চাপে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিক্রি ও মুনাফা কমেছে
মো. আখতারুজ্জামান : [১] চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ বহুজাতিক কোম্পানির বিক্রি কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে কোম্পানিগুলোর মুনাফাতে। বিক্রি কমার পেছনে অন্যতম কারণ দেশে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি। [২] লাগামহীন মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আগের চেয়ে কমে গেছে। ১৩টি স্বনামধন্য বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে দশটি এই তিন মাসের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে পাঁচটি কোম্পানির মুনাফা কমেছে। আরেকটি কোম্পানি গত বছরের একই সময়ে লাভে থাকলেও এবার লোকসানে পড়েছে।[৩] এই তিন মাসে লাফার্জহোলসিমের মুনাফা কমেছে ৫২ শতাংশ ও হাইডেলবার্গের ৭০ শতাংশ। লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইকবাল চৌধুরী বলেন, অর্থনীতি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে নির্মাণ শিল্পে। কারণ এই শিল্পের বিক্রি কমেছে।
[৪] মুনাফা কমার জন্য হাইডেলবার্গ মূলত বিক্রি কমে যাওয়াকে দায়ী করলেও কোম্পানিটি এটাও বলেছে, উচ্চ কর পরিশোধও এজন্য দায়ী। অন্যান্য শিল্পের ক্ষেত্রেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। যেমন এ বছরের এপ্রিল-জুনে আরএকে সিরামিকের লোকসান হয়েছে ৯৪ লাখ টাকা। অথচ গত বছরের একই সময়ে ১২ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল কোম্পানিটি। বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে এ বছর এখন পর্যন্ত লোকসানের পড়া একমাত্র কোম্পানি আরএকে সিরামিক। আরএকে সিরামিকের আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের লোকসানের প্রাথমিক কারণ- গ্যাস সরবরাহ না থাকায় তারা উৎপাদন কমিয়েছে। তাছাড়া চাহিদাও কম ছিল।
[৫] কোম্পানিটির বার্ষিক বিক্রি ২১ শতাংশ কমে ১৪১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে কোম্পানিটির স্থায়ী ব্যয় আনুপাতিক হারে কমেনি, ফলে লোকসান গুণতে হয়েছে। পাশাপাশি উচ্চ সুদহার ও ব্যাংক ঋণ বৃদ্ধির কারণে আর্থিক ব্যয়ও বেড়েছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। [৬] একইভাবে এই তিন মাসে আরও চারটি বহুজাতিক কোম্পানির আর্থিক ব্যয় ৪৭ শতাংশ বেড়ে ২৬৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এদিকে গত মে মাস থেকে ব্যাংক ঋণ ও আমানতের সুদহার বাজারভিত্তিক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে রাখতে সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার প্রায় চার বছর পর এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।
[৭] এপ্রিল-জুন এই তিন মাসে সিঙ্গার বাংলাদেশের মুনাফা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৭ শতাংশ কমে ২৫ কোটি টাকায় নেমেছে। যদিও কোম্পানিটির বিক্রি নয় ৯ শতাংশ বেড়েছে। বাটা সু বাংলাদেশের মুনাফা ৪০ শতাংশ কমে ১৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে এবং বিক্রি ১৮ শতাংশ কমে ২৬১ কোটি টাকা হয়েছে। অন্যদিকে ম্যারিকো, লিন্ডে বাংলাদেশ ও রবি আজিয়াটায় মুনাফা ও বিক্রি বেড়েছে।
[৮] ম্যারিকো বাংলাদেশের মুনাফা ৩০ শতাংশ বেড়ে ১৭২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। লিন্ডের মুনাফা ৪২ শতাংশ বেড়ে ১০ কোটি টাকা এবং রবি আজিয়াটার মুনাফা ৩৪৫ শতাংশ বেড়ে ১০৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরটির সামগ্রিক আয় ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।