স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২৩টি গাড়ীতে আগুনসহ ২৮টি ভাঙ্গচুর, ক্ষতি ৩০ কোটি : মহাপরিচালক
শাহীন খন্দকার : [১] কোটা আন্দোলনকারীদের কমপ্লিট শাটডাউন’র ডাকে রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলে। এসময়ে রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২৮টি গাড়ী ভাঙ্গচুর এবং ২৩টি গাড়ীতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় দূস্কৃতকারীরা। [২] সেইসঙ্গে মহাখালী এলাকার সরকারী বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙ্গুচুরসহ অগ্নিসংযোগ করা হয়। দুস্কৃতকারীরা গত বৃহস্পতিবার ১৮ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই শুক্রবার মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন ভবণে ধাপে ধাপে নাশকতাকর্মকান্ড চালানো হয়। [৩] স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম বলেছেন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সব ধরনের তথ্য রাখা হয় এমআইসে। এমআইএস শাখাটির সামনে ভাঙ্গচুরসহ আগুন লাগালেও দূর্বৃত্ত্বরা সার্ভার রোমের গেট আটকানো থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে সার্ভার রুমে ঢোকার সুযোগ না পাওয়ার কারণে সেখানটা এখনো অক্ষত আছে।
[৪] মহ-পরিচালক বলেন, সর্বমোট ২৩টি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। এই গাড়িগুলো আর কখনো ব্যবহার করা যাবে না। ২৮টি গাড়িতে ভাঙ্গচুর চালানো হয়। এর মাঝে আমার নিজের ব্যবহারের গাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়। এই গাড়িগুলো এমনভাবে ভাঙ্গচুর করা হয়েছে যে সেগুলো কখনো ব্যবহার করা যাবে কি না তা বলা যাচ্ছে না।
[৫] তিনি আরও বলেন, মুগদা হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ঢাকার বাইরে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, সে খবর এখনও জানা যায়নি। [৬] স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলম। গত বৃহস্পতিবার অধীদপ্তরের একাধিক সুত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে মহাখালী কাঁচাবাজারের পাশেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পুরানো ভবণের নিরাপত্ত্বা কর্মীদের মারধর করে।
[৭] নিরাপত্ত্বা কর্মীদের মারধর কওে দূস্কৃতকারী ভিতরে এক সঙ্গে প্রায় ২০০ জনের অধিক মানুষ প্রবেশ করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমে আগুন দেয় স্বাস্থ্য ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টার (এমআইএস) শাখা, এর পরে এক এক করে প্রতিষ্ঠানের সামনে রাখা গাড়ী, গাড়ীর চালকদের বিশ্রামকক্ষে আগুনদেয় দুর্বৃত্ত্বরা। ভেঙ্গে ফেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ।
[৮] বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনস(বিসিপিএস) ভবণ, টিকাদান কর্মসূচি সম্প্রসারিত ভবণ ঔষধ প্রসাসন অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইপিএইচ) জাতীয় পুষ্টি কর্মসুচি কার্যালয় ভাঙ্গচুর করে। দূর্বৃত্তদের হামলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জানিয়েছেন, মহাপরিচালক।
[৯] পুড়িয়ে দেওয়া হয় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কয়েকটি জেনারেটরসহ ভাঙ্গচুর করা ভবণের কাঁচসহ ক্ষয়ক্ষতি হয় ভবণের। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, যারা হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে তাদের মাঝে কে ছাত্র আর কে অছাত্র তা বোঝা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল।
[১০] যারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিল তাদেরকেও মারধর করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংলগ্ন এলাকার একজন নিরাপত্তা রক্ষী বলেন, প্রথমে ভাঙ্গচুর শুরু করা হলেও হঠাৎ কয়েকজন গান পাউডার ব্যবহার করে গাড়িগুলো পোড়ানোর জন্য।
[১১] এরপরে তারা সরে যায়। আরেক গ্রুপ সেখান দাড়িয়ে ছিল যেন কেউ আগুন নেভাতে না পারে তা নিশ্চিত করতে। যারা আগুন নেভাতে যায় তাদের ও মারধর করে। আরও জানিয়েছেন, ঘটনার পরপরই প্রতিষ্ঠানটির পরিবহন কর্মকর্তা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বনানী থানায় মামলা করেছেন।
[১২] ইতিমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার পরিচালককে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছেন বলে জানিয়েছে প্রশাসন শাখা।
[১৩] উল্লেখ্য গত ২৩ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামান্ত লাল সেন ঢাকা মেডিকেলে আহত রোগীদেও দেখতে গিয়ে বলেছেন, দূর্বৃত্ত্বদের হামলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষক্ষতি হয়েছে। দূর্বৃত্ত্বরা অধিদপ্তরের পুরানো ভবণে হামলা চালায়। সেখানে থাকা গাড়ীতে আগুন দিয়েছে, গাড়ী ভাঙ্গচুর করে। হতাহতদের যেসব অ্যাম্বুলেন্সে কওে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো সেই সব অ্যাম্বুলেন্সও ভাঙ্গচুর কওে দূর্বৃত্ত্বরা।