এখনই সময় বৃক্ষরোপণের
সঞ্জয় দেবনাথ
একটি দেশের মোট ভূখ-ের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি বা গাছপালা থাকা উচিত বলে পরিবেশবিদরা বলেন। কিন্তু আমাদের দেশে তা নেই। টেনেটুনে সর্বোচ্চ ১৭ ভাগ আছে। এটা জানা বিষয়। অবশ্যই ভয়ংকর ব্যাপার। যদিও প্রতিবছর অনেক আয়োজন করে বৃক্ষরোপণ করা হয়। কিন্তু ব্যবধান সন্তোষজনক নয়। আবার যে বৃক্ষরোপণ করা হয়, নানা কারণে তার অনেকগুলোই মারা যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপড়ে যায় অনেক গাছ। নানা প্রয়োজনে আমরা কেটে ফেলি গাছ। আবার দেশে বাড়ি ও কলকারখানা বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবে যেখানে কোনো স্থাপনা হচ্ছে সেখানে গাছ নিধন হয়। জ্যামিতিকহারে বাড়ছে ইটভাটার সংখ্যা। ইটভাটায় ইট পোড়াতে কয়লার ব্যবহারের কথা আইনে উল্লেখ থাকলেও কয়লায় খরচ বেশি হওয়ার কারণে ইটভাটার মালিকরা বড় গাছের টুকরো ইট পোড়াতে ব্যবহার করেন। তাই এখানে গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কমে যাচ্ছে গাছের সংখ্যা। কারণ যাই হোক, ফলাফল যা আসছে আর তা হলোÑ গাছ কমছে। তবে কোনো কোনো এলাকায় গাছের সংখ্যা পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। যেমন রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, রাজশাহী। সবকিছুর পরও সার্বিকভাবে গাছের সংখ্যা কম। অর্থাৎ এক এলাকায় পর্যাপ্ত গাছ থাকলেও অন্য এলাকায় খুবই কম। বিশেষ করে বিভাগীয় শহরে গাছের দেখা মেলা ভার। যতগুলো পাখি আছে ততগুলো গাছ আছে কিনা সন্দেহ! যা পরিবেশের জন্য রীতিমতো হুমকির বিষয়। সবাই জেনে বুঝেও তেমন একটা গা করছি না।
শুধু সরকার সামাজিক বনায়ন করেই সব পূর্ণতা পূরণ করতে পারবে এমনটা ভাবা বোকামি হবে। আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। নিজেদের সুখ, স্বস্তি ও শান্তির জন্য অবশ্যই বেশি বেশি গাছ লাগানো উচিত। পিচঢালা রাস্তার চারপাশে সবুজ সবুজ গাছ, ভাবতেই অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করে। উন্নত বিশ্বে বিষণœতায় ভোগা মানুষকে মনোচিকিৎসকরা সবুজের সান্নিধ্যে ঘুরতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বৃক্ষরোপণে আমাদের আরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। যদি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫০টা গাছের চারা রোপণ করা হয়, তবে ৫০০০০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ২৫০০০০০ গাছের চারা রোপিত হবে। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। তারা একটু উদ্যোগ নিলেই কাজটা সম্ভব। এতে তেমন খরচও হবে না। প্রতিটি গাছের চারা ৫০ টাকা হলে ৫০টা গাছের চারার দাম হবে ২৫০০ টাকা। এটা এমন বড় কোনো অঙ্ক নয়। একজন শুরু করলে অন্যরাও উৎসাহিত হবে। চারদিকে শুরু হবে গাছ লাগানোর উৎসব। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নিজেদের সুখের জন্য গাছ লাগানোর উৎসব। আসুন, গাছ লাগাই। আর কণ্ঠে কণ্ঠে গাই
‘এই দেশেতে জন্ম নিয়ে প্রাণ যে আমার ভরা
সোনালি আশে ফুল ফসলে হাসে চন্দ্র তারা।’
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন