উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি কতটা
মুজতাহিদ ফারুকী : বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে উত্তর কোরিয়া প্রতিরক্ষা খাতে তার অর্থের বিরাট অংশ ব্যয় করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আলাদা থাকা উত্তর কোরিয়া গত এক দশক ধরে তার জিডিপির প্রায় এক-চতুর্থাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক হিসাব থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চতর পারমাণবিক ও সাইবার সরঞ্জামের বাইরে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী অস্ত্রশস্ত্র ও যানবাহনের দিক থেকে খুবই সেকেলে অবস্থায় রয়েছে।
পরমাণু অস্ত্র : ২০০৬ সাল থেকে উত্তর কোরিয়া ক্রমশই বৃহত্তর পারমাণবিক বোমার ভূগর্ভস্থ পরীক্ষা চালিয়ে আসছে। তার কাছে অন্তত ৫ থেকে ৬টি বোমা বানানোর মতো যথেষ্ট প্লুটোনিয়াম মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে দেশটি বহু দূরের লক্ষ্যস্থলে আঘাত হানার জন্য ক্ষেপণাস্ত্রের মাথায় যে শস্ত্রাগ্র (ওয়ারহেড) বসাতে হয় সেগুলোর ক্ষুদ্রাকার নমুনা তৈরি করতে পেরেছে কিনা সেটিই মূল প্রশ্ন।
একজন পরমাণু অস্ত্র বিশেষজ্ঞ সিগফ্রিড হেকার গতবছর বলেন, উত্তর কোরিয়া স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের শস্ত্রাগ্র তৈরি করেছে বলেই ধরে নিতে হবে। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র এশিয়ায় আঘাত হানতে সক্ষম। তবে যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের শস্ত্রাগ্র তৈরিতে দেশটির আরও অন্তত ৫ থেকে ১০ বছর লাগবে। তবে সেজন্য দেশটি তার পরমাণু কর্মসূচি নির্বিঘেœ চালু রাখতে সক্ষম হচ্ছে কিনা সেটিও বিবেচ্য।
ক্ষেপণাস্ত্র : দেশটির কাছে বিভিন্ন পাল্লার ১ হাজারের বেশি ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে স্কাড ক্ষেপণাস্ত্রের অনুরূপ হোয়াসং-৫ ও হোয়াসং-৬ নামের স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সহজেই দক্ষিণ কোরিয়ায় আঘাত হানতে সক্ষম। আর মাঝারি পাল্লার নোডং ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের সর্বত্র আঘাত হানতে পারবে। এছাড়া দীর্ঘপাল্লার মুসুদান ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ১৫৫০ থেকে ২৫০০ মাইলের মধ্যে। এটি সর্বোচ্চ দূরত্ব অতিক্রম করলে তা গুয়ামে মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে পৌঁছতে পারবে।
উত্তর কোরিয়া কেএন-০৮ নামের একটি দূরপাল্লার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে বলে ধারণা করা হয়। এটি আমেরিকা মহাদেশের অনেকটা অংশে পৌঁছতে সক্ষম হবে বলে দেশটি গতবছর ঘোষণা করেছিল।
রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র : দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই অভিযোগ করে যে, উত্তর কোরিয়ার বড় ধরনের রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচি রয়েছে। দেশটির কাছে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের আড়াই হাজার থেকে ৫ হাজার টন মজুদ আছে বলে ধারণা করা হয়। সেনাবাহিনীতে ১ লাখ ২০ হাজার সেনাসদস্য থাকলেও তাদের যানবাহন ও সরঞ্জাম এক দশকের বেশি পুরনো। তাদের রয়েছে সাড়ে ৩ হাজারের মতো ট্যাংক এবং বিভিন্ন ধরনের ২১ হাজারের বেশি কামান।
নৌবাহিনী : উত্তর কোরিয়ার ৭২টি সাবমেরিন, ৩টি ফ্রিগেট এবং ৪শর মতো টহলদার জাহাজ রয়েছে।
বিমানবাহিনী : দেশটির রয়েছে ৫৬৩টির মতো যুদ্ধবিমান। এগুলোর বেশিরভাগই চীনের তৈরি জে-৫, জে-৬ এবং জে-৭, যেগুলো ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে তৈরি করা হয়েছিল। তাদের কিছুসংখ্যক মিগ-২১, মিগ-২৩ এবং মিগ-২৯-এর মতো আধুনিক যুদ্ধবিমানও রয়েছে। তবে দেশটি বিমান বহর রক্ষণাবেক্ষণে জটিল অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করা হয়।
সাইবার সরঞ্জাম : দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন বাহিনীর জেনারেল ভিনসেন্ট ব্রুকস বলেন, উত্তর কোরিয়ার সাইবার হামলার সক্ষমতা বিশ্বের সেরা এবং সবচেয়ে সুসংগঠিত। তাদের ব্যুরো ১২১ নামের সাইবার কেন্দ্রে ৬ হাজারের বেশি হ্যাকার রয়েছে বলে উত্তর কোরিয়ার পক্ষত্যাগীরা জানিয়েছেন। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ, সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ