
১০ দিনে রেল থেকে ৫০ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত সরকার : রেলওয়ে ডিজি

আনিসুর রহমান তপন : [১] আন্দোলনের নামে সহিংসতায় ইতোমধ্যে রেলের প্রায় ৩২ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া ১৯ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত (১০ দিন) প্রতিদিনের মালামাল ও যাত্রী পরিবহনের ফলে যে রাজস্ব আয় হয় তা বন্ধ রয়েছে বলে গত রোববার জানিয়েছেন রেলের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাৎ আলী। [২] কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্ষতি হয়েছে ৩২ কোটি ২১ লাখ ৪৮ হাজার টাকার সম্পদ। রেলওয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। [৩] রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রতিদিন রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ১১২টি ট্রেন যাতায়াত করে। ট্রেনগুলোতে প্রতিদিন এক লাখ ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করে। [৪] এছাড়াও সারাদেশে ট্রেন চলাচল করে ৩৬৭টি। এসব ট্রেনে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন থেকে প্রতিদিন রেলের আয় হয় প্রায় তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু সহিংসতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে লেভেল ক্রসিং গেইট, স্টেশন বিল্ডিং, লোকোমোটিভের গ্লাস ও হেডলাইট ভাঙচুর করা, বগিতে অগ্নিসংযোগ, সিগন্যাল যন্ত্রপাতি বিণষ্ট করা ছাড়াও বিভিন্ন ট্রেন ও স্টেশনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করায় রেলের আর্থিক ক্ষতি ৩২ কোটি ২১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
[৫] কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর সহিংসতার ঘটনায় ১৯ জুলাই রাত থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখে রেল কর্তৃপক্ষ। [৬] রেলের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাৎ আলী বলেন, কোটা আন্দোলন সংস্কার চেয়ে আন্দোলন যখন ১৮ জুলাই থেকে রেললাইন অবরোধ, বেরিকেড দেয়া হয়েছিলো। বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর করা হয়। কোন কোন স্থানে লেবেল ক্রসিং ব্যারিয়ার ভেঙ্গে ফেলা হয়। কোন কোন স্থানে সিগন্যালিং সিস্টেমের তার ছিঁড়ে ফেলা/ভেঙ্গে ফেলার মত ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে। [৭] এসব কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রেন চলাচলের নির্দিষ্ট সময় ব্যাহত হয়েছে। এসময় যাত্রী নিরাপত্তা ও রেল সম্পদ রক্ষায় ১৯ জুলাই থেকে ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। [৮] তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে সহিংসতায় ইতোমধ্যে রেলের প্রায় ৩২ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া ১৯ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত (১০ দিন) প্রতিদিনের মালামাল ও যাত্রী পরিবহনের ফলে যে রাজস্ব আয় হয় তা বন্ধ রয়েছে।
[৯] মহাপরিচালক বলেন, প্রতিদিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সরকার গড়ে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিপরীতে ট্রেন বন্ধ থাকায় লোকোমোটিভে হয়তো জ¦ালানী খরচ বেঁচে গেছে। কিন্তু কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, সংস্কার, স্থাপনা ব্যয় কিন্তু বহন করতে হচ্ছে।
[১০] রেল খাত জাতীয় অর্থনীতিতে বড় একটা ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে শাহাদাত আলী বলেন, রেলে জ¦ালানী পরিবহন করা হয়। এই জ¦ালানী সরবরাহ বন্ধ থাকায় কল-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আবার একই কারণে কৃষি খাতে সেচ সুবিধা বন্ধ থাকায় কৃষি পণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে পণ্য উৎপাদন ও কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হলে তাই রেলে জ¦ালানী সরবরাহ অব্যাহত রাখা অপরিহার্য্য।
[১১] প্রত্যক্ষ্যভাবে যেমন রেলের মাধ্যমে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পরোক্ষভাবে দেশের কৃষি পণ্য ও কল-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।
[১২] আবার ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্থ্য হওয়ায় দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রসস্থ হচ্ছে। তেমনই অনেক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যাবসায়ীরাও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কুটির শিল্প পণ্য, ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী যারা প্রতিদিন ট্রেনের বগিতে পণ্য এনে রাজধানীতে বিক্রি করে তার পারিবারিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করতে পারতো, এখন সেটাও বন্ধ রয়েছে। সব মিলিয়ে এটা রেল শুধু নয়, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নতিকে বাধাগ্রস্থ করছে।
[১৩] এক প্রশ্নের জবাবে সরদার শাহাদাৎ আলী বলেন, রেল চালুর বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে কারফিউ চলায় রেল চালুর ক্ষেত্রে এটাও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। কারণ ট্রেনে গিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছার পর দেখা গেল কারফিউ চলছে। সেক্ষেত্রে যাত্রীরা বিপদে পড়তে পারে। তাই জেলা প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী ও সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ট্রেন চালু করা হবে। এক্ষেত্রে যতদ্রুত স¤ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সর্বোপরি যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
