মুমিনরা পরস্পরের ভাই
হুমায়ুন আইয়ুব : কুরআন বলে ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা পরস্পরের ভাই’। মুমিনদের একটি অঙ্গ ব্যথিত হলে অপর ভাইয়েরও অঙ্গ ব্যথিত হয়। কোনো মুসলমানের চোখে অশ্রু ঝরলে অপর ভাইয়ের চোখেও যেন অশ্রু ঝরে। এভাবেই সব দেশের সব মুসলিমকে একই বন্ধনে আবদ্ধ করেছে ইসলাম। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানরাও আমাদের ধর্মীয় ভাই। তাদের ওপর নির্মম এ নির্যাতনে আমাদের হৃদয়ও ব্যথিত, ভারাক্রান্ত। ঈমানের দাবিতে হলেও তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ আমাদের দায়িত্ব। যারা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের খাদ্য পানির ব্যবস্থা করা আমাদের ঈমানেরই দাবি। মুহাজিরদের আশ্রয় দিয়ে মানব ইতিহাসে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছিল আনসাররা। ইসলামের ইতিহাসে তা আজও দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। একইভাবে রাখাইন থেকে যারা জুলুম নির্যাতনের কারণে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে পালন হবে ঈমানের গুরু দায়িত্ব।
এক মুমিন আরেক মুমিনের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। এই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বজায় রাখতে মুমিনদের সচেষ্ট থাকতে হবে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এবং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মুমিনদের পরস্পরের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ করা হয়েছে, ‘এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। এক ভাই যেন অন্য ভাইয়ের ওপর জুলুম না করে, অপমান না করে, তুচ্ছ মনে না করে। (মুসলিম, আহমদ) প্রকৃত মুসলমান হিসেবে নিজেদের দাবি করতে হলে নিজের আচার-আচরণে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। এক মুমিন যাতে অন্য মুমিনের কাছে নিজেদের নিরাপদ বোধ করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। হজরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মুসলমানের মুখের কথা ও হাতের কর্মকা- থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে, সেই তো প্রকৃত মুসলমান। (বোখারি ও মুসলিম)
পবিত্র কোরআনের সূরা আহজাবের ৫৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘যারা ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারীদের অহেতুক কষ্ট দেয়, তারা অপবাদ ও সুস্পষ্ট পাপ বহনকারী।’ দোজাহানের সর্দার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকের কাজ এবং কোনো মুসলমানকে হত্যা করা কুফরির নামান্তর।’ (বোখারি, মুসলিম)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের একটি অভিন্ন সত্তা হিসেবে বিকশিত হতে তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতিতে মুসলমানরা সবাই যেন একটি দেহ। শরীরের একটি অঙ্গ অসুস্থ হলে পুরো শরীর এর ব্যথায় কাতর হয়। (বোখারি ও মুসলিম)
আমরা উম্মতে মুহাম্মদীগণ সংখ্যায় লক্ষ কোটি যা’ই হই না কেন, রিসালাতের বদৌলতে আমরা এক ও অভিন্ন সত্তা, আমরা পরস্পর একটি পূর্ণাঙ্গ দেহের অবিচ্ছেদ্য ও অবিভাজ্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সদৃশ। ইসলাম মানবজাতিকে এমন একটি সমাজ-দর্শন উপহার দিয়েছে, যাকে সত্যিকারভাবে অনুসরণ করা হলে বিশ্বমানবগোষ্ঠী এক অভিন্ন সমাজের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব হোসেন