
মেট্টোরেল বন্ধ থাকায় ১৫ দিনে ক্ষতি ২৩ কোটি টাকা

শাহীন খন্দকার : [১] মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিরোধী আন্দোলনের সহিংসতায় মেট্রোরেল মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ফলে বন্ধ রাখা হয় মেট্রোরেল। কবে নাগাদ এই সেবা চালু হবে, তা এখনও জানাতে পারেনি ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের ১০ মার্চ ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, মেট্রোরেলের দৈনিক আয় গড়ে দেড় কোটি টাকার মতো। সেই হিসাবে গত ১৫ দিনে প্রায় ২৩ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
[৩] ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, ক্ষতি পুষিয়ে লাভজনক হতে হলে মেট্রোরেলকে প্রতিদিন ৩ কোটি টাকার ওপরে আয় করতে হবে। কারণ মেট্রোরেলের রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্থার কর্মীদের বেতন বাবদ ২কোটি টাকার ওপরে ব্যয় হবে। মেট্রোরেলে দৈনিক গড়ে ৩ লাখ ২৫ হাজার যাত্রী চলাচল করতো। আধুনিক এই গণপরিবহনটির ৪ লাখ ৫২ হাজার যাত্রী বহনের সক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে মেট্টোতে করে যেসব যাত্রী যাতায়াত করতেন তারা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। কবে চালু করা সম্ভব হবে মেট্টো সেটিও নিশ্চিত নয়।
[৪] ফলে একদিকে মেট্রোরেলের লোকসান যেমন বাড়বে, অন্যদিকে যাত্রীদের ভোগান্তি শিগগিরই দূর হচ্ছে না। এদিকে মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় দৈনিক ক্ষতির বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি ডিএমটিসিএলএর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের আয়-ব্যয়ের হিসাব আন-অফিসিয়ালি বলা যাচ্ছে না।
[৫] আমাদের সিএ ফার্ম আছে। তারা ভেরিফাই না করা পর্যন্ত আমাদের হিসাব নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না। তবে দৈনিক আয়ের বিষয়ে এর আগেও আমি সংবাদ সম্মেলনে বলেছি। সম্প্রতি আয় কিছুটা বেড়েছিল। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ে কাজ চলছে।
[৬] দুই স্টেশনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য গত ২২ জুলাই মেট্রোরেল লাইন-৬-এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়ার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ডিএমটিসিএল। এই তদন্ত কমিটিকে পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। তবে প্রথম দুদিন কোনও কাজই শুরু করতে পারেনি এই কমিটি। প্রথম কার্যদিবসে (২৪ জুলাই) কূটনীতিকদের নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন পরিদর্শনে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
[৬] পরদিন ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৃতীয় কার্যদিবসে একটি প্রাথমিক সভা ও ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন দুটি পরিদর্শনের মাধ্যমে কাজ শুরু করে তদন্ত কমিটি। প্রথমে স্টেশন দুটি পরিদর্শন করেছি। আমাদের কমিটিতে পরামর্শক, ঠিকাদার ও ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছেন।
[৭] তিনি বলেন, কি কি ক্ষতি হয়েছে, সবাই মিলে তার তালিকা তৈরির কাজ করছি। কোনগুলো সংস্কার বা নতুন করে কিনে এনে লাগানো হবে তা নির্ণয় করছি। এ কাজে আমাদের সময় লাগবে । তবে স্টেশন দুটির যেসব ক্ষতি হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে টিকিট কাটার মেশিন, অফিস রুম, টিকিট পাঞ্চ করার গেট, কম্পিউটার, সিসিটিভি ক্যামেরা।
[৮] এছাড়া আরও কিছু যন্ত্রপাতি ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিরপুর-১০ স্টেশনের কর্মীরা। তবে মেট্রোরেল ও এর চলাচলের ভায়াডাক্ট অংশের কোনও ক্ষতি হয়নি বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মিরপুর-১০ স্টেশনের ই-সিস্টেমের পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। এ সিস্টেম পুনরায় সচল করতে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা লাগতে পারে। কাজীপাড়া স্টেশনের ই-সিস্টেম অর্ধেকের বেশি নষ্ট হয়ে গেছে।
[৯] এই স্টেশনের ই-সিস্টেম ঠিক হতেও ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ই-সিস্টেম ছাড়াও দুই স্টেশনে থাকা পাঞ্চ মেশিন, ভেন্ডিং মেশিন, বিভিন্ন ডিভাইস, কম্পিউটারসহ আরও যেসব জিনিসপত্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাও ঠিক করতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা লেগে যেতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
[১০] বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ স্টেশন পরিদর্শন করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির সভাপতি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, সদস্য মো. মুজিবুল হক ও আব্দুল্লাহ-আল-কায়সার পরিদর্শনে অংশ নেন। কমিটি ধ্বংসের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে দ্রুত মেট্রোরেল কিভাবে আবার চালু করা যায় সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।
