‘রোজায় লুকিয়ে মাঝে মাঝে পানিও খেয়ে ফেলতাম’
ওমর শাহ: মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী। ওয়াজের মাঠে ঝড় তোলা একজন জনপ্রিয় বক্তা। বিখ্যাত আলেম। লাখো তরুণের চেতনার বাতিঘর। প্রায় বছরজুড়েই যিনি ঘুড়ে বেড়ান বাংলার পথে প্রান্তরে। কুরআনের আলো পৌঁছে দেন ঘরে ঘরে। সুরের মূর্ছনায় মাতিয়ে রাখেন শ্রোতাদের। বিখ্যাত এ আলেমে দ্বীনের সঙ্গে একদিন তাঁর পল্টনের কালভার্ট রোড অফিসে কথা হয়েছিল ইফতারের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে। গল্পের ছলে ছলে তিনি তুলে ধরেন তার শৈশবে রোজার স্মৃতি। বর্তমানে রমজান যাপনের চিত্রটাও বাদ দেননি। দ্বীনের তারারা কীভাবে রোজা পালন করেন এমন কৌতুহলী নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী। প্রায় ১০ বছর বয়স থেকেই নিয়মিত রোজা রাখেন শৈশবের সেই ছোট্ট কিশোর। তবে এর আগের গল্পটা একটু ভিন্ন। নিয়মিত রোজা না রাখলেও মাঝে মাঝে রাখতেন। আর পিপাসা লাগলে লুকিয়ে পানিও খেয়ে ফেলতেন। তবে জানতেন না পরিবারের কোন সদস্য। পানি খেলে রোজা ভেঙ্গে যায় কিংবা রোজার সওয়াব অর্জন হয় না এমন বুঝ হয়তো তখনো হয়নি কিশোর সাইফুল্লাহর। তবে বুঝতে শেখার পর কোন রোজা ছেড়ে দিয়েছেন কিংবা লুকিয়ে পানিও খেয়ে ফেলেছেন এমন রেকর্ড নেই তার জীবনপাতায়।
শৈশবে রোজার চিত্র কেমন ছিল আর বর্তমানে কেমন দেখেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আসলে শৈশবে রোজা যেমন দেখেছি সে দৃশ্য এখন আর নেই। শৈশবে শীতের রাতে সেহরি খেতে উঠার আনন্দটাই ছিল ভিন্নরকম। তারাবি নামাজ নিয়ে কোন বিতর্ক ছিল না। বিশ রাকাত তারাবিহ না পড়ে মানুষ ঘরে ফিরতো না। এখনতো আট রাকাতের পর মসজিদে মুসল্লিই খুঁজে পাওয়া যায় না। তারাবিহ নামাজ নিয়ে মসজিদে মসজিদে একটি নব্য ফেতনা শুরু হয়েছে। শৈশবে বাড়ি বাড়ি ইফতার পাঠানো, প্রতিবেশিদের মাঝে আনন্দ ভাগাভাগি খুব মনে পড়ে। এখন সবকাজের মতো মানুষের ইবাদতগুলোও পরিবারকেন্দ্রীক হয়ে পড়েছে। পাড়া প্রতিবেশিদের সঙ্গে নিয়ে ইবাদত পালনের সেই পরিবেশ এখন আর নেই। আগের মতো নেই জমজমাট ও উৎসবমুখর পরিবেশ। আট রাকাত বিতর্কটা আসলে কী? এমন প্রশ্নে মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, তারাবিহ নামাজ বিশ রাকাত নবী সা. সাহাবা ও তাবেয়ীনদের আমল দ্বারা প্রমাণিত। আট রাকাতের রেওয়াজ করে আহলে হাদীসরা। আমি তাদের বহুবার আহ্বান করেছি আপনারা আট রাকাত প্রমাণ করতে পারলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। তাদের কেউ কোনদিন এ আহ্বানে সাড়া দেয়নি। আসলে হক্কানি আলেম উলামাদের মুখোমুখি হলে ফেতনাবাজরা নীরব হয়ে যায়। চ্যালেঞ্জ বড় বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে সত্যটাকে প্রতিষ্ঠিত করা। ব্যাক্তিগত জীবনে রমজান পালন নিয়ে মাওলানা সাইফুল্লাহ বলেন, ওয়াজ ও রাত্রিকালীন দীর্ঘ সফরের কারণে রমজানের বিশেষ ইবাদতগুলো অনেকটাই কম হয়ে থাকে। রমজান মাসেও ওয়াজের অনেক প্রোগ্রাম থাকে। যতটুকু সুযোগ হয় কুরআনুল কারীমের দুই এক খতম দেওয়ার চেষ্টা করি। কিয়ামুল্লাইল নিয়মিত পড়া হয়। তবে আমার পরিবার ও মাদরাসায় বিশেষ আমলগুলো খুব গুরুত্বের সঙ্গেই পালন হয়। নিজ স্ত্রী অধিকাংশ সময় কুরআন তেলাওয়াতের মাঝে কাটান। মাদরাসায় জামায়াতবদ্ধভাবে কিয়ামুল্লাল্লাইল পালন হয়। সাধারণ মানুষদের শত ব্যস্ততার মাঝে কীভাবে রমজান পালন করা উচিত এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে বিশেষ করে তরুণরা রমজানের হক পরিপূর্ণভাবে পালন করে না। দিনরাত সোশ্যাল মিডিয়ায় পার হয়ে যায়। আমি প্রশাসনের কোন দায়িত্বে থাকলে অন্তত রমজানের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া অফ করে দিতাম। মানুষ ফেসবুক ইউটিউব এ রমজান পার করে দেয়। আমি বলব, এতে করে মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। রোজার হক নষ্ট হচ্ছে।