কক্সবাজারে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা
ফরিদুল মোস্তফা খান, কক্সবাজার : চলতি বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজার শহরের পর্যটন এলাকায় পাহাড় ধসের আশংকা করা হচ্ছে। শহরে পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধ বসতি স্থাপনের সুবিধার্থে পাহাড় কাটা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব কাটা পাহাড়ের নিচে হাজার হাজার বসতি স্থাপন করে বসবাস শুরু করেছে অবৈধ বসবাসকারীরা।
যার ফলে প্রতি বৎসর বর্ষা মৌসুমে কোন না কোন পাহাড় ধসের দুর্ঘটনায় প্রাণহানীর ঘটনা ঘটছে। দীর্ঘ তাপদাহের পর বৃষ্টি শুরু হলে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে যায়। তাই এসময় পাহাড় ধসে পড়ার আশংকা থাকে বেশি। এতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে কক্সবাজার শহরের আলীর জাহাল সাইফুল ক্লাবের সামনে কবরস্থান পাহাড় কেটে অবৈধভাবে জবর দখলপূর্বক গড়ে উঠা জনৈক জোয়ারিয়া নালার এক জঙ্গিনেতার মালিকানাধীন অবৈধ ভাড়াবাসা।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক পাহাড়ে অবস্থানরত মানুষদের মাইকিং করে অবগত করানো হইলেও তেমন একটা ফল পাওয়া যাচ্ছে না মনে করছেন জেলার সচেতন মহল। সচেতন মহলের দাবি, শহরের ঘোনার পাড়া, বৈদ্যঘোনা, পাহাড়তলী, লাইটহাউজ পাড়া, সাহিত্যিকাপল্লী, মোহাজের পাড়া, বাদশাঘোনা, কলাতলী, বিজিবি ক্যাম্প এলাকা সবার্ধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রতি বৎসর হালকা ও মাঝারি ধরনের কিংবা ভারী বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। আর এসব ঘটনায় প্রাণহানী ঘটছে প্রতিনিয়ত। কক্সবাজারে নিম্নচাপে ভারী বর্ষণের সময় সতর্কতা সংকেত থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কর্তৃক তা মাইকিং করা জানিয়ে দেয়া হয়।
জানা গেছে, পাহাড়ে নিচে অবৈধ জনবসতি স্থাপনা নির্মাণ করে অবস্থান করার কারণে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক আবহাওয়া বার্তার গুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজার রাডার স্টেশনের পশ্চিমাংশের ভূমি হঠাৎ ধসে পড়লে দু’টি পরিবারের শাহ আলম (৪৫), তার স্ত্রী রোকেয়া আক্তার (৩৩), তার ভাতিজি রিনা আক্তার (১৬) এবং পাশের পরিবারের জুনু বেগম (২৮), তার মেয়ে নীহা মনি (৭) সহ ৫ জনের প্রাণহানী হয়।
এতে আহত অবস্থায় উদ্ধারও করা হয় কয়েকজনকে। গত বৎসরের ১ সেপ্টেম্বর ঝিলংজার মুহুরী পাড়া এলাকার আবু তাহের নবম শ্রেণী পড়–য়া কন্যা ফারজানা আকতার পাহাড় ধসে প্রাণ হারান। এছাড়াও গত কয়েক বৎসর আগে অর্থাৎ ২০১০ সালের ১৫ জুন হিমছড়ি এলাকায় সেনা ক্যাম্পে ৬ সেনা সদস্য নিহত হন পাহাড় ধসে। একই সময়ে টেকনাফ, রামু, কক্সবাজার শহরসহ অর্ধ শতাধিক নিহত হন পাহাড় ধসে।
প্রতি বৎসর বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর পরই প্রবল বর্ষণে কিংবা মাঝারি বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসে নিহত হওয়ার আশংকা বেড়ে চলেছে।
লাইটহাউস পাড়া সরওয়ার আলম বলেন, ‘পাহাড় ধসে মৃত্যু এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত এক বৎসর পূর্বে রাডার স্টেশনের পশ্চিম পাশের পাহাড় ধসে ৫ জন নিহতসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও অবৈধ বাসস্থান গড়ে বসবাস শুরু করা হচ্ছে পাহাড়ের নিচে।
সম্প্রতি এক সেমিনারে কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘কক্সবাজার জেলায় বর্তমানে পাহাড়ে ৫ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করছে। প্রতিদিন পাহাড় কেটে নতুন বসতি তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মোট বনভূমির ৩০ শতাংশের বেশি বেদখল হয়ে গেছে। পাহাড়ে বসতি গেড়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা।’
জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার উত্তর দক্ষিণ বিভাগ, চট্টগ্রাম উপকূলীয় বনবিভাগ ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার জেলায় পাহাড় ও বনভূমির মোট পরিমাণ ৮৯ হাজার ১৬২ হেক্টর। তার মধ্যে বেদখল হয়ে গেছে ২৩ হাজার ৫৪ হেক্টর পাহাড়ি জমি। চট্টগ্রাম উপকূলীয় বনবিভাগের আওতায় মহেশখালী দ্বীপে মোট বনভূমির পরিমাণ ৭ হাজার ৩১৪ হেক্টর, এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ২ হাজার ৪ হেক্টর বেদখলে। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগে মোট ৩২ হাজার ৮১৬ হেক্টরের পাহাড়ির ভূমির মধ্যে জবরদখল হয়ে গেছে ৫ হাজার ৩৪১ হেক্টর। কক্সবাজার দক্ষিন বন বিভাগে ৪৪ হাজার ১৭৪ হেক্টরের মধ্যে বেদখলে চলে গেছে ১২ হাজার ৪৫৫ হেক্টর পাহাড়ি বনভূমি।