পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা দ-নীয় ফৌজদারি অপরাধ
ইকতেদার আহমেদ
পৃথিবীর সকল ধর্মমতই একজন মানুষকে অপর মানুষের প্রতি যেরূপ সদয় হতে বলেছে, অনুরূপ পশুর প্রতিও সদয় হতে বলেছে। পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা ধর্মমতসহ নীতি, নৈতিকতা এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুমোদন করে না।
দেশে গ্রামে এমন কোনো বাড়ি নেই, যেখানে দুচারটি কুকুর বা বিড়াল নেই। এগুলো সংশ্লিষ্ট বাড়ির পোষা প্রাণী হিসেবে লালিতপালিত। সংশ্লিষ্ট বাড়ির লোকজন খাওয়া-দাওয়া পরবর্তী যা উচ্ছিষ্ট থাকে তা তারা খেয়ে জীবনধারণ করে। শহরাঞ্চলেও অনেকে পোষা প্রাণী হিসেবে নিজ বাড়িতে কুকুর বা বিড়াল লালনপালন করে। তবে এগুলোর ক্ষেত্রে কেউ কেউ বাড়ির উচ্ছিষ্ট খাবার দেয়, আবার কেউ কেউ এদের জন্য পৃথক খাবারের ব্যবস্থা করে যা ক্ষেত্র বিশেষে টিনজাত হয়ে থাকে।
গ্রামাঞ্চলে অজ্ঞতার কারণে অনেক সময় দেখা যায়, শিশু ও যুবকরা কুকুর ও বিড়ালের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে থাকে। এ ধরনের নিষ্ঠুর আচরণ যেমন কুকুর ও বিড়ালকে লাঠি দিয়ে পেটানো, এদের প্রতি গরম পানি নিক্ষেপ, ঢিল নিক্ষেপ, খাবারের সঙ্গে কীটনাশক প্রয়োগে এদের মৃত্যু ঘটানো প্রভৃতি অমানসিক ও অমানবিক। কুকুর ও বিড়ালের বিচরণ পাখির ন্যায় অবাধ হওয়ায় এরা এক স্থান হতে অপর স্থানে বা এক বাড়ি হতে অপর বাড়ি যায়। শহরাঞ্চলেও দেখা যায়, কেউ একক বাড়ির মালিক না হলে তার পক্ষে কুকুর পালা দুরূহ। কুকুর এর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে শহরাঞ্চলে বিত্তবান ছাড়া অপর কারও পক্ষে এর লালনপালন সম্ভব হয় না।
পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা বিষয়ে দেশে যে আইনটি কার্যকর রয়েছে তা হলোÑ পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা আইন। এ আইনটিতে উল্লেখ রয়েছে, কোনো ব্যক্তিকর্তৃক পশুকে দিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম করানো, পশুকে নিষ্ঠুর ও নিষ্প্রয়োজনে প্রহার, অন্য কোনোভাবে পশুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ, পশুকে এমনভাবে বহন যাতে এটি অনাবশ্যক ব্যথা ও দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়, নিজ হেফাজতে বিক্রয়ের জন্য রাখা পশুকে অভুক্ত ও তৃষ্ণার্ত রাখার কারণে এগুলোকে যন্ত্রণার সম্মুখীন প্রভৃতি অপরাধের অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের অপরাধের জন্য একজন ব্যক্তির কারাদ- ও অর্থদ- অথবা উভয় দ- দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ অপরাধগুলো আমলযোগ্য বিধায় এগুলো সংগঠনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় আটক করতে পারে।
শহরাঞ্চলের অনেক ফ্ল্যাট মালিক সমিতি তাদের গঠনতন্ত্রে পোষা প্রাণী লালনপালনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। এ ধরনের বিধিনিষেধ দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান স্বীকৃত একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। সুতরাং কোনো সমিতির গঠনতন্ত্রে এ ধরনের বিধান থাকলে তা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধায় বেআইনি ও অকার্যকর। অনেক ফ্ল্যাট মালিক সমিতি বিড়ালকে উপদ্রব হিসেবে বিবেচনায় তাদের অধীনস্থ ব্যক্তি দ্বারা এগুলোকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেয় অথবা পিটিয়ে জখম করে বস্তায় ভরে অন্যত্র ফেলে দেয়। একজন ধার্মিক ও বিবেকবান ব্যক্তির পক্ষে এ ধরনের কাজ সম্ভব না হলেও কিছুসংখ্যক বাকধার্মিক ও তথাকথিত বিবেকবান সংবিধান ও দেশের প্রচলিত আইনের উপেক্ষায় পশুর প্রতি এ ধরনের অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ করে চলেছেন।
লেখক : সাবেক জজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন