কুরবানির ফাজায়েল ও মাসায়েল
মুফতি মোস্তফা কামাল কাসেমি
মুলসিম উম্মাহর আনন্দ উৎযাপনের জন্যে মহান আল্লাহ তায়ালা বৎসরে দু’টি ঈদের দিন নির্ধারণ করেছেন। এটা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুমিন বান্দার জন্যে অনেক বড় নেয়ামত এবং তোহফা। বছর ঘুরে আবারো এলো সেই খুশির দিন- ঈদুল আজহা। এ দিনে মুমিন হৃদয়ে বয়ে যায় আনন্দের ঢেউ, খুশির ফোয়ারা। কারণ, এ দিনে এমন একটি বিশেষ আমল রয়েছে, যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর অতি নিকটে পৌঁছুতে পারে। আর সেটি হলো কুরবানি। বিশুদ্ধ নিয়তে যে পশু কুরবানি করবে এবং এর সঙ্গে মনের পশুত্বকেও কুরবানি দিবে তার জন্যই রয়েছে কামিয়াবি ও সফলতার সোপান। কোরআন ও হাদিসে কুরবানির অসংখ্য মাহাত্ম্য ও ফজিলতের কথা উল্লেখ হয়েছে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে রাসুল! আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ (অর্থাৎ আমার সবকিছু) আল্লাহ রাববুল আলামিনের জন্য উৎসর্গিত। (সুরা আনআম : ১৬২)
কুরবানির মধ্যে হিকমত হলো যে, আল্লাহর মুহব্বতে নিজের ভেতরের সকল অবৈধ চাহিদা ও পশুত্বকে কুরবানি করা এবং ত্যাগ করা। আল্লাহ তাআলা অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘মনে রেখো, কুরবানি জন্তুর গোশত অথবা রক্ত কিছুই আল্লাহর নিকট পৌঁছুয় না; বরং তাঁর কাছে কেবল তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে।’ (সুরা হজ: ৩৭) কুরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.)থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কুরবানির দিনের আমলসমূহের মধ্যে পশু কুরবানি করার চেয়ে কোনো আমল আল্লাহ তাআলার নিকট অধিক প্রিয় নয়। কিয়ামতের দিন এই কুরবানিকে তার শিং, পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত করা হবে। আর কুরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ তাআলার নিকট কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে কুরবানি করো।’ (তিরমিজি: ১৪৯৩)
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই মহান ইবাদত পালন থেকে বিরত থাকে তার ব্যাপারে হাদিস শরিফে কঠোর ধমকি এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যার কুরবানির সামর্থ্য আছে তবুও সে কুরবানি করলো না সে যেনো আমাদের ঈদগাহে না আসে। (মুসনাদে আহমদ ২/৩২১) হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত ফাতেমা (রা.) কে বললেন, ফাতেমা! এসো তোমার কোরবানির পশুর কাছে দাঁড়িয়ে থাক। কারণ কোরবানির পশুর রক্তটা মাটিতে পড়বে, তার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তোমার পূর্বের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। ফাতেমা (রা.) বলেন, ‘এ সুসংবাদ কি আহলে বায়আতের (নবি পরিবারের) জন্য নির্দিষ্ট, না সকল উম্মতের জন্য?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আমাদের আহলে বায়আতের জন্যও এবং সকল উম্মতের জন্যও।’ (জামেউল ফাওয়ায়েদ, পৃ: ৩২৫) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় দশ বছর জীবনযাপন করেছেন, সেখানে প্রতি বছরই তিনি কোরবানি করেছেন’ (তিরমিজি : ১৪৯১)
কুরবানির কিছু জরুরি মাসায়েল
১. প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানি করা ওয়াজিব। আর নিসাব হলো, স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) তোলা, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য আসবাবের ক্ষেত্রে নিসাব হলো এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া: ১৭/৪০৫)
নেসাবের মেয়াদ
২. কুরবানির নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানির তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানি ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/১৯৬)
কুরবানির সময়
৩. মোট তিনদিন কুরবানি করা যায়। জিলহজেরর ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানি করা উত্তম। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/১৯৮)
নাবালেগের কুরবান
৪. নাবালেগ শিশু এবং সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নয় এমন ব্যক্তি নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কুরবানি করলে তা সহিহ হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/১৯৬)
মুসাফিরের জন্য কুরবানি
৫. মুসাফিরের ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। (ফাতাওয়া কাজিখান: ৩/৩৪৪)
দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানির হুকুম:
৬. দরিদ্র ব্যক্তির ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। কিন্তু সে যদি কুরবানির নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কুরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যায়। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/১৯২)
৭. কেউ যদি কুরবানির দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানি দিতে না পারে তাহলে কুরবানির পশু ক্রয় না করে থাকলে তার ওপর কুরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করেছিল, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানি দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করা আবশ্যক। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৪)কখন থেকে কুরবানি করা যাবে? ৮. যেসব এলাকার লোকদের উপর জুমা ও ঈদের নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাজের আগে কুরবানি করা জায়েজ নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামাজ না হয়, তাহলে ঈদের নামাজের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিনেও কুরবানি করা জায়েজ। (বুখারি ২/৮৩২, কাজিখান ৩/৩৪৪)
রাতে কুরবানি করা
৯. ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতেও কুরবানি করা জায়েজ। তবে দিনে কুরবানি করাই ভালো। (মুসনাদে আহমাদ: ১৪৯২৭, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০)
কুরবানির উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সময়ের পর জবাই করলে
১০. কুরবানির দিনগুলোতে যদি জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তাও সদকা করতে হবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৩২০-৩২১)
কোন কোন পশু কুরবানি দেয়া যাবে?
১১. উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানি করা জায়েজ। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানি করা জায়েজ নয়। (কাজিখান ৩/৩৪৮)
কুরবানির পশুর বয়সসীমা
১২. উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানি করা জায়েজ। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।
উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানি জায়েজ হবে না। (কাজিখান ৩/৩৪৮)
এক পশুতে শরিকের মাসআলা
১৩. একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানি দিতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কুরবানি করলে কারোটাই সহিহ হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরিক হতে পারবে। সাতের অধিক শরিক হলে কারো কুরবানি সহিহ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৭-২০৮)
সাত শরিকের কুরবানি
১৪. সাতজনে মিলে কুরবানি করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। কমবেশি হলে কোনো শরিকের কুরবানিই সহিহ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৭) ১৫. যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানি না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানি করে তাহলে তার কুরবানি সহিহ হবে না। তাকে শরিক বানালে অন্য শরিকদের কারো কুরবানি হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নির্বাচন করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৮, কাজিখান: ৩/৩৪৯)
কুরবানির পশুতে আকিকার অংশ
১৬. কুরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকিকার নিয়তে শরিক হতে পারবে। এতে কুরবানি ও আকিকা দুটোই সহিহ হবে। (রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৬২)
১৭. শরিকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানি সহিহ হবে না।
১৮. যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবানি দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরিক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানি করাই উত্তম। শরিক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কুরবানি করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরিক করতে পারবে না। এমন গরিব ব্যক্তি যদি কাউকে শরিক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিবে। (কাজিখান ৩/৩৫০-৩৫১)
কুরবানির উত্তম পশু
১৯. কুরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। (ফতোয়ায়ে আলমগিররি: ৫/৩০০)
খোড়া পশুর কুরবানি
২০. যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কুরবানি জায়েজ নয়। (তিরমিজি: ১/২৭৫, বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২১৪)
রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানি
২১. এমন দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানি করা জায়েজ নয়। (আলমগিরি: ৫/২৯৭)
দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানি
২২. যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কুরবানি করা জায়েজ নয়। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২১৫)
২৩. যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছেমস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানি জায়েজ নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানি করা জায়েজ। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২১৬)
২৪. যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানি জায়েজ নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানি জায়েজ। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। (আলমগিরি ৫/২৯৭-২৯৮)
২৫. যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কুরবানি করা জায়েজ নয়। (কাজিখান ৩/৩৫২)
নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে
২৬. কুরবানির পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া যায় তাহলে কুরবানীদাতা দরিদ্র হলে (যার উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কুরবানি করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কুরবানি করলেই হবে। তবে দুটোই কুরবানি করা উত্তম। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯)
২৭. কুরবানির নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানি জায়েজ হয় না, তাহলে সেই পশুর কুরবানি সহিহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানি করতে হবে। তবে ক্রেতা গরিব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানি করতে পারবে। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৭)
নিজের কুরবানির পশু নিজে জবাই করা
২৮. কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা উত্তম। নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কুরবানিদাতা পুরুষ হলে জবাইস্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২২-২২৩)
২৯. কুরবানির পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েজ নয়। যেমন: হালচাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি। সুতরাং কুরবানির পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তাহলে পশমের মূল্য, হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে। (নায়লুল আওতার ৩/১৭২)
কুরবানির পশুর দুধ পান করা
৩০. কুরবানির পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুরকষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না। প্রয়োজনে ওলানে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে। এতে দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে মূল্য সদকা করে দিবে। (ফতওয়ায়ে শামি ৬/৩২৯)
৩১. কুরবানির পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানির পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে। (কাজিখান ৩/৩৪৯)
৩২. মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানি করা জায়েজ। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানি হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানির স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানির ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরিব-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। (কাজিখান ৩/৩৫২) ৩৩. শরিকে কুরবানি করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েজ নয়। (আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭)
৩৪. কুরবানির গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধে নেই। (আলমগিরি ৫/৩০০)
৩৫. জবাইকারি, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েজ হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারি দেওয়া যাবে।
জবাইয়ের অস্ত্র
৩৬. জবাইয়ের পর পশু নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরুহ। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩)
৩৭. এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবাই করবে না। জবাইয়ের সময় প্রাণীকে অধিক কষ্ট দেওয়া থেকেও বিরত থাকবে।
৩৮. কুরবানির গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েজ। (ইলাউস সুনান ৭/২৮৩)
৩৯. অন্যের ওয়াজিব কুরবানি দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানি আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানি করে তাহলে তাদের কুরবানি আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো।
৪০. কুরবানির পশু যদি চুরি হয়ে যায় বা মরে যায় আর কুরবানিদাতার ওপর পূর্ব থেকে কুরবানি ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কুরবানি করতে হবে। গরিব হলে আরেকটি পশু কুরবানি করা ওয়াজিব নয়।আল্লাহ তায়ালা কুরবানি করার মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য হাসিল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।