
বাংলাদেশ চীনে আম রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে
শাহীন খন্দকার : [১] চলতি মৌসুমে ৩৮টি দেশে তিন হাজার ১০০ টন আম রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার, এখন থেকে এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে চীনের বাজার। বাংলাদেশ থেকে আম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে চীনের কাস্টম কর্তৃপক্ষ। গত সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে চীনা দূতাবাস।
[২] বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শনিবার (চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস এ ঘোষণা দিয়েছে। ঐ ঘোষণায় বাংলাদেশ থেকে তাজা আম আমদানির ক্ষেত্রে রোগবালাই ও কীটনাশকমুক্ত হওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের ৩ অগাস্ট পর্যন্ত দুই হাজার ৭০০ টন আম রফতানি হয়েছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় এক হাজার টন বেশি।
[৩] চীনা দূতাবাস বলছে, বাংলাদেশ থেকে চীনের আম আমদানির বিষয়ে ফাইটোস্যানিটারি শর্তাবলি নিয়ে ১০ জুলাই বেইজিংয়ে দুই দেশ একটি প্রটোকল সই করেছে।এই ঘোষণাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের ফলাফল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে বর্ণনা করে দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা যে পরস্পরের জন্য উপকারী ফল বয়ে আনছে, তা ওই ঘোষণার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে।
[৪] এদিকে গত শুক্রবার চীনের শুল্ক প্রশাসন বাংলাদেশ থেকে আম আমদানির লক্ষ্যে একটি ঘোষণা জারি করেছে। সোমবার ঢাকায় চীন দূতাবাস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানিয়েছে, জুনে বাংলাদেশ থেকে আম আমদানির বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশ সফর করে।এসময় প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশে আমবাগান পরিদর্শন করে উৎপাদন প্রক্রিয়া সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে। যুগান্তর সুত্রে আরও জানাগেছে, চীনে ফিরে গিয়ে বিশেষজ্ঞ দলটি একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। তাদের ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চীনের শুল্ক বিভাগ বাংলাদেশ থেকে আম আমদানির বিষয়ে ঘোষণাটি জারি করেছে।
[৫] এছাড়া বাংলাদেশের আম রপ্তানির বিষয়ে চীনের শুল্ক বিভাগের এই ঘোষণা গত ১০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর ফলে বাংলাদেশের উন্নত জাতের আম চীনের বিশাল ভোক্তার বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাবে, যা বাংলাদেশকে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। এটি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতার পরস্পরের জন্য সুফল বয়ে আনবে এবং দুপক্ষেও জন্য সমান সুযোগ তৈরি করবে।
[৬] ১০ জুলাই বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক হয়। দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর দুই দেশ বাংলাদেশ থেকে চীনে তাজা আম রপ্তানির জন্য ফাইটোস্যানিটারির প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক প্রটোকল স্বাক্ষর করেন। [৭] এদিকে আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রাজশাহীর চাঁপাইনবাগঞ্জের কানসাটে প্রতিদিন ৩৫-৩৫কোটি টাকার আম বেঁচাকেনা হয়। তবে সম্প্রতি শাটডাউন-কারফিউয়ের প্রভাবে আমের বেচাকেনা নেমে এসেছিল ৮ থেকে ১০ কোটিতে। গতকাল মঙ্গলবার আম আড়তদারদের সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু এতথ্য জানিয়েছেন।
[৮] তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিল আম বাজারেও। সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছিল না আম ভর্তি ট্রাক। তবে এখন অনেকটা স্বাভাবিক। এখন দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার আম বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৫০০ আড়তে কেনাবেচা হয় আম। কাজ করছেন হাজারো শ্রমিক।
[৯] এক প্রশ্নের জবাবে কানসাটে আম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাজারে এখন আশ্বিনা, ফজলি, আমরূপালি, ব্যানানা, ম্যাংগো, বারি-৪ বারি ১১ এবং হাড়িভাঙা, গৌড়মতিসহ বিভিন্ন জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে।এবার জেলায় ৪ লাখ ৫০ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। গত বছর ছিলো ৪ লাখ ২৫ হাজার টন বলে জানিয়েছে চাঁপাইনবাগঞ্জ কৃষি অফিস।
