াবহ তান্ডবের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রীকে। সেই সঙ্গে অনুষ্ঠানে বিটিভি সদর দপ্তর ও ভবনে ভাঙ্গচুরের একটি ভিডিও চিত্রও দেখান।
[৮] প্রধানমন্ত্রী বিটিভি পরিদর্শনকালে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খন্দকার এবং প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম. নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
[৯] এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মীরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকা মেট্টোরেল স্টেশনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যেসব স্থাপনা মানুষের জীবন সহজ করে সেগুলো ধ্বংস করা আসলে কোন ধরনের মানসিকতা?
[১০] রাজধানীতে যানজটে নাকাল থাকলে ও মেট্টোরেল স্বস্তি দিয়েছে সাধারন মানুষকে। আধুনিক প্রযুক্তির মেট্টোরেল স্টেশন যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, মানতে পারছিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সাধারন মানুষ যেন নির্বিঘ্নে কর্মক্ষেত্রে পৌছাতে পারে সেটা সুনিশ্চিত করা হবে।
[১১] দেশটা যেনো আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হতে পারে সে চেষ্টাই করবো। এদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। সেই দেশটা ব্যার্থ হতে পারে না। ১৮ জুলাই বিকেলে বিটিভি ভবনের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা। ফ্লোরের বিভিন্ন অংশে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। একই দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিটিভি’র নিয়ন্ত্রণ নেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
[১২] বিটিভি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী তান্ডবলীলায় বিভিন্ন অবকাঠামো, সম্প্রচার সরঞ্জাম, নকশা বিভাগ, অফিস ভবন এবং কক্ষ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। ভাঙ্গচুরের ঘটনায় ১৯৬৪ সাল থেকে সংরক্ষিত অমুল্য প্রাচীন জিনিস দিয়ে সজ্জিত একটি টেলিভিশন জাদুঘর এবং মুজিব কর্নার, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক, অভ্যর্থনা ও ওয়েটিং রুমের আসবাবপত্র, কম্পিউটার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রক (এসি) এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের সাথে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
[১৩] এছাড়া ও, প্রায় ৪০টি কম্পিউটার, ১০০টি টেলিভিশন সেট এবং কম্পিউটার ল্যাবের আসবাবপত্র, প্রশিক্ষণ কক্ষ ও প্রিভিউ রুম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লিফট, নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম, সিসি ক্যামেরা ও মনিটরিং সেটও ভাঙচুর করা হয়। যানবাহন ভবন এবং শেড, ক্যান্টিন এবং নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ কক্ষ, একটি সম্প্রচার ওবি ভ্যানসহ ১৭টি গাড়ি, ২১টি মোটর সাইকেলে আগুন এবং নয়টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
[১৪] অডিটোরিয়াম,লাউঞ্জ,ডিজাইন,মেক-আপ, ওয়ার্কশপ, গ্রাফিক্স রুম, স্টোর,ওয়ারড্রব রুম এবং ২০টি গ্রাফিকস কম্পিউটারও ভাঙচুর করা হয়। নকশার শেড, স্টুডিওর ছাদ, দেয়াল, ভবন এবং নাগরিক অবকাঠামো, কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং প্রায় ৭০টি এয়ার কন্ডিশনার (এসি), অফিসিয়াল আসবাবপত্র, পাঁচটি ফটোকপি মেশিন এবং প্রায় ৫০টি অফিসিয়াল কম্পিউটারও ভাঙচুর করা হয়।
[১৫] ১০টি কম্পিউটার ওয়ার্ক স্টেশন, বৈদ্যুতিক তার, সুইচ, স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতি, রেকর্ডিং ক্যামেরা, আলোর উৎস এই সম্পর্কিত সরঞ্জামসহ একশ’ মনিটরিং সেট, গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক ফাইল, শিল্পীর সম্মানী-সম্পর্কিত খাতা, ব্যাংকের চেক বই, ভাউচার, অডিট বিল ইত্যাদিও ভাঙচুর করা হয়।
[১৬] উল্লেখ গত ১৮ জুলাই বিকেল তিনটার দিকে রাজধানীর রামপুরায় বিটিভির প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে তারা ভেতওে থাকা মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে আগুন দেন।
