এরদোগান-হামিদ আলোচনায় ‘রোহিঙ্গা সেইফ জোন’ প্রসঙ্গ
হুমায়ুন কবির খোকন : ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যাতে সীমান্তের মিয়ানমার অংশে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি ‘সেইফ জোনে’ থাকতে পারে, সেজন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গতকাল রোববার কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় রাষ্ট্রপতি হামিদ এ আহ্বান জানান। আস্তানার প্যালেস অব ইনডিপেনডেনসে ওআইসির প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্মেলনের ফাঁকে দুই রাষ্ট্রপ্রধান বৈঠকে বসেন।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমার সীমানার অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সেইফ জোনে থাকতে পারে সে উদ্যোগ নিতে ওআইসিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রসের (আইসিআরসি) মাধ্যমে সম্প্রতি মিয়ানমার সরকারকে ‘সেইফ জোন’ প্রতিষ্ঠার ওই প্রস্তাব দেওয়া হয়।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে আবদুল হামিদ বলেন, গত ২৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। তাদের আসা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের সাময়িক আশ্রয় দিচ্ছে।
কিন্তু ‘অতি জনবহুল’ দেশ বাংলাদেশের জন্য এই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ যে একটি বড় সমস্যা সে কথাও রাষ্ট্রপতি তুলে ধরেন।
প্রেসসচিব জানান, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের একটি জায়গায় আশ্রয় দেওয়ার জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজছে বলে বৈঠকে জানান রাষ্ট্রপতি। রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে মর্যাদা ও নিরাপত্তার সাথে বাস করতে পারে, সে ব্যাপারে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগের জন্য তিনি ওআইসিসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থাকে উদ্যোগ নেওয়ারও আহ্বান জানান। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য ফোন করায় এবং তুরস্কের ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে বাংলাদেশ সফর করায় বৈঠকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি হামিদ। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ওআইসির চলমান সম্মেলনে একটি বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করার জন্যও প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে ধন্যবাদ জানান।
ওআইসসির সদস্য রাষ্ট্রগুলো রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান তার স্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে সহযোগিতার জন্য বৈঠকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, তুরস্ক সবসময় রোহিঙ্গা জনগণের পাশে আছে। ইতোমেধ্য এক হাজার টন খাদ্য সহায়তা পাঠানো হয়েছে। আরও ১০ হাজার টন ত্রাণ পাঠানো হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও সংস্থা যাতে বাংলাদেশের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ পাঠায় সে উদ্যোগ নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ