ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে জনমত গড়ে তুলবে আ.লীগ
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকলেও এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ দেশের প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রস্তুতিতে মুখর। তবে বরাবরের মতো এবারও আলোচনা জোরালো হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে বেশি তৎপর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মুখোমুখি দুই দলই। চাইছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন। বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা ‘সহায়ক সরকার’-এর দাবিতে নির্বাচন বর্জনের হুমকি দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন সরকার অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না বলে দলটি অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন মহলে। তারা এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরিরও চেষ্টা করছে বলে বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির এই নির্বাচনকালীন রূপরেখা নিয়ে কিছুটা চাপে রয়েছে সরকার। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা সহায়ক সরকার নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করলেও আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় চাপ এড়াতে আওয়ামী লীগ কৌশলী ভূমিকায় রয়েছে।
আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনকালীন পদ্ধতি বার বার পরিবর্তন হলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় এবং গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত হয়Ñ এই বিষয়গুলো তুলে ধরে জনমত গঠন করতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। জনমত তৈরি করা হবে যেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হয়। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের কাছে তুলে ধরছেন প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী এবং শীর্ষ নেতারা। পাশাপাশি নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ করার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো চাপ দেওয়া হবে নাÑ এ বিষয়টিও স্পষ্ট করছেন আন্তর্জাতিক মহলকে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর একজন সদস্য বলেছেন, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ ব্যাপারে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরু হয়েছে। বিএনপি শুরুতে সহায়ক সরকারের দাবিতে যাদের পাশে পাবে বলে আশা করেছিল তাদের এখন অনেকেই সরে গেছে। এখন বিএনপি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দিয়ে চাপ তৈরির চেষ্টা করছে। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্য লবিয়িং চলছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা থেকে সরে এসেছে। তারা সবার অংশগ্রহণে অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।
জানা গেছে, গত ৮ জুলাই আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, এবারের নির্বাচন আগের মতো নয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসতে হবে। শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি চান তার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান। যেন পরবর্তীতে বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আর কোনো জটিলতা না হয়। সংবিধান অনুযায়ী যেন নির্বাচন হয়।
আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে হোকÑ এমনটা সরকারও চায়। দলের প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার তেমন নির্দেশও রয়েছে। একতরফা নির্বাচনের দুর্নাম ঘোঁচাতে এবার যেকোনো উপায়েই হোক বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সব ধরনের উদ্যোগও নেওয়া হবে। তবে নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে ন্যূনতম ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ কারণে আন্দোলনের পথ থেকে সরিয়ে নির্বাচনমুখী করতে বিশেষ কৌশল নেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে বিএনপিকে মনস্তাত্ত্বিক চাপে রাখার কৌশলও নিয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টির কৌশল অব্যাহত রাখা হয়েছে। নির্বাচনের পক্ষে জনমত গড়তে প্রতিদিনই বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এ নিয়ে বক্তব্য রাখছেন দলের মন্ত্রী ও নেতারা। বিশেষ করে দলের শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রীরা প্রায় প্রতিদিনই শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের দৃঢ় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ ব্যাপারে বলেন, আমি নিশ্চিত করে বলছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেবেন। তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির আগেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে এবং নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এখানে অন্য কোনো কিছু হওয়ার সুযোগ নেই।
দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনেই পরবর্তী নির্বাচন হবে। নির্বাচন কিন্তু সরকারের অধীনে হবে না। তখন রুটিন কাজ করবে যে সরকার, সেই সরকারের কোনো মেজর পলিসি ডিসিশনের ক্ষমতা থাকবে না। নির্বাচনকালীন যে সরকার থাকবে তারা নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবে। এছাড়া জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় পরিচালিত হবে। এর পাশাপাশি দলের নেতারা তাদের বক্তব্যে তুলে ধরছেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন ও জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের ফলে বিএনপির ক্ষতিকর দিকগুলো। এমনকি বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত প্রায় ২০ হাজার মামলা চাঙ্গা করার প্রস্তুতি চলছে। মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করা ও পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী