রাজধানীর স্টেশন ও টার্মিনালে ঘরমুখী মানুষের ঢল, মহাসড়কে দুর্ভোগ
হুমায়ুন কবির খোকন : ঈদযাত্রায় ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে মহাসড়কে। মানুষের ঢল নেমেছিল রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটতে দেখা যায় ঘরমুখী যাত্রীদের। সময় যত গড়ায় মানুষের চাপ তত বাড়তে থাকে স্টেশন ও টার্মিনালগুলোতে। তবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ব্রিজ এলাকায় ছিল ব্যাপক যানজট। কমলাপুর রেলস্টেশনেও সকাল থেকে মানুষের ভিড় বাড়তে দেখা যায়। অগ্রিম টিকিট যারা কেটেছেন, তাদের তেমন দুঃচিন্তা না থাকলেও যাদের টিকিট কাটার সুযোগ হয়নি, তাদের চোখে-মুখে ছিল উদ্বিগ্নতা। যাত্রী সংখ্যা বেশি হওয়ায় নিয়ম ভেঙে প্রায় সব ট্রেনের ছাদেই মানুষকে চড়তে দেখা গেছে। কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ১৪টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। অধিকাংশ ট্রেনে যাত্রীর প্রচ- চাপ লক্ষ্য করা গেছে। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর উপ-পরিদর্শক (এসআই) সালাহ উদ্দিন ভূইয়া জানান, সকাল থেকে যাত্রী চাপ বেড়ে গেছে। এই চাপ সারারাত ছিল, বিকাল পর্যন্ত ট্রেনগুলোতে আরও বেড়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিভিন্ন রুটের যানবাহনের ভিড় থাকলেও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। ট্রাক,মাইক্রোবাস ও পিকআপযোগে গন্তব্যে ছুটতে দেখা যায় যাত্রীদের। ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে মানুষের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। অনেকেই গভীর রাত থেকে সদরঘাট টার্মিনালে ভিড় করতে দেখা যায়। লঞ্চগুলোতেও স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটতে দেখা যায়। সকালে চাঁদপুরসহ নিকট গন্তব্যের লঞ্চগুলো ঢাকা ছেড়ে যায়। মাঝে বিরতির পর বিকালে শুরু হয় বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ দূরগন্তব্যের লঞ্চগুলোর যাত্রা।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান,গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের দীর্ঘলাইন। বিশেষ করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী ব্রিজ থেকে ভোগড়া বাইপাস পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়কে যানবাহনের চাপ সবচেয়ে বেশি। শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকা, টঙ্গী ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ ছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। ভোগড়া বাইপাস থেকে কোনাবাড়ি হয়ে চন্দ্রা পর্যন্ত সড়কের যানবাহনের অত্যাধিক চাপ রয়েছে। এ কারণে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যমুনা ব্রিজ থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত যানজট ছিল। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গোড়াই হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান, উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনগুলো ধীরে-ধীরে যাচ্ছে। গাড়ির চাপ বেশি।
সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড় থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার ভোর থেকে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের প্রায় ২৪ জেলার যানবাহনগুলো লম্বা সারিবদ্ধ হয়ে থেমে থেমে চলাচল করে। ঢাকা থেকে ঈদে ঘরমুখো মানুষের বাড়তি গাড়ির চাপ ও উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকামুখী অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে যানজটের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পণ্য পরিবহন ও যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছতে পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে।
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জ অংশে কমপক্ষে ১৩ কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়েছে। শুক্রবার সকালে মেঘনা সেতুতে একটি ট্রাক বিকল হয়ে এই জট সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার রাতের জট শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ছিল।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শরীফুল হাসান জানান, মেঘনা ব্রিজের গোড়ায় কয়েক কিলোমিটারের যানজট রয়েছে। ধীরে-ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
কুমিল্লাগামী তিতাস বাসের যাত্রী ইকরামুল হক জানান, বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেইন হলেও মেঘনা সেতু দুই লেইনের হওয়ায় ঈদে অতিরিক্ত গাড়ির চাপে এই জট দেখা দিয়েছে বেশি। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ