আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মোস্তাফা জব্বার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সাময়িক সমস্যা হলেও ভাবমূর্তির ক্ষতি হয়নি
সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির বিপুল ক্ষতি সাধিত হয়। আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য, অনলাইন বিপণন কার্যক্রম, আন্তর্জাতিক পরিবহন ব্যবসা প্রভৃতি ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। কূটনৈতিক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক যোগাযোগও এ সময় বন্ধ থাকে। যোগাযোগবিহীন এ অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থায় নানা ধরনের গুজবও চারদিকে ডালপালা মেলতে থাকে। সরকার জানায়, মহাখালীস্থ ডাটা সেন্টার পুড়ে যাওয়ার কারণে এমনটি ঘটেছে। কিন্তু অনেকেই সরকারের এ বক্তব্য গ্রহণ করতে চাচ্ছেন না। এ অবস্থায় খুব স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষ জানতে চায়, এ ক্ষেত্রে আসলে কী ঘটেছিল? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেতে আমাদের অর্থনীতির পক্ষ থেকে ৩১ জুলাই ২০২৪ তারিখে বিশিষ্ট তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আমাদের অর্থনীতির সহকারী সম্পাদক মোস্তাকিম স্বাধীন।
আমাদের অর্থনীতি: সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাহত হওয়ায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন ছিল। এটি দেশের কতেটা ক্ষতি করেছে?
মোস্তাফা জব্বার: একটা বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে গড়ে তুলেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশের যে উন্নয়নগুলো হওয়া দরকার ছিল, তারমধ্যে সবচেয়ে বড় মাধ্যম ছিল ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে মূল বিষয় হচ্ছে এর অবকাঠামো তৈরি করা এবং এ ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত স্থাপিত অবকাঠামো আমাদের দেশের জন্য বিস্ময়কর। বাংলাদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ অঞ্চল ফোর জি নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। ফোর জি মানেই হচ্ছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট। যে হারে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়েছে সে হারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়েছে। আমাদের সমস্ত জায়গায় যে এক সেকেন্ডের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ হলে অসুবিধা হয়, এর ত্ৎাপর্য কী, তা গবেষণা করে বের করার দরকার নেই। ইন্টারনেট যে ক’দিনই ছিল না, সে সময়টা মানুষ কতোটা অসুবিধা বোধ করেছে তা আমরা এ ক’দিনে টের পেয়েছি। আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা কতোটা কষ্টকর তা আপনি বুঝতে পারবেন। যে মানুষটি গ্রামে থাকে, আপনি দেখবেন তার আত্মীয়-যে দেশের বাইরে থাকে, সে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন।
আমাদের অর্থনীতি: মহাখালী ডাটা সেন্টার পোড়ানো ও তজ্জন্য ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে কী বলবেন?
মোস্তাফা জব্বার: এটা কাউকে বলে বোঝানোর দরকার হবে না যে, এটা আমাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পঙ্গু করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। দেখেন, ডাটা সেন্টার পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়া আসলে অনেকটা আপেক্ষিক বিষয়। মহাখালী ডাটা সেন্টার পুড়ে যাওয়াটা আমার কাছে মনে হয়েছে অনেকটা পরিকল্পিত। আমার ধারণা, ডাটা সেন্টার যারা পোড়াতে চেয়েছিল, তাদের পরিকল্পনায় ভুল ছিল।এ ডাটা সেন্টারটিতে সবকিছু ছিল না। আমি মনে করি, আমাদের ইন্টারনেট ব্যবস্থায় শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ ডাটা সেন্টারের উপর নির্ভশীল ছিল। তারপরও এর প্রভাব যে সর্বত্র পড়েছে, সেটা দুঃখজনক।
আমাদের অর্থনীতি: ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি কতোটা ক্ষুন্ন হয়েছে?
মোস্তাফা জব্বার: আমি মনে করি, প্রতিটি জিনিসেরই খারাপ দিক আছে। এটিকে অনেকে খারাপভাবে ব্যবহার করে। কিন্তু তারা যেন এটি খারাপভাবে ব্যবহার করতে না পারে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাহত হওয়ায় সাময়িকভাবে আমাদের সবারই কিছুটা সমস্যা হয়েছে। কিন্তু তাই বলে এ রকম মনে করার কোনো কারণ নেই যে, এ সময়েই শুধু আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। বিষয়টির প্রতি সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। আমি দেখেছি,এ সময়ে বিপুল পরিমাণ ফেক অ্যাকাউন্ট হয়েছে।এমনকি পলক সাহেব ৫০টি ফেক অ্যাকাউন্টের নাম জানিয়েছেন, যারা বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা করেছে। সারা পৃথিবীতে যখন ৫জির প্রচলন চলছে, তখন সেখানে আমরা ৪জিতে আছি।এখানে আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি। এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরো দ্রুতএগুতে হবে ।