
রেমিটেন্স কেন পাঠাবেন ব্যাংক মাধ্যমে ও কেন রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করবেন না?
মাহামুদুল হাসান মাসুম
গত কিছুদিন ধরে একটা হাইপ এবং হুজোগ উঠেছেÑ বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করা অ্যাক্টিভিস্টরা খুব করে অ্যাক্টিভিজম করছে দেশের ব্যাংকে প্রবাসীরা যাতে রেমিটেন্স না পাঠায়। এটা একটা ভুল অ্যাক্টিভিজম এবং কোনোভাবেই এটা করা যাবে না। বিশাল বিস্তারিত না বলে, সংক্ষেপে বলার ট্রাই করি: অন্য দেশে রেমিটেন্স ফ্লো কীভাবে আসে সেটা আর বাংলাদেশের মতো গরিব দেশে কীভাবে এবং কেন আসে সেটা আলাদা। আমাদের দেশের রেমিটেন্স সাধে আসে না, আসে গরিব বাবা-মা বা স্ত্রীর জন্য, সন্তানের জন্য। অর্থাৎ আমাদের দেশের রেমিটেন্স আর মানুষের প্লেটে ভাতের যোগান অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। সো, দেশে অভুক্ত থাকা সন্তান, স্ত্রী আর বাবা-মায়ের জন্য রেমিটেন্স পাঠাতেই হবে আমাদের দেশের প্রবাসীদের। এটা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং একটা এসেনশিয়াল নেসেসিটি।
রেমিটেন্স আসে কীভাবে? দুইভাবে। লিগাল ওয়ে-ব্যাংক হয়ে বা ইলিগাল ওয়ে হুন্ডি হয়ে। ব্যাংক হয়ে এলে সেই টাকা সরকার পায় ডলার হিসেবে আর হুন্ডি হয়ে এলে সেই টাকা মূলত দেশের টাকা পাচার হয়। কীভাবে এবং কেন হুন্ডি হয়? একটা উদাহরণ দিই। ধরা যাক, আব্দুল কুদ্দুস বাংলাদেশে দুর্নীতি করে ১০ কোটি টাকা বানিয়েছেন, এখন এই টাকা তিনি তার সিঙ্গাপুর থাকা ছেলের কাছে পাঠাতে চান বা নিজে দুবাইয়ে সেই টাকা উড়াতে চান। এখন এই টাকা কীভাবে নিয়ে যাবেন বিদেশে? এয়ারপোর্ট দিয়ে তো নিয়ে যাওয়া যাবেনা। উপায়? উপায় হলো হুন্ডি। ধরা যাক, দুবাইয়ের একটা এলাকায় ১০ জন প্রবাসী আছেন, তারা রেগুলার দেশে টাকা পাঠান ১ লাখ টাকা করে। ১০ জনে ১০ লাখ টাকা মাসে। বছরে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর যদি ১০ জনের জায়গায় ৫০ জন হয় তাহলে বছরে ৬ কোটি টাকা, ১২ মাসে দেশে আসে। এখন আমাদের আব্দুল কুদ্দুস তার বিদেশে থাকা কোনো এজেন্টকে বললেন, তুমি প্রতি মাসে এত কোটি টাকা এই ৫০ জন থেকে কালেক্ট করবে, আমি তাদের আমার ব্যাংক থেকে বাংলাদেশে দিয়ে দেব, তুমি এই টাকা বিদেশে আমার একাউন্টে দিয়ে দাও। ব্যাস, হয়ে গেলো সুন্দর টাকা পাচার।
হুন্ডি একইসঙ্গে বাংলাদেশে দুর্নীতি টিকিয়ে রাখতে এবং দুর্নীতিবাজদের দেশের টাকা লোপাট করার এক লাইফলাইন হিসেবে কাজ করে। দেশের বড় চোর আব্দুল কুদ্দুস কিংবা যদু মদু সামদের টাকা পাচারের একমাত্র উপায়। এখন আমাদের দেশের প্রবাসীদের সেই বিলাসিতা নেই দেশে টাকা না পাঠিয়ে থাকার। পাঠাতেই হবে। কোনো না কোনো উপায়ে। কারণ এক মাস টাকা না পাঠালে তারা না খেয়ে থাকবে লিটারালি, দেশের বেশির ভাগ প্রবাসী মাসিক হিসেবে টাকা পাঠান এই কারণেই। আপনি অ্যাক্টিভিস্ট। আপনি দেশের সরকারের বিরুদ্ধে অ্যাক্টিভিজম করছেন, সরকারকে পঙ্গু করতে চাচ্ছেন যাতে সে আপনার কথা মেনে নেয় এবং এটা করার অন্যতম উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন রেমিটেন্স না পাঠানোকে। আপনার কোনো আইডিয়াই নেই, দেশ নিয়ে। দেশে টাকা আসতেই হবে, তা না হলে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের ঘরে আলো জ্বলবে না, প্লেটে ভাত আসবে না, বাসায় বাজার হবে না, বাসা ভাড়া হবে না। সবার ঘরে আর ব্যাংকে আপনার মতো অঢেল টাকা থাকে না। সো, আপনার অ্যাক্টিভিজমে ব্যাংকে রেমিটেন্স না আসলেও হুন্ডিতে টাকা আসবেই, আসতে বাধ্য হবে। ইবপধঁংব, বি ধৎব ঢ়ড়ড়ৎ ধহফ বি হববফ সড়হবু রহ ঃযরং সড়হঃয. এর ফল? এই ফলে বাড়বে মুদ্রাস্ফীতি।
আমদানি ব্যায় বাড়বে, রপ্তানি আয় কমবে। পণ্যের খরচ বাড়বে, জনগণ হিমসিম খাবে। সেন্ট্রাল ব্যাংক টাকা ছাপাবে, বারবার মুদ্রা তার মান হারাবে, আবার টাকা ছাপাবে, আবার মান হারাবে, আবার ছাপাবে, এভাবে চলতে থাকবে। মোটাদাগে, সরকারের কিছুই হবে না, লিটারালি না খেয়ে মরবে মানুষ। ও হ্যাঁ, আরেকটা উপকার হবে, তবে সেটা চোর ডাকাত দুর্নীতিবাজদের। দেশ থেকে টাকা পাচার, যাদের ঠেকাতে আপনার অ্যাক্টিভিজম তারাই দেশ থেকে টাকা পাঠানোর আরো ইজি উপায় পাবে হুন্ডি বাড়লে। হয় আপনি বেকুব, নইলে আপনি হুন্ডিতে টাকা পাচারের সাথে জড়িত কেউ একজন, এই দুই দলের বাইরে কেউ হলে কেউ কখনোই রেমিটেন্স বন্ধ করার আলাপ দিবে না। আপনার টাকা আপনি পাঠাবেন কি না পাঠাবেন, সেটা আপনার ব্যাপার। তবে রেমিটেন্স বন্ধ বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থায় ভুয়া আলাপ। আপনার অ্যাক্টিভিজম বরং আপনাকে হুন্ডি ব্যবসায়ী বানায়, আর কিছু না। ফেসবুক থেকে
