হোক পশুত্বেরও কুরবানি
দিদার-উল আলম
আল্লাহ্ তায়ালার আদেশ হচ্ছে, “অতএব তোমার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ কায়েম কর (নামাজ পড়) এবং কুরবানি দাও” (সূরা কাউছার- আয়াত ০২)। কুরবানির গুরুত্ব অপরিসীম। কুরবানিসহ আমাদের সকল ইবাদত-আমল হতে হবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। কুরবানি ঈমানদার মুসলমানকে আল্লাহর নির্দেশ পালনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের এবং ধর্মীয় বিধি-বিধানের নিকট, কুরআন হাদিসের আদেশ-নিষেধের নিকট আতœসমর্পনের বাস্তব শিক্ষা দেয়। ইসলাম ধর্মের প্রতিটি ইবাদত পালনের মধ্যে ইবাদত পালনকারীর জন্য রয়েছে কিছু অর্ন্তনিহিত শিক্ষা। ইবাদত পালনের পাশাপাশি ইবাদতের অর্ন্তনিহিত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া, শিক্ষার আলোকে জীবন যাপন করা, শিক্ষাকে কাজে লাগানো ঈমানের দাবি, ইবাদতেরও দাবি। কুরবানি দেয়া আল্লাহর আদেশ। কুরবানি দেয়ার পাশাপাশি কোরবানির পশুর গলায় চুরি চালানোর মধ্যে ও কোরবানি দাতার জন্য রয়েছে কিছু শিক্ষা। সে শিক্ষার প্রতি কুরবানি দাতার নজর দেওয়া অতীব জরুরি। কি সেই শিক্ষা?
আমরা কুরবানি দিলেও কুরবানির শিক্ষার ব্যাপারে কি নজর দেই? আমরা কুরবানির আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে জেনে বুঝে তা থেকে কি শিক্ষা গ্রহণ করি? গতানুগতিক ইবাদত পালনের মধ্যে, ঈদুল আযহায় কোরবানি দেয়ার মধ্যে ধর্ম পালনের আমেজ পাওয়া যেতে পারে, পাওয়া যেতে পারে শরাফতীর তৃপ্তি, জাহির করা যেতে পারে নিজেকে মুসলমান হিসেবে, কুরবানি দাতা হিসাবে। কিন্তু এতে কি প্রকৃত ধার্মিক হওয়া যাবে? পাওয়া যাবে কি আল্লাহর সন্তুষ্টি? পাওয়া যাবে কি পরকালীন মুক্তি? নতুন কোরবানি দাতাদের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমরা যারা পুরোনো কুরবানি দাতা, অনেক বৎসর থেকে কুরবানি দিয়ে আসছি, কুরবানি নিয়ে, কোরবানির শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ সূরা হাজ্বে আল্লাহ বলেন “আল্লাহর কাছে তাদের (কুরবানির পশুর) গোশত আর রক্ত পৌঁছে না বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে” (আয়াত ৩৭)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই এটা ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা এবং আমি এক মহান কুরবানির বিনিময়ে সে শিশুকে (ইছমাইল আ. কে) মুক্ত করলাম” (সূরা আস্ সাফফাত ১০৬ ও ১০৭)। উক্ত আয়াতদ্বয়ে কুরবানি কারীর জন্য রয়েছে অনুপম শিক্ষা। এ শিক্ষার অন্যতম হচ্ছে পশুর গলায় ছুরি চালানোর পাশাপাশি কুরবানি কারী নিজের আমল আখলাকে, চলনে বলনে, জীবন-যাপনে ধর্ম বিবর্জিত যে ধ্যান-ধারনা আছে তার গলায় ও চুরি চালাতে হবে। তথা কুরআন হাদিসে নিষেধকৃত বিষয়গুলো নিজের জীবন থেকে বাদ দিতে হবে, নির্মূল করতে হবে, নিজের কৃ-প্রবৃত্তি গুলোর ওপর ছুরি চালাতে হবে। আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে যে বা যিনি কুরবানি দিলেন তিনি বা তারা কুরবানি দাতা হয়ে আবার আল্লাহর আদেশ লংঘন করবেন, আল্লাহর আদেশ অমান্য করবেন, সুবিধেজনক হলে মানবেন আর অসুবিধেজনক হলে মানবেন না, এ সুযোগ, এ অবকাশ কি কোন কুরবানি কারী, কোন ঈমানদার নারী পুরুষের আছে? কাজেই আসুন কোরবানি করার নিয়তের পাশাপাশি আমরা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সুদ, ঘুষ, বেহায়া, বেলেল্লাপনা, বে-পর্দা, অত্যাচার-অবিচার, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, মুজুদদারী, কালোবাজারী, পন্যে ভেজাল, হারাম পন্থায় অর্থ উপার্জন, কুট কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ, মনচাহী জিন্দেগী পরিচালনাসহ সবধরনের ধর্ম অনুমোদন করে না, এমন কাজগুলো আমরা ত্যাগ করি, ত্যাগ করার নিয়ত করি, এ কাজগুলোকে আমাদের জীবন থেকে বাদ দিই, পশুর গলায় ছুরি চালানোর ন্যায় অন্যায় ও অনৈতিক কাজগুলোর গলায়ও ছুরি চালাই।
অর্থ ও সময় দুটো ব্যয় করে যে লোক আল্লাহর কোন আদেশ পালন করেন, তিনি একটু সময় ব্যয় করে আল্লাহর অন্য আদেশ ও পালন করবেন এটাই স্বাভাবিক ও বিবেকের দাবি। কিন্তু আমরা অনেকেই কি তা করি? কোরআনের একই আয়াতে ২টি আদেশের প্রথমটি পালন না করে আমরা অনেকেই ২য় টি পালন করি। এরকম যারা করেন তারা কি ঠিক কাজ করেন? সুরা কাউছারের ২নং আয়াতে আল্লাহ প্রথমে নামাজের আদেশ এবং পরে কুরবানির আদেশ করেছেন। কুরবানি করেন ঠিকই কিন্তু যথারিতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন না এরকম কুরবানি কারীর সংখ্যা কি নিতান্তই কম? কিন্তু কেন? কুরবানি দাতা যথারিতি নামাজ আদায়কারী হবেন এবং নামাজ কায়েম কারী হবেন এটাই ঈমানের দাবি, কুরবানির ও দাবি। এ ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষ করে কুরবানি দাতা হয়ে যারা নামাজ আদায় করেন না তাদের চিন্তা ভাবনার জন্য রাসূল (সা.) এর এই হাদীসটি যথেষ্ট হতে পারে, “যে ব্যক্তি বেনামাজী হয়ে আল্লাহর কাছে যাবে, তার অন্যান্য সৎ কাজ আলল্লাহ গ্রহন করবেন না”। কুরআনের সূরা মুদ্দাসসীরের বর্ণনা ও আমাদের পাথেয় হতে পারে। আল্লাহ বলেন,“জান্নাতিরা জাহান্নামিদের জিজ্ঞাস করবে যে, কেন তোমরা জাহান্নামে এলে? জাহান্নামীরা উত্তর দিবে আমরা নামাজ আদায়কারীদের দল ভুক্ত ছিলাম না (পৃথিবীতে নামামি ছিলাম না) (আয়াত ৪০-৪৩)। ঈমানদার মুসলমান হিসেবে একটু সময় ব্যয় করে আমাদের অবশ্যই নামাজ আদায় করতে হবে । লেখক : শিক্ষক, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক