
চলমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতি প্রচণ্ড ঝুঁকিতে আমাদের অর্থনীতিকে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান

দেশের চলমান অস্থির পরিস্থিতি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি এর অর্থনীতিকেও প্রচন্ডভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। শিল্পোৎপাদন ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বলতে গেলে পুরোপুরিই স্থবির। সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান কথা বলেছেন আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে। যা নিম্নে তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আমাদের অর্থনীতির সহকারী সম্পাদক মোস্তাকিম স্বাধীন।
বিরাজমান প্রভাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথম মাসে বেশীরভাগ সময় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে গিয়েছিল। ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উপর কি প্রভাব পড়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে এমএ মান্নান বলেছেন, এর জবাব দেয়া মুশকিল, কারণ এত বড় অর্থনীতি এতো ক্ষেত্র। তবে একটা কমন সেন্স থেকে বলা যায়, জুলাই আমাদের অর্থবছরের প্রথম মাস। যদিও এ মাসে নতুন কোন কাজ শুরু করা হয় না। সাধারণত আগের কাজগুলো করা হয়। যেগুলো পুরোনো চলমান প্রকল্প, সেগুলোকে চলমান রাখা। এর একটা কারণ হলো বর্ষাকাল। আর উন্নয়নের প্রধান দৃশ্যমান কাজইতো হলো আমাদের অবকাঠামো, যে কাজগুলো সাধারণত জুলাই মাসে কম হয়।
এর উপর নতুন সমস্যা এসে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র ন্যায় হয়েছে। যারা কাজ করছিল পুরোনো প্রকল্পে তাদের মধ্যে যারা প্রকল্পের শ্রমিক হিসেবে যারা কাজ করে তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভোগ।
বৈদেশিক মুদ্রার বিষয়ে তিনি বলেন, টাকা তো সারাবছরই আসে। টাকার আসার পেছনে কোনো অর্থনৈতিক বছরের প্রভাব নেই। সাধারণত দুইটা বড় সময়ে দুই ঈদে দেশে টাকার বড় ধরনের লেনদেন হয়। তো এটা তো পার হয়ে গেছে তারপরও জুলাইয়ে হয়তো কিছুটা ঘাটতি পড়েছে। এরফলে আমাদের অর্থনীতিতে কি হতে পারে? এমন কথার উত্তরে তিনি জানান এর ফলে আমাদের এক্সপোর্ট কমে যাবে। বিদেশিদের কাছ থেকে রেমিটেন্স নিয়ে যে নেতিবাচক কথা উঠেছে সে বিষয়ে কি বলবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে এমএ মান্নানের অভিমত এটা নিজের সংকীর্ণ স্বার্থে ভয়ংকর বড় ধরনের আহবান। তোমরা দেশে টাকা পাঠিও না এই আহ্বানের নৈতিক কোনো স্থান নেই। দেশের বাজেট বাস্তবায়নেও কি কোন বাধা আসছেনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন অবশ্যই আছে, এই শ্রমিকদের মধ্যেও কিছুকিছু রজানৈতিক মতবাদের চাপে এ বাধা আসতে পারে। এখানে বলতে পারি মধ্যপ্রাচ্যের আরব আমিরাতে আমাদের কিছু শ্রমিক চিল্লাচিল্লি (আন্দোলন) করেছিল। ওদের ঘটনায় আমাদের রিজার্ভের উপর আরো চাপ বাড়বে।
চলতি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বাজেট বাস্তবায়নে চলমান পরিস্থিতির কি প্রভাব রয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি তো এটা অন্যভাবে দেখি। আমি দুঃখ পাই। আমি মনে করি অর্থনীতির উপর আঘাত দিয়ে রাজনীতি করা মোটেই কাম্য নয়। একসময় আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমরাতো রাজনীতি করবো। রাজনীতি করতে গিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা সে সময়ে দরকার ছিল। তখন জীবন মরনের সংগ্রাম ছিল। যারা অর্থনীতিকে আঘাত করছে, তাদের তো তেমন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে আমাদের। যারা দরিদ্র খেটে খাওয়া নিষ্পেষিত তাদের ক্ষতি হচ্ছে।
চলমান পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের বাজারের দাম বাড়ার বিষয়ে মান্নান বলেন, আমি গ্রামের বাজারে গিয়েছি দেখেছি। আমার বাড়ির পাশে যারা কাঁচাসব্জি বেচেন তারা বলেছে শুধুমাত্র পিঁয়াজের দাম ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম খুব একটা বাড়েনি। চালে সামান্য কিছুটা বেড়ে ছিলো। আর এটা হয়েছে ট্রাক লরিতে মাল পরিবহন বন্ধ থাকায়। সম্পদের আরো ক্ষতি হতে পারতো। এক্ষেত্রে আমি বলবো সেরকম ক্ষতি কম হয়েছে। সম্প্রতিক যে দুর্ঘটনা এজন্য এই মুহর্তে বাজারের অবস্থা তেমন অসহনীয় কিছু নয় বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, এটা স্বীকৃত, গত কয়েক বছরে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। তবে গড় হিসেবে আমরা সবাই উপকৃত হয়েছি।
