উচ্চ লক্ষ্যমাত্রার রাজস্ব আহরণ এক ধরনের সমস্যা : আইআরডি
সোহেল রহমান : [১] প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রাকে এক ধরনের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ’ (আইআরডি)।
[২] মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সম্পাদিত বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ)-তে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করতে গিয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছে আইআরডি।
[৩] এছাড়াও চারটি সমস্যা রয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ কর পরিসর সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে জরিপ কার্যক্রমে পদ্ধতিগত সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘসূত্রিতা; আন্তঃকর ব্যবস্থাপনায় তথ্য বিনিময়ের অপ্রতুলতা; দক্ষ জনবলের স্বল্পতা ও ভৌত অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় সুবিধাদির অভাব।
[৪] বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিবছর বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে মূল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, সেটি অর্জন করা তো দূরের কথা, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্জন করা সম্ভব হয় না। গত তিনটি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এর মধ্যে এনবিআর-এর আওতাধীন রাজস্ব ঘাটতিই সবচেয়ে বেশি।
[৫] এদিকে উচ্চ লক্ষ্যমাত্রার রাজস্ব আহরণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও চলতি অর্থবছরে মোট ৫ লাখ ৬ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে আইআরডি। তবে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার অটোমেশন এবং সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাটা চ্যালেঞ্জের বিষয় বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
[৬] এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর মতে, সংস্থাটির সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জনবল স্বল্পতা ও প্রশিক্ষিত জনবলের অপ্রতুলতা।
[৭] আইআরডি’র তথ্যমতে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট প্রায় ৩ লাখ ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৩৫০ কোটি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
এনবিআর-এর সাময়িক তথ্য মতে, সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৩ লাখ ৭১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে হিসাবে মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব কম আদায় হয়েছে ৩৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা।
[৮] আইআরডি’র হিসাবে, গত অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত কমেছে। সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ১০ শতাংশ।
[৯] অন্যদিকে একই অর্থবছরে এনবিআর-এর হিসাবে কর-জিডিপি অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ অনুপাত ছিল ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
[১০] চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শেষে কর-জিডিপি অনুপাত ৮ দশমিক ৪৫ থেকে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ দাঁড়াতে পারে।
[১১] এদিকে চলতি বাজেটে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা নির্ধারণ হলেও চলতি অর্থবছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে চায় আইআরডি।
[১২] বিভাগের অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছেÑ ই-টিডিএস সিস্টেমে ১১ হাজার ৫০০ কর্তনকারী কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন সম্পন্ন করা; ই-পেমেন্টের আওতায় ৭২ হাজার ১৫২ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যথাযথভাবে ভ্যাট আহরণ নিশ্চিতকরণে ৪২ হাজার (ক্রমপুঞ্জিভূত) ইএফডি মেশিন স্থাপন করা।