তরুণদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন
শাহরিয়ার কবীর
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে ২ নম্বর সেক্টরের মেলাঘর ইউনিটের প্রধান শহীদুল হক মামা বিহারিদের দখলে থাকা দুর্ভেদ্য ঘাঁটি মিরপুরকে মুক্ত করেন। তিনি নিঃসন্দেহে একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরেও যখন আমরা যুদ্ধাপরাধীদের আন্দোলন শুরু করি তখন সেই আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। সুইডেনে তিনি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে সেখানে সহযোগিতা করেছেন। গণজাগরণ মঞ্চের যখন আবির্ভাব হলো তখন তিনি সুইডেন থেকে সবকিছু ফেলে বাংলাদেশে চলে আসেন। গণজাগরণ মঞ্চের তরুণেরা তার যে আবেগ এবং কর্মচেতনা থেকে তারা অনুপ্রাণিত হয়েছে, উজ্জীবিত হয়েছে। এই ক্ষমতাটা তার মধ্যে ছিল যে তরুণদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, আবেগ, দায়বদ্ধতা ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। তার চলে যাওয়ায় বিরাট একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। কারণ ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধা অনেকেই ছিলেন। কিন্তু অনেক মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা ধরে রাখতে পারেননি। নানাজন নানাভাবে আপোস করেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে। কিন্তু শহীদুল হক মামা কোনো ব্যাপারে আপোস করেননি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তিনি অত্যন্ত কঠোরভাবে ধরে রেখেছিলেন। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য যখন ট্রাইব্যুনাল গঠন হলো তিনি সেখানে যুক্ত ছিলেন। একাত্তরের এই গেরিলা যোদ্ধা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে করা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের দ্বিতীয় সাক্ষী দিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। এই বিচার তরান্বিত করার জন্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। তার চলে যাওয়া আমাদের জন্য একটা বিরাট ক্ষতি। তার অভাব সহজেই পূরণ হবার নয়। ঘাতকদের বিচারে তার আপোসীন লড়াই প্রেরণাদায়ক। তিনি এদেশের স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।
পরিচিতি: ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি
মতামত গ্রহণ: ফাতেমা-তুজ-জোহরা/সম্পাদনা: আশিক রহমান