বাংলাদেশে গৃহনির্মাণ শিল্পের অপার সম্ভাবনা
এমএ মতিন এমবিএ
১৯৯১ সালের দিক থেকে গৃহনির্মাণ শিল্পের প্রসার শুরু হয়। সর্ব প্রথম বাংলাদেশে গৃহ নিমার্ণ ব্যবসা শুরু করেন ইস্পাহানী লিমিটেড। তারা স্বল্প আকারে শুরু করে। তার পরবর্তীতে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড প্রফেশনালী এই সেক্টরে কাজ শুরু করে। ইস্টার্ন হাউজিং দীর্ঘ সময় ধরে মধ্যম আয়ের ক্রেতাদের টার্গেট করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা বিশেষ করে ঢাকা শহরের আশেপাশে আবাসিক প্রকল্প এবং এপার্টমেন্ট তৈরি করেছে। কমার্শিয়াল বিল্ডিং তৈরি করে মানুষের আপাতত চাহিদা পূরণ করেছেন। তাদের ব্যবসা দেখে যারা বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত ছিলেন, তারাও তখন এই ব্যবসায় আসেন। তারপর থেকেই এই ব্যবসাটায় আরও অনেক ডেভেলপার আকর্ষিত হয়ে আসতে থাকেন। যেহেতু এখানে চাহিদা অনেক বেশি। কারণ, আমরা জানি ঢাকা শহরের মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা হচ্ছে ‘টু বাই এন এপার্টমের্ন্ট অর এ প্লট’। এদিকে মূলত একজন মানুষের একটা টার্গেট থাকে যে, কোনোমতে একটা প্লট কেনা বা মাথা গোজার ঠাই ব্যবস্থা করা। ঢাকা শহরে মাথা গোজার জন্য প্রতিটা মানুষের কমপক্ষে একটা এপার্টমেন্ট বা প্লট চাই। যেহেতু ঢাকা সিটিতে প্রায় দেড় কোটি, মতান্তরে প্রায় দুই কোটি লোক বাস করে, সেক্ষেত্রে এই সেক্টরে এখন কমপক্ষে ৫ লক্ষের মতো এপার্টমেন্টের চাহিদা আছে। এটাকে র্টাগেটে রেখেই ডেভেলপররা তাদের ব্যবসার প্রসার করতে থাকে।
কিন্তু শেয়ারবাজারের ধ্বসের আগে ২০০৭ সালের দিকে এটার খুব রমরমা অবস্থা ছিল। তারপর ২০০৮ সালে শেয়ারবাজার যখন ধ্বস নামে, শেয়ারবাজারের সাথে এ ব্যবসাটা কো-রিলেটেড হওয়ায় এখানেও ধাক্কা লাগে। তখন এ ব্যবসায়ও ধ্বস নামে। অনেক ব্যবসায়ী এই ব্যবসা না বুঝে, কোনোরকম স্টাডি না করে, অন্যদের দেখাদেখি এই ব্যবসায় প্রবেশ করে। যখন ডিমান্ডের চেয়ে সাপ্লাইয়ের পরিমানটা বেড়ে যায়, অনেক বেশি এপার্টমেন্ট তৈরি হয়, তখনই এই সেক্টরে একটা বড় ধরনের ডিমান্ড সাপ্লাইয়ের শূন্যতা তৈরি হয়। তখন সাপ্লাই বেড়ে যায়, ডিমান্ড কমে যায়। অন্য দিকে শেয়ারবাজারে ধ্বস নামার কারণে মানুষের ইনকাম লেভেল নেমে যায়। তখনই বড় ধরনের একটা ধ্বস নামে। রিয়েল এষ্টেট সেক্টর একটা সংকটের মধ্য দিয়ে ২০১৫-১৬ পর্যন্ত পার করতে থাকে। কিন্তু ২০১৭ তে এসে আবার ভাল করতে শুরু করে। কারণ, যারা অসুস্থ প্রতিযোগিতা করে এই ব্যবসায় এসেছিল, তাদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে সব কিছুটা গুঁছিয়ে অন্য দিকে চলে গেছে। তারা দেখছে এখানে কোনো সুবিধা নেই। অথচ এখানেও অনেক ভালো সুবিধা রয়েছে। এখন যারা ব্যবসায় আসবে তারা সঠিকভাবে স্টাডি করে এপার্টমেন্ট তৈরি করবে অথবা ক্লায়েন্টকে সন্তোষ্ট করে ব্যবসা করবে। তারা প্রফেশনাল ওয়েতে আগামী দিন ব্যবসা করতে পারবে। আমি মনে করি, রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সম্ভাবনা আজীবন থাকবে। যেহেতু বাংলাদেশের লোক সংখ্যা অনেক বেশি, তাই এ সেক্টরে চাহিদা অনেক বেশি। সুতরাং এ শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে।
পরিচিতি: চেয়ারম্যান, ডিএলএম গ্রুপ লি., ঢাকা।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান