জেন-জেড এর শক্তি ও দুর্বলতা!
পারভেজ আলম
গত সেমিস্টারে আমি ব্যাচেলরের ছাত্রদের হিস্টোরিসিজমের উপরে একটা কোর্স পড়াইছি। তো, বুঝতেই পারছেন, স্টুডেন্ট প্রায় সকলেই ছিলেন জেন জেড প্রজন্মের (একজন সিনিয়র স্টুডেন্ট বাদে)। একই সময় আবার চলছিল ছাত্র আন্দোলন, সুতরাং সকলেই তখন ছিল আন্দোলনের চেতনায় ভরপুর।
তো, এর মধ্যে একদিন একটা টেক্সট পড়াচ্ছিলাম, যাতে সোভিয়েত আমলে বেড়ে ওঠা মার্ক্সিয় সাহিত্য সমালোচনার পদ্ধতি নিয়া কিছু আলাপ ছিল। মূলত মার্ক্সিয় ধারার হিস্টোরিসিজম আর পরবর্তিতে বিকশিত নিউহিস্টোরিসিজমের মিল ও পার্থক্যের উপর লেখক আলোকপাত করেছেন। এই আলোচনা করতে গিয়ে বলশেভিকদের দ্বারা এবং তাদের সমকালীন মার্ক্সিস্ট ধারার বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা বিভিন্ন লেখক-শিল্পী বা তাদের কাজকে ক্যান্সেল করার ইতিহাসও তুলে ধরেছেন।
তো, আমরা অনেক সময় এই ইতিহাসগুলাকে পড়বার সময় বর্তমানের আলোকে বোঝার চেষ্টা করি না। তাই স্টুডেন্টদের জিজ্ঞাস করছিলাম যে বলশেভিকদের সাথে তারা তাদের কোন মিল দেখতে পায় কিনা? প্রশ্নটা তারা না বোঝায় জেন জেড প্রজন্মের ক্যান্সেল কালচার আমল করার উদাহরণ টানছিলাম। তাদের জিজ্ঞাস করছিলাম যে তারা যেই পরিমাণ ক্যান্সেলে বিশ্বাসী, তার সাথে বলশেভিকদের কোন মিল তারা দেখে কিনা?
ইনএনিকেইস, এরপরে আরো অনেক আলাপ দিছিলাম। তবে ঐসব কথা এখানে বলার সুযোগ নাই। যাস্ট এইটুকু আপনাদের বলতে চাই যে, জেন জেড প্রজন্মের সবচাইতে শক্তিশালী দুইটা দিক আবার তাদের সবচাইতে দুর্বলতার দিকই। এই দুইটা দিক হলো সোস্যাল জাস্টিসের চেতনা এবং ক্যান্সেল কালচারের আমল। আপনারা জানেন যে সোস্যাল জাস্টিস খুব দরকারী জিনিস। আগের আমলের নবী রাসুল মুনি ঋষি থেকে শুরু করে আজকালকার বড় বড় বিপ্লবী, সবাই সোস্যাল জাস্টিস ওয়ারিওর ছিলেন।
কিন্তু সেই সাথে এও মনে রাখা দরকার যে এই আনজাস্ট দুনিয়ায় জাস্টিস আদায় করা খুবই কঠিন কাজ। আমরা মিলেনিয়ালরা জাস্টিসের আন্দোলন করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেই জাস্টিসের চেতনা কবর দিয়ে আওয়ামী লীগ তার উপর আনজাস্টের প্রাসাদ বানিয়েছিল। তাছাড়া জাস্টিস যেমন জরুরি জিনিস, তেমনি জগতের অধিকাংশ বিষয়ে জাজমেন্টাল আচরণ না করাও জরুরি জিনিস। এই দুইয়ের সমন্বয় কম বয়সে শেখা খুবই কঠিন। কতো বুড়ো না শিখে জীবন পার করে দিলো। আর জেন জেডরাতো সেইদিনের পোলাপান।
এক হিসাবে, ক্যান্সেল কালচার এবং সোস্যাল জাস্টিস কায়েমের প্রবণতা, দুইটা ঐতিহ্যই জেন জেডরা তাদের ইমিডিয়েট পূর্বসুরী মিলেনিয়ালদের কাছ থেকেই সরাসরি লাভ করেছে। তবে, এইক্ষেত্রে মিলেনিয়ালদের তুলনায় তারা অনেক বেশি কনফিডেন্ট, ইমানদার, ও শক্তিশালী চেতনার অধিকারী। এই শক্তি একটা পর্যায়ে গিয়ে ক্ষতিকর হইতে পারে। যেমন, ক্যান্সেল কালচারের ক্ষেত্রে।
দেখেন, আমাদের আগের আরো বহু জেনারেশনের মতোই, আমরা মিলেনিয়ালরাও নিজেদের শত্রুপক্ষকে যথাযোগ্য সম্মান দিতে শিখেছি। আমরা হাইডেগার পড়ি, স্মিট পড়ি, মওদুদীও পড়ি। যেমন আমাদের গুরু ও মুরুব্বিরা করেছেন। আমরা প্রতিপক্ষের সবকিছু ক্যান্সেল করি না। একইসাথে বর্জন ও গ্রহণ করি। ক্যান্সেল ও রক্ষা করি। কিন্তু আজকালকার অনেক পোলাপান হাইডেগারের নাজি কানেকশন শুনলেই তারে পুরাপুরি ক্যান্সেল করতে চায়। এটা একটা উদাহরণ মাত্র। এই জেনারেশনের সোস্যাল পুলিশিং নিয়া উদ্বেগ কিন্তু জুডিথ বাটলারও প্রকাশ করেছেন।
মনে রাখবেন, ক্যান্সেল দিয়া সব সমস্যার সমাধান হয় না। প্লাস, ক্যান্সেল করে সমাধানের চর্চাটা আমরা আদতে আমেরিকান লিবারালদের মরালিজম থেকে লাভ করেছি। এধরণের মরালিজম সমস্যার সমাধান করার চাইতে উলটা সমস্যা বৃদ্ধি করে।