স্টার জলসা, জি বাংলা আসক্তি এবং মুক্তির উপায়
রবিউল আলম
স্টার প্লাস, স্টার জলসা, জি বাংলা চ্যানেল নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার শেষ নেই। অবশেষে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে মীমাংসার জন্য। কেন স্টার প্লাস, স্টার জলসা, জি বাংলা চ্যানেলগুলো মানুষ দেখে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজ করতে আমাকেও চ্যানেলগুলো দেখতে হয়েছে। নাটকের মাঝে নাটক খুঁজে পাবেন, অপসংস্কৃতি পাবেন, রঙের চাকচিক্য, বৌ-শাশুড়ির ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, পরকীয়া প্রেম, যৌবনের উন্মাদনা, অলৌকিক কাহিনী, রূপকথা, কূটনৈতিক ষড়যন্ত্রের খেলা, বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যাবে না। মানুষ স্বপ্ন দেখতে চায়, স্টার প্লাস, স্টার জলসা, জি বাংলা চ্যানেলগুলো সেই স্বপ্ন দেখায়। ভাষাগত মিল থাকায় মানুষ সহজে গ্রহণ করে নিচ্ছে চ্যানেলগুলো। শত উদাহরণের প্রয়োজন নেই, মেঘলা নাটকের নায়ক জেলখানা থেকে একজন হাওয়ালদার নিয়ে নায়িকাকে উদ্ধার করে আবার জেলখানায় ফিরে গেলেন, বিষয়টি আদালতে উঠালে আদালত নায়কের বক্তব্য আমলে নিয়ে আসামিকে খালাস দিয়ে দেয়।
নায়িকা যত সত্য কথা বলছে সোনার হার বিক্রি করে এসি কিনেছে, নায়ক প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস করবে না। অবশেষে পুলিশ ও ব্যাংক ম্যানেজারকে বলতে হবে টাকার নম্বর দেখে কে এই টাকা তুলেছিল। কুসুমদোলা নাটকে বড় ভাইয়ের বৌয়ের সঙ্গে ছোট ভাইয়ের প্রেম আগেই ছিল। বিয়ের পরেও চালিয়ে যাচ্ছে, এই পৃথিবীতে এমন ঘটনা অলৌকিক নয়। আমাদের সমাজে অন্যের প্রেম, কুৎসা, বদনাম করে অভ্যস্ত, নিজে সতর্ক হওয়ার পরিবর্তে। এ রকম হাজারো কাহিনীর নাটক সময় কাটাতে, রং চং-এর আবর্তে, অবাস্তব স্বপ্ন দেখতে, নিজের স্বামী বা স্ত্রীকে নায়ক-নায়িকার মতো দেখতে। আমার অফিসে বসলে দেখা যায় জি বাংলার দুর্গা নাটক দেখা হচ্ছে, অনেক মুরুব্বি টিভি বন্ধ করতে চায় না। প্রশ্ন করলে বলেন, একটু অপেক্ষা করুন, জানি না কি রাজনীতি শেখায় দুর্গা নাটকে। মনে মনে ভাবি, হায়রে রাজনীতি তোমার কি হবে। তবে যারা এই অপসংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, তারা আরও ভয়াবহ অপসংস্কৃতিতে জড়িয়ে ছিল।
বাংলাদেশের জনজীবনে ধর্মীয় নাটক, কালজয়ী উপন্যাস, বাংলা সাহিত্যের গল্প, রাজনৈতিক উপহাস নিয়ে নাটক, সার্কাস, ইত্যাদি রাত-বিরাতে গানের অনুষ্ঠান, বিতর্কসহ অনুষ্ঠানগুলো আমাদের চাইতে ভারতে অনেক জনপ্রিয়। আমরা তো ভারতকে ভয় পাই না, প্রতিযোগিতা করি। ভারতীয়রা আমাদের সংস্কৃতিকে রীতিমত ভয় পেয়ে চ্যানেলগুলো তাদের দেশে প্রবেশ করতে দেয়নি। যদি বাঙালি আমাদের সংস্কৃতি লেখা, গল্প, উপন্যাস গ্রহণ না করত তবে সীমানা পেরিয়ে হুমায়ূন আহমেদ কি এত বিখ্যাত হতে পারত? কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলামকে কি কোনো সীমানায় আটকানো যায়?
লালনের গান কি টিভি চ্যানেলগুলো বন্ধ করে শোনা থেকে বিরত রাখা যাবে। যে বাংলা ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে, যে বাংলাদেশের রাজনীতির মহাপুরুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, ভাষার জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি জীবন দিতে পারে, তাদের কি আর জি বাংলা নাটকের অপরাজনীতি দেখতে হয়, রাজনীতি শিখতে হয়? তবে আমি মনে করি প্রতিরোধ নয়, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা ভারতীয় অপসংস্কৃতি মোকাবিলা করতে চাই। আলোচনার মাধ্যমে আমাদের দেশের চ্যানেলগুলো ভারতে প্রচারের অনুমতি আদায় করে দেখাতে হবে বাঙালি কোন সংস্কৃতি দেখতে চায়।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান