চীনের চোরাহামলায় ধ্বংস হয়েছে ভারতের সামরিক বিমান!
মাছুম বিল্লাহ : ভারতের সামরিক বিমান নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পেরিয়েছে। এখনও খোঁজ মেলেনি। যত সময় গড়াচ্ছে, ততই নিখোঁজের কারণ নিয়ে বাড়ছে জল্পনা। ভারতীয় বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী জরুরিভিত্তিতে তল্লাশি চালাচ্ছে। সন্ধানের তদারকিতে শনিবার চেন্নাইয়ে পৌঁছেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্কর। সংবাদ প্রতিদিন
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানাগেছে, নিখোঁজ বিমানটি উদ্ধারের জন্য নামানো হয়েছে চারটি নজরদারি বিমান, এক ডজন জাহাজ ও একটি সাবমেরিন। গত কয়েক বছর এত বড় মাপের তল্লাশি অভিযান ভারতে অন্তত চালানো হয়নি বলেই মনে করছেন ভারতের বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার চেন্নাই থেকে ২৮০ কিলোমিটার পূর্বে বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ হয়ে যায় এএন-৩২ বিমান। কারণ এখনও অজানা। বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরÑ এ এলাকায় কি কোনো দুর্জ্ঞেয়, রহস্যময় অঞ্চল তৈরি হলো? আচমকাই? অনেকটা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মতো? যাকে অনেকে ‘ডেভিলস ট্রায়াঙ্গেলও’ বলে থাকেন। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাংশের একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নামে পরিচিত। বহু বিমান ও জাহাজ ওই অঞ্চলে রহস্যময়ভাবে উধাও হয়ে গেছে। আজও যার সন্ধান মেলেনি। কিন্তু এই ধারণার পিছনে কোনো বিজ্ঞানসম্মত কারণ রয়েছে বলে আমেরিকা মনে করে না। এমনকী, ওই ধরনের কোনো রহস্যময় এলাকা আছে বলেই মানে না তারা। তাদের দাবি, ওই এলাকা দিয়ে অনেক পণ্যবাহী জাহাজ, প্রমোদ তরণী যায়। বিশেষত আমেরিকা, ইউরোপ ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে যাতায়াত করতে হলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নামে চিহ্নিত এলাকা দিয়েই যেতে হয়। বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজবও বলে মনে করে আমেরিকা।
এগারো মাসের ব্যবধানে বঙ্গোপসাগর এলাকায় ভারতের দুটি সরকারি বিমানের দুর্ঘটনা ও নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পিছনে অনেকেই চীনের হাত দেখতে পাচ্ছেন। সীমান্ত নিয়ে বহুদিন ধরেই চীনের সঙ্গে ভারতের বিরোধ রয়েছে। সম্প্রতি তা চরম আকার নিয়েছে দক্ষিণ চীন সাগরে ভারতের এই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আগ্রাসন নিয়ে। দ্য হেগ-এর আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ের পরও এ এলাকার দখলদারী ছাড়তে রাজি নয় চীন। মাঝেমধ্যেই তাদের নৌবাহিনী বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় জলসীমায় টহলদারি চালায় বলে অভিযোগ।
পাশাপাশি, দক্ষিণ চীন সাগরের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে মালাক্কা প্রণালী। ওই অঞ্চলে ভারতের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। সাধারণত এএন-৩২ বিমানে করেই ওই সেনাঘাঁটিতে সামরিক উপকরণ ও সেনা জওয়ানদের পৌঁছে দেওয়া হয়। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে সাম্প্রতিক গ-গোলের সময় আমেরিকা ও জাপানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ওই অঞ্চলে যৌথ নৌমহড়ায় ভারত অংশ নিয়েছিল। যা নিয়ে চীন তার ক্ষোভ গোপন করেনি। তাই কোনো কোনো মহল মনে করছে, চীনা বিমানবিধবংসী অস্ত্রের আঘাতে এএন-৩২ বিমানটির সলিল সমাধি হয়ে থাকতে পারে।
আরও একটি আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বছরের শুরুতেই পাঠানকোট বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে জঙ্গিহামলার পর অনেকেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন, ভিতর থেকে সাহায্য না পেলে তাদের পক্ষে ঘাঁটির বিস্তারিত তথ্য পাওয়া সম্ভব ছিল না। ভূত লুকিয়ে আছে শর্ষের মধ্যেই। ওই হামলার আগে-পরে বিমানবাহিনীর কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক কর্মীকে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর এজেন্ট হিসাবে গ্রেফতার করা হয়। চেন্নাই থেকে বিমানটি ওড়ার আগে তেমন কোনো ‘বিভীষণ’ যে কোনো কলকাঠি নাড়েনি, তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়?
দুর্ঘটনা, অন্তর্ঘাত নাকি বিদেশি আক্রমণÑ সে প্রশ্নই এখন বড় হয়ে উঠছে। বিমানবাহিনীর বিমান এমনিতে খুব পোক্ত প্রকৃতির হয়। পরিবেশের প্রতিকুলতা অতিক্রম করতে সক্ষম এগুলো। তা সত্ত্বেও এতবড় দুর্ঘটনার কবলে কী করে পড়ল এ বিমান তা নিয়ে যেন ধোঁয়াশা থাকছে, তেমনই ধন্দ বিদেশি আক্রমণ ও অন্তর্ঘাত নিয়েও। মনে করা হচ্ছে, হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ নথি ছিল ওই বিমানে। উচ্চ পদাধিকারী কোনো সেনা কর্তা থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সব থেকে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে যাওয়া। কেননা বিমানে ইমার্জেন্সি বেকন লোকেটর রয়েছে। ভেঙে পড়লে তা উদ্ধারকারীদের সংকেত দিত। কিন্তু এক্ষেত্রে তা পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে বিমান নিখোঁজ বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে।