সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখবেন কিভাবে?
জুলফিয়া ইসলাম
শৈশব থেকেই প্রতিটি ব্যক্তি স্বীয় পরিবার এবং পরিচিতদের নিকট থেকে স্নেহ-ভালোবাসা পাবার ইচ্ছাপোষণ করে থাকে। এই স্নেহ-ভালোবাসাই তাকে প্রতিটি কাজে প্রেরণা দেয়। এর অভাবে সে কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়ে। শৈশবকালেই একজন ব্যক্তি সবচাইতে বেশি পরনির্ভরশীল হয়ে থাকে।
শিশু মাত্রই যে একজন ব্যক্তি, এটি আমাদের সবার বোঝা উচিত। প্রতিটি শিশুই একজন ব্যক্তি হিসেবে অপরের নিকট থেকে মর্যাদা পেতে চায়। শিশু যখন তার উপযুক্ত মর্যাদা না পায় তখনই তার উপযুক্ত বিকাশে ব্যাঘাত ঘটে। তাই শিশুর আত্ম-মর্যাদাবোধের যাতে বিকাশ সাধিত হয় সেজন্য আমাদের সকলেরই সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
প্রতিটি মানুষই তার জীবনে স্বাধীনতা লাভ করতে চায়। শিশু মনের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য কিছুটা হলেও স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। শিশু যদি তার সীমিত ক্ষেত্রের মধ্যে স্বাধীনভাবে কাজ করবার ক্ষমতা না পায়, তবে তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটে না। প্রতিটি শিশু তার ক্ষমতা অনুযায়ী কিছু কিছু দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে।
অতি শৈশব থেকে প্রতিটি শিশুই নিরাপত্তাবোধের প্রয়োজন বোধ করে থাকে। কারণ, শিশুর মনে যদি নিরাপত্তাবোধ না থাকে এবং সে যদি সব সময়ে বিপদের আশংকা করে, তবে কোনো কাজেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি কাজেই শিশু অমনোযোগিতার পরিচয় দেবে। সেজন্য শিশু মনে সব সময় নিরাপত্তাবোধ দান করা উচিত।
মানুষ আত্ম-সম্মানবোধের অধিকারী। শিশু যেহেতু একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ সেহেতু সেও আত্মসম্মান রক্ষা করে চলতে চায়। একটি শিশু যদি সব সময় নিজেকে অক্ষম কিংবা অযোগ্য মনে করে থাকে, তবে তার আত্ম-সম্মানবোধের পরিতৃপ্তি হয় না। সেই সঙ্গে ব্যক্তিত্বের বিকাশও ঘটে না।
শিশু তার প্রতিটি কাজের পেছনেই সমর্থন আশা করে থাকে। সে যদি সবসময়ই নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে করে থাকে, তবে তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হবে। প্রতিটি ঘরে কিংবা বিদ্যালয়ে শিশুর সঙ্গে এমন ব্যবহার করা উচিত যাতে শিশু বুঝতে পারে যে, সে একজন মর্যাদপূর্ণ ব্যক্তি এবং সবার স্নেহ-ভালোবাসার পাত্র। এজন্য শিশুর কোনো কাজের বিচার করার সময় তার বিরুদ্ধে সমালোচনা করা ঠিক নয়। এতে তার আত্মসম্মানবোধ ক্ষুণœ হয়। সেজন্য শিশু যাতে পরনির্ভরশীল না হয়ে ওঠে সেদিকে প্রতিটি মা-বাবার যতœশীল হওয়া প্রয়োজন। শিশুর প্রতিটি কার্যাবলি সহানুভূতির সঙ্গে বিচার করা প্রয়োজন। সম্ভব হলে তাকে সমর্থন জানানো দরকার। তাবেই তার আত্ম-সম্মানবোধ পরিতৃপ্ত হবে।
এছাড়া শিশুর বয়সের দিকে খেয়াল রেখে তাকে আস্তে আস্তে সাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হবে। এক একটি কাজে শিশু সফলতা লাভ করার পর অন্য একটি কাজে আগ্রহ বেড়ে যাবে। তখন শিশুটি আবিষ্কার করবে যে সে কারও সাহায্য ছাড়াই চলতে পারছে। সে যখন দেখতে পাবে অন্য কোনো ব্যক্তি তার কার্যাবলি আগ্রহ নিয়ে দেখছে, তার কাজের নিন্দা বা প্রশংসা করছে, তখন সে ধীরে ধীরে বাইরের জগতের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে চলতে চেষ্টা করে। সেই সঙ্গে অপরের আরও প্রশংসা লাভ এবং আরও সাফল্য পেতে চেষ্টা করে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, আমরা যদি শিশুর প্রতি মনোযোগী হতে পারি, তবে শিশুও নিজের তথা তার পরিবারের প্রতি যতœশীল ও মনোযোগী হয়ে গড়ে উঠবে। এজন্য মা-বাবাসহ গৃহের প্রতিটি সদস্যের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।
লেখক : কথাসাহিত্যিক / সম্পাদনা : জব্বার হোসেন