ঈদুল আজহার ইবাদত
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির
হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর মহান ত্যাগের স্মৃতি ও শিক্ষা নিয়ে আসে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহা যথাযোগ্য মর্যাদায় সম্পন্ন করার মাঝে রয়েছে মানুষের পূণ্য লাভের সুযোগ। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন মাতৃভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেন তখন থেকেই ইসলামে ঈদের সূচনা হয়। প্রতি চন্দ্র বছরের জিলহজ¦ মাসের দশ তারিখে ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হয়।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল জাতির ঈদ বা আনন্দ আছে। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা হচ্ছে আমাদের ঈদ বা আনন্দের দিন। ঈদ আরবি শব্দ। এর অর্থ বারবার প্রত্যাবর্তন করা। প্রতি বছর নিয়মিতভাবে এই ঈদের দু’বার আগমন ঘটে। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে ঈদ। কারো কারো মতে, এ দ’ুদিনে আল্লাহর রহমতে দৃষ্টি বান্দার দিকে বার বার দৃষ্টিপাত করেন বলে এর নাম ঈদ।
মদিনায় হিজরতের পর দয়াল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লক্ষ্য করলেন মদীনাবাসিরা বছরের দু’টি নির্দিষ্ট দিন আমোদ-প্রমোদে মেতে উঠে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন, এই বিশেষ দিনে তোমাদের আনন্দ-উল্লাসের কারণ কি? মদিনার নও-মুসলিমগণ বলেন, আমরা জাহেলী যুগে দু’টি দিনকে এভাবে পালন করতাম। হুজুরের পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ঐ উৎসবের পরিবর্তে আরও উৎকৃষ্ট দু’টি দিন তোমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ দু’টি দিন হচ্ছে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা (আবু দাউদ শরীফ)। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি উভয় ঈদের রাতে সওয়াবের নিয়তে এবাদত করে, তার অন্তর সেদিনও মরবে না- যেদিন অন্য লোকদের অন্তর মৃত হবে (তারগীব)। অন্য এক হাদিসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ১০ জিলহজ্জ্বের ঈদুল আজহার দিন কোরবানি দেওয়ার চাইতে আর কোনো আমল আল্লাহর কাছে এত অধিক প্রিয় নয়। রোজ কিয়ামতে কোরবানিদাতা সেই জন্তুুর লোম, শিং খুর নিয়ে হাজির হবে। এগুলো তার জন্যে বড় রকমের সওয়াবের কারণ হবে। কোরবানির রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। অতএব তোমরা আনন্দের সাথে কোরবানি কর (বোখারী শরীফ)। রাসুলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন সুন্দর ও উত্তম পোশাক পরিধান করতেন। তিনি কখনো সবুজ ও লাল ডোরা বিশিষ্ট চাদর পরিধান করতেন। ইয়ামানে নির্মিত চাদরকে “বুরদে ইয়ামনি” বলা হত। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদে এ পোশাক পরিধান করতেন। ঈদের জন্যে বৈধ পোশাক দ্বারা সাজসজ্জা করা মোস্তাহাব। ঈদের নামাজের পূর্বে গোসল করা সুন্নত। উভয় ঈদের দিন সকালে গোসল করা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভ্যাস ছিল। ঈদুল আজহার নামাজ রাসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল সকাল পড়তেন।
ঈদুল আজহার রাতে সওয়াবের উদ্দেশ্যে জেগে এবাদত করা সুন্নাত। জিলহজে¦র ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখের আছর পর্যন্ত জামাত সহকারে ফরজ নামাজ আদায় করাও তাকবীরে তাশরীফ উচ্চস্বরে বলা ওয়াজিব। মুসাফির, মহিলা ও একাকি নামাজ পড়ে এমন ব্যক্তিদের উপর ও তা পাঠ করা ওয়াজিব বলে কোন কোন আলেম অভিমত ব্যক্ত করেন।
ঈদুল আজহা শুধু কোরবানি করার ঈদ নয়, এটি অন্যতম এবাদত ও বটে। হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি নি¤েœর পাঁচ রাত জেগে আল্লাহর এবাদত করবে তার জন্যে জান্নাত অবশ্যাম্ভী হয়ে যাবে। রাতগুলো হচ্ছে ৮ জিলহজে¦র রাত, ৯ জিলহজে¦র রাত, ঈদুল আজহা অর্থ্যাৎ ১০ জিলহজে¦র রাত, ঈদুল ফিতরের রাত ও শবে বরাত। আল্লাহ আমাদের সকলকে ও রাতগুলোতে জেগে এবাদত করার তৌফিক দিন। ঈদুল আজহা সারা বিশে^র মুসলমানদের উৎসবের দিন। ঈদুল আজহার উৎসবের এ আনন্দ ঘরে ঘরে খুশির বন্যা বইয়ে দিক। আমিন