পিরোজপুর ও ঝালকাঠিতে অবকাঠামো উন্নয়নে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব
এস.ইসলাম জয় : [১] স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটিতে অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সড়ক পাকাকরন, সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং গ্রামীণ জনগণের জন্য গ্রাম, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধি করে গ্রামীণ জীবনযাত্রারমান মানোন্নয়ন করা হবে।
[২] প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) প্রকল্পটির উপর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রকল্পটির ব্যয় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হলেও তা ৪০০ কোটি টাকা কমিয়ে মোট ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা নির্ধারণের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অবকাঠামো উন্নয়ন : ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলা শীর্ষক প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রস্তাব করে। প্রস্তাবপত্রে দেখা যায় ৪ বছর মেয়াদী প্রকল্পটি ২০২৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
[৩] ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি সম্পূর্ন দেশীয় অর্থায়নে হবে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে। ১৩.৪৬ কি.মি উপজেলা সড়ক উন্নয়ন, ৭০.৯০ কি.মি. ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন, ১৯৫.৩০ কি.মি. গ্রাম সড়ক উন্নয়ন, ৩২১.৫৮ কি.মি. গ্রাম সড়ক ইউনি-ব্লক দ্বারা উন্নয়ন, ৫৯২ মি. গ্রামীণ সড়কে ব্রীজ নির্মাণ, ২৩৮১.১৮ মি.গ্রামীণ সড়কে কালভার্ট নির্মাণ এবং ৮টি হাট-বাজার ও ঘাটলা নির্মাণ প্রকল্পে প্রধান প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে।
[৪] অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটিতে মোট ১১টি উপজেলা রয়েছে। পিরোজপুরের সদর, নাজিরপুর, নেছারাবাদ, ভান্ডারিয়া, কাউখালী, ইন্দুরকানী ও মঠবাড়িয়া। ঝালকাঠি জেলার ঝালকাঠি সদর, রাজাপুর, কাঠালিয়া ও নলছিটি অর্ন্তভূক্ত রয়েছে। [৫] প্রকল্প এলাকা নির্বাচনের যে যৌক্তিকতা দেখিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় : বরিশাল বিভাগের অধীন ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলা নদী বিধৌত। এই ২টি জেলার সড়ক নেটওয়ার্ক এর অবস্থা অনুন্নত ফলে জনগনের যাতায়াত অত্যন্ত কষ্টকর এবং মালামাল পরিবহনে সু-ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে এই সকল এলাকা থেকে জেলা/উপজেলা হেড কোয়ার্টার যাতায়াত, উৎপাদিত কৃষিদ্রব্য/কৃষিজ পণ্যের সহজ পরিবহন ও বাজারজাত করণে তেমন সুবিধা নেই। উল্লেখিত কারনে বরিশাল বিভাগের কালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য প্রকল্প এলাকা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে।
[৬] প্রকল্পের আয়-ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকল্পটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হলেও এনপিভি, বিসিআর ও আইআরআর করা হয়নি। বাস্তবায়িত হলে যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে যা অত্র অঞ্চলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। এ জন্য অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়
[৭] যেভাবে প্রকল্পের বছর ভিত্তিক ব্যয় হবে-২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ১১৭.৪৪ কোটি টাকা, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ২৭২.৪৮ কোটি, ২০২৬-২৭ অর্থ বছরে ২৭২.৪২ কোটি, ২০২৭-২৮ অর্থ বছরে ২৭২.৪২ কোটি, ২০২৮-২৯ অর্থ বছরে ১৬৫.২৪ কোটি টাকা।
[৮] পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ : প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার সকল উপজেলার গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা পাবে এবং স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফলে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক নেটওয়ার্ক স্থাপিত হবে এবং প্রকল্প এলাকায় কৃষি ও অকৃষি পণ্যের পরিবহন ব্যয় হ্রাস।
[৯] পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নে পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সড়ক নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে বরিশাল বিভাগের ২টি জেলা পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলার ১১টি উপজেলায় কৃষি-অকৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। বাজারজাত সহজ করা ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বর্তমান সুফল যেমন-স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে। কর্মসংস্থানগুলো আরও সংহত করবে। প্রকল্প এলাকায় সার্বিক দারিদ্রহ্রাস পাবে এবং পল্লী উন্নয়নে প্রকল্পের অন্যান্য।