শিক্ষার নতুন ভুবনে যারা
শিক্ষার নতুন ভূবনে জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করার আশায় সদ্য এইচএসসি পাস করা ছাত্র-ছাত্রীরা। যাদের সবারই একটি স্বপ্ন, মানুষের মতো মানুষ হওয়া। আর স্বপ্ন নিয়েই তো মানুষ বেঁচে থাকে। স্বপ্ন দেখা সহজ, কিন্তু পূরণ হওয়া বা সে স্বপ্ন আশা ও মনের মতো বাস্তবায়ন করা কম সহজ নয়। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীর অধিকার। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র সে অধিকার বাস্তবায়ন করতে পারছে কি?
এবছর উচ্চ মাধ্যমিকে খাতার সঠিক মূল্যায়নের ফলে তুলনামূলকভাবে পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তি কমে গেলেও প্রকৃত মেধাবীরা তাদের শিক্ষার আলোর বিচ্ছুরণ ঠিকই ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। এটা ছিল সরকারের তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী সাহসী পদক্ষেপ, দেরিতে হলেও সেটা বুঝতে পারার জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ।
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রটি অনেকাংশেই কণ্টকাকীর্ণ। একদিকে বেসরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের দাপট; অন্যদিকে সরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজে আসন স্বল্পতা ও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কোনো শিক্ষার্থী ভালো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে সে কি উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে? সেটা হওয়া উচিত নয়। বেসরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো লাগামহীনভাবে চলছে। গলাকাটা ফি আদায়, টাকার বিনিময়ে সনদ প্রদানের কথাও শোনা যায়। এসব নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। সর্বোপরি দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সব শিক্ষার্থীর জন্য সমান, সহজ ও অবাধ সুবিধার ভিত্তিতে উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত ও উৎসাহ সৃষ্টি করা হলে দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে।
এইচএসসির পরই শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে যায়। ছাত্র-ছাত্রীদের ৭-৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম নিতে হয়। এতে অর্থ ব্যায়, মানুষিক কষ্ট, রাতে থাকা ও নানাবিধ ভোগান্তি তো আছেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সমন্বিত পরীক্ষার দাবি দীর্ঘদিনের। বর্তমানে শুধু মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি প্রচলিত আছে। গত বছর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সমন্বিত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেয়নি। যদি তা করা না যায়, তাহলে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম চালু করা যেতে পারে। যেমনÑ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মিলে একটি পরীক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মিলে আরেকটি পরীক্ষা, বাকি সমস্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ৩টি পরীক্ষা নেয়া যায়। তাহলে, সমন্বিত পরীক্ষাও হলো, আবার, ৩টির কোনও একটিতে খারাপ করলেও বাকি দুটো বিকল্প থাকবে।
বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কম নয়। এ ক্ষেত্রে গরিব অভিভাবকদের অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। অর্থের অভাবে বাধ্য হয়ে অনেকেই লেখাপড়া বাদ দেয়। অনেক গরিব শিক্ষার্থী মনে করছে তাদের পড়ালেখা এখানে শেষ। কারণ তাদের মা-বাবার পক্ষে শিক্ষার ভার বহন করা সম্ভব নয়। ভর্তি ফি, সেশন ফি, কোর্সের টাকা, খাতা-কলম, টিউশন ফিসহ অন্যান্য ফি আকাশচুম্বী হওয়ায় তা জোগাড় করতে বেশির ভাগ অভিভাবক অক্ষম। এতে অনেকটা অনিচ্ছাকৃত হলেও মেধাবী শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৃত্তির হার বাড়ানো, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ন্যূনতম জিপিএর ক্ষেত্রে ছাড়, ফরম তোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফি কমানোর সাথে গ্রামের কলেজগুলোতে অনার্স কোর্স চালুর ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। এর সাথে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিটি উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে পরিমাণ আসন আছে, প্রতিবছর তার চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষার্থী ভালো ফল করে বেরিয়ে আসছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থীই পছন্দের প্রতিষ্ঠান কিংবা বিষয়ে ভর্তি হতে পারে না। অনেককে যেতে হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেককে ভর্তি হতে হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজে। সর্বোচ্চসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়। এ জন্য ভর্তি নীতিমালা শিথিল, যুগোপযোগী ভর্তির প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং উত্তরপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়ন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে আসন বৃদ্ধি করা জরুরি।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক
সম্পাদনা: আশিক রহমান