নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের সিদ্ধান্ত সন্ত্রাসবিরোধিতার আড়ালে বিরোধী মঞ্চ সৃষ্টির আহ্বান
শাহানুজ্জামান টিটু : বিএনপি জোটের বাইরে থাকা নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এজন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফোন করে তাদের চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানাবেন। বিএনপির অন্য শরিক দলগুলোকেও সেই বৈঠকে ডাকা হবে না। বৈঠকে কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, গণফোরাম, বিকল্পধারা, কৃষকশ্রমিক লীগ ও জাসদের (রব) নেতৃবৃন্দ থাকবেন বলে বিএনপির আশাবাদ।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য প্রচেষ্টা এগিয়ে নেওয়ার জন্য চলতি সপ্তাহে অথবা আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিন এই দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সরকারবিরোধী ন্যূনতম ইস্যুকে কেন্দ্র করে ঐক্য গড়ে তোলার বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিবে বিএনপি। না হলেও যুগপৎ আন্দোলনের আহ্বানও থাকবে বিএনপির পক্ষ থেকে।
মুলত, জামায়াতকে বাদ দিয়েই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোকে এক মঞ্চে পেতে চায় বিএনপি। চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফেরার পর গত রোববার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ নিয়ে কথা বলেন। এসময় সেখানে ছিলেন ঢাবির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সূত্র জানায়, ২০ দলের বাইরে বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করা এবং বিভিন্ন ইস্যুতে বর্তমান সরকারের কর্মকা-ের বিরোধিতা করে আসা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে চায় বিএনপি।
সূত্র জানায়, যেসব রাজনৈতিক দল খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আসবে তাদের সঙ্গে সমঝোতার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলে নির্দিষ্ট কতগুলো কর্মসূচির ভিত্তিতে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার চিন্তা করছে বিএনপি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলনে থাকা বিএনপি তাদের আন্দোলনকে আরও সক্রিয় তুলতে পারবে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। সরকরের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যের বিষয়টি নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের শীর্ষনেতারা বিভিন্নভাবে বলে আসছেন বর্তমান এ সরকারকে সরাতে হলে বিএনপির একার পক্ষে তা সম্ভব নয়। বরং সব রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের সম্পৃক্ত করে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলে ঐক্যবদ্ধভাবে এ সরকারকে মোকাবিলা করতে হবে। বিএনপি এত সভা-সমাবেশের মাধ্যমে এসব কথা বলে এসেছে। এখন দলটি সেই ঐক্য গড়ে তোলার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
বিষয়টি নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে বলে আসছি বর্তমান এ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে এদেশে কোনো সুুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এছাড়া তারা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন দেবে না। এদের আন্দোলনের মাধ্যমে বাধ্য করতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে। একারণে আমরা বলেছি দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দলের চেয়ারপারসনের আহ্বানে যেসব রাজনৈতিক দল সাড়া দেবেন তাদের নিয়েই আমরা আলাপ-আলোচনা করব। তাদের নিয়ে জাতীয় ঐক্য হতে পারে। আমাদের লক্ষ্য যদি অভিন্ন হয় তাহলে যুগপৎ কর্মসূচি দিয়েও কর্মকা- এগিয়ে নেওয়া যায়। আগে বৈঠক হোক। দলগুলোর মতামত নিয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। এদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গত রোববার রাতে বৈঠকে জামায়াতকে ঐক্যে না রাখার বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পায়। সেখানে উপস্থিত সকলে জামায়াত প্রসঙ্গে একমত পোষণ করে বলে সূত্র জানায়। গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জামায়াতকে বাদ দিয়ে ঐক্য করা যেতে পারে। যেহেতু জামায়াত বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র একারণে দলটিকে জোট থেকে বাদ দেওয়া ঠিক হবে না। তারা যুগপৎ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকতে পারে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি