রিকু আমির : চিকুনগুনিয়াসহ ঋতুভিত্তিক অন্য রোগের আতঙ্কে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত সাংবাদিক শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমানকে দেশে আনা হচ্ছে না। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি তালেয়া রেহমান লন্ডনের ম্যাকমিলান ক্যান্সার সেন্টার, ইউনিভার্সিটি কলেজ হসপিটালে যান।
শফিক রেহমানের সহকর্মী তারিকুল ইসলাম চয়ন এ প্রতিবেদককে জানান, তালেয়া রেহমানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। দীর্ঘসময় উন্নত চিকিৎসার সংস্পর্শে থাকায় অল্প হলেও তার অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। দেশে ফেরার প্রস্তুতি থাকলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা এবং ঢাকায় চিকুনগুনিয়া, ভাইরাস জ্বরের প্রাদুর্ভাব সর্বোপরি আবহাওয়া ভালো না থাকায় দেশে আনা হচ্ছে না।
স্ত্রীকে দেখার উদ্দেশে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেন সাংবাদিক শফিক রেহমান। লন্ডনে এই দম্পত্তির একমাত্র সন্তান সুমিত রেহমান স্ত্রী-সন্তানসহ বসবাস করছেন। তালেয়া রেহমান ছেলের বাসায় থেকে, হাসপাতালে অবস্থান করে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।
২০১৬ সালের অক্টোবরে লন্ডনে পরীক্ষায় ডেমোক্রেসি ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক তালেয়া রেহমানের রক্তে লিউকোমিয়ার লক্ষণ পাওয়া যায়। এরপর তিনি লন্ডনের ডাক্তার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম এবং ইউনাইটেড হসপিটালে আরও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আরও নিশ্চিত হন লিউকোমিয়ার উপস্থিতি সম্পর্কে।
তালেয়া রেহমান ১৯৫৫-তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকাকালে ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৭১-এ তিনি লন্ডনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্দোলন করেন। তিনি লন্ডনে স্টেপনি গ্রিন স্কুলের ডেপুটি হেড ও লন্ডনের স্কুল শিক্ষা কর্তৃপক্ষের উপদেষ্টা পদে কাজ করেন। তিনি লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকার স্কুলগুলোয় প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা দিবস উদযাপনের নিয়ম চালু করেন। সেখানে ৫০০টি বাংলা বইয়ের একটি গ্রন্থপঞ্জি প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে ফিরে এসে তিনি ডেমোক্র্যাসিওয়াচ নামক একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেশে-বিদেশে বহু নির্বাচন মনিটরিংয়ের কাজ করেন। নতুন লেখকদের উৎসাহিত করতে ‘লেখালেখি’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। লন্ডনে তিনি বিবিসিতে বিভিন্ন পদে প্রায় ৩০ বছর কাজ করেন। এছাড়া বহু ভাষাভিত্তিক স্পেকট্রাম রেডিওর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন তিনি।
এই দম্পত্তির বিয়ের ৬০ বছর পূর্তি হয় গত ১৮ জানুয়ারি। কিন্তু সে সময় সরকারের কাছে পাসপোর্ট জমা থাকায় শফিক রেহমান তার স্ত্রীর সাথে লন্ডনে যেতে পারেননি। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ