চলে গেলেন মহাশ্বেতা দেবী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লেখক ও মানবাধিকার কর্মী মহাশ্বেতা দেবী মারা গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের কলকাতার বেল ভিউ ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৯০ বছর বয়সী এই লেখক।
গত দুই মাস ধরে বেল ভিউ ক্লিনিকে তার চিকিৎসা চলছিল। সেই হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তাকে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রক্তে ইনফেকশন ও কিডনি অকেজো হয়ে পড়ার কারণে তার মৃত্যু হয়।
তিনি ১৯২৬ সালে বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতা মনীশ ঘটক ছিলেন কল্লোল যুগের প্রখ্যাত সাহিত্যিক। তার কাকা ঋত্বিক ঘটক ছিলেন শক্তিশালী চলচ্চিত্র পরিচালক। মহাশ্বেতা বিয়ে করেছিলেন প্রখ্যাত নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যকে। মহাশ্বেতার পুত্র নবারুণ ভট্টাচার্যও অত্যন্ত শক্তিশালী লেখক ছিলেন। নবারুণ ২০১৪ সালে অন্ত্রে ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি সাহিত্য আকাদেমি, পদ্ম বিভূষণ ও ম্যাগসেসেসহ আরও বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাইকে নিয়ে লিখে তিনি প্রথম সাহিত্য জগতের নজর কাড়েন। এছাড়াও মানবাধিকার ও নারী অধিকার প্রশ্নে সর্বদা সরব ছিলেন এই লেখক।
মহাশ্বেতার গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে, হাজার চুরাশির মা, তিন কড়ির সাধ, অরণ্যের অধিকার, হারানের নাতজামাই, চোট্টিমুন্ডা ও তার তীর, অগ্নিগর্ভ ইত্যাদি।
তিনি সাঁওতালসহ উপজাতীয়দের উপর কাজ এবং লেখার জন্য বিখ্যাত । তিনি জ্ঞানপীঠ পুরস্কারও পেয়েছেন। তার লেখা শতাধিক বইয়ের মধ্যে হাজার চুরাশির মা অন্যতম। সাহিত্যে অবদানের জন্য তাকে ২০০৭ সালে সার্ক সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়।
মহাশ্বেতা দেবী শিক্ষালাভের জন্য শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নœাতক হন। পরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন ।
১৯৬৪ সালে তিনি বিজয়গড় কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। এ সময়ই তিনি একজন সাংবাদিক এবং লেখিকা হিসাবে কাজ করেন। পরে তিনি বিখ্যাত হন মূলত পশ্চিমবাংলার উপজাতীয় ও নারীদের উপর তার কাজের জন্য। তিনি বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে বিভিন্ন উপজাতীয় ও মেয়েদের উপর শোষণ এবং বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন। সাম্প্রতিককালে মহাশ্বেতা দেবী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিল্পনীতির বিরুদ্ধে সরব হন । সরকার কর্তৃক বিপুল পরিমাণে কৃষিজমি অধিগ্রহণ এবং স্বল্পমূল্যে তা শিল্পপতিদের কাছে বিতরণের নীতির তিনি কড়া সমালোচক। এছাড়া তিনি শান্তিনিকেতনে প্রোমোটারি ব্যবসার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করেছেন। সম্পাদনা: ইমরুল শাহেদ