‘মামা’ ছিলেন আমাদের পথপ্রদর্শক
শাওন মাহমুদ
মুক্তিযুদ্ধকালীন গেরিলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক। তিনি আমাদের মাঝে ‘মামা’ নামে পরিচিত ছিলেন। মামা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দিকপাল হিসেবে ছিলেন। তাদের মতো মানুষদের দেখেই সাহস অর্জন করেছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিভাবে রুখে দাঁড়াতে হয়, কীভাবে সত্য বলতে হয়, সত্যকে পুঁজি করে লড়াই করতে হয় তিনি তা আমাদের দেখিয়েছেন। শিখিয়েছেন। উনারা আমাদের গুরুজন। শ্রদ্ধার মানুষ। সমাজ তাদের গভীরভাবে শ্রদ্ধা করে। তাদের অবদানের কথা স্মরণ করে।
আমি মনে করি, একেকজন মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। জীবন তো কঠিন। জীবন বাস্তবতা প্রত্যেকের মৃত্যু হয়, আমাদেরও একদিন মরতে হবে। তবে কিছু কিছু মৃত্যু মেনে নেওয়া অনেক কষ্টের। আগামী দিনগুলোতে যখন এই পরিচিত প্রিয় মুখগুলো আর দেখতে পাব না বা যারা একে একে চলে যান পরপারে তাদের মুখগুলো না পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই একা লাগে। আমরা কি একাই রয়ে গেলাম। এই স্বাভাবিকতা মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়।
শহীদুল হক মামাকে আমরা ছোটবেলা থেকেই চিনি। তিনি আমাদের সবসময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। উনাদের মতো সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেখে টিকে থাকার লড়াই শিখেছি। আমাদের মতো শহীদ পরিবারগুলো উনাদের কাছ থেকে তো দেখা ও শেখা। ২০১৩ সালের পর থেকেই উনাদের মতো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে নিয়ে আসা হলো। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে জনমত গঠনে সামনে থেকে তরুণদের উজ্জীবিত করেছেন তিনি। উনাদের মতো সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্ম হয়েছে বিধায় বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন দেশ আমরা পেয়েছি। আসলে উনাদের মতো মুক্তিযোদ্ধারা সক্রিয় থেকে যেভাবে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, আমাদের প্রজন্ম যতবারই পড়বে সেই কাহিনী ততবারই শিহরিত হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উনাদের জীবনী পড়ে সাহস খুঁজে পাবে। তরুণ বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তাদেরকে আরও ভালভাবে তুলে ধরতে হবে। তুলে ধরতে হবে তাদের অকুতোভয় সাহসী কাজের ইতিহাস। দেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দীর্ঘায়িত করার পায়তারা করা হচ্ছিল তখন তিনি গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে প্রহরীর মতো ছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জনমত গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। যাতে করে একাত্তরের ঘাতকদের শাস্তি দ্রুত কার্যকর করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদুল হক মামা ছিলেন আমাদের পথপ্রদর্শক। তার প্রতি অতল শ্রদ্ধা।
পরিচিতি: শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের মেয়ে
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন/সম্পাদনা: আশিক রহমান