হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন ৫ আইনজীবী
এস এম নূর মোহাম্মদ : আদালত কক্ষে চিৎকার, নথি ছুঁড়ে ফেলা, বেঞ্চ কর্মকর্তাকে মারধর ও আদালতের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটানোর অভিযোগে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন পাঁচ আইনজীবী। গতকাল সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে হাজির হয়ে তারা ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন। পরে তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে এ বিষয়ে রায়ের জন্য আগামী ২০ জুলাই ধার্য করেন আদালত।
এর আগে ২ জুলাই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নূর ই আলম ও বিল্লাহ হোসেন লিজেন পাটোয়ারীকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন আদালত। এদিকে মাহমুদ (বি এম সুলতান মাহমুদ), মতি লাল বেপারী ও মোহাম্মদ আলী গতকাল ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। পরে আদালত তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। সোমবার আদালত বলেন, এ ধরনের ঘটনায় কোর্টের মর্যাদা থাকে না। এর আগে ২ জুলাই শুনানিকালে আদালত বলেন, মাঝে মধ্যে নিম্ন আদালতে এমনটি হয় বলে শুনেছি। কিন্তু আমার এখানে ২৫ বছরে কখনো দেখিনি।
এর আগে গত ১৯ জুন আদালতকক্ষে নথি ছুঁড়ে ফেলা ও বেঞ্চ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে মারধরের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওইদিন আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার রুলসহ পাঁচ আইনজীবীকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।
এদিকে পাঁচ আইনজীবীদের একজন বি এম সুলতান মাহমুদ বলেন, বেঞ্চ কর্মকর্তারা টাকা নিয়ে কজলিস্ট তৈরিতে অনিয়ম করে। একটি মামলায় একটি টেন্ডার নাম্বার থাকে। অথচ তারা একটি টেন্ডার নাম্বারে একাধিক মামলা দিয়ে দেয়। বিষয়টি লিখিতভাবে ১২ জুন রেজিস্ট্রার কার্যালয়কেও আমি জানাই। এরপর ঘটনার দিনও আমরা কয়েকজন আইনজীবী খাস কামড়ায় গিয়ে বিষয়টি জানাই। এছাড়া বেঞ্চ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিষয়টি ২০ জুন লিখিতভাবে প্রধান বিচারপতিকেও জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, বেঞ্চ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ আমাদের ক্ষমা চাওয়ানো হলো। এতে দুর্নীতিকে উস্কে দেওয়া হয় বলে মনে করেন তিনি। আদালতে পাঁচ আইনজীবীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন, এম বদরুদ্দোজা বাদল, আজহারুল্লাহ ভুইয়া ও ওয়াজি উল্লাহ।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের আইনজীবীরা দেয়, বেঞ্চ কর্মকর্তারা নেয়। এগুলো থেকে বের হওয়ার জন্য আলোচনা হচ্ছে। যারা নেয় তারা যেমন দোষী তেমনি যারা দেয় তারাও দোষী। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স থাকবে। তবে বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকা দরকার। এটা প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, কন্টেম্পট হলে আদালতে ক্ষমা চাওয়া হয়। এটা ছাড়া বিকল্প নেই। এটা সঠিক কাজই হয়েছে। বেঞ্চ কর্মকর্তারা যে দুর্নীতি করে সেটা আসলে একটা সিস্টেম হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আইনজীবী সমিতিতে আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি। সম্পাদনা : হুমায়ুন কবির খোকন