রোহিঙ্গা সংকট : প্রধানমন্ত্রী আপনি-ই পারবেন
অজয় দাশগুপ্ত
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কথাবার্তা বা লেখালেখির কমতি নেই। যার যার চিন্তাভাবনা থেকে তারা মত দেবেন এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের ওপর হঠাৎ করে চাপিয়ে দেওয়া এই অমানবিক সমস্যার চাপে দিশেহারা মানুষ তাদের আবেগ জানাবেন। তাদের মতো নানাভাবে সাহায্য করবে। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে এর সমাধান দরকার। বাংলাদেশের সামনে যে ভবিষ্যৎ, তার সামনে যে উন্নয়ন ও উজ্জ্বলতার হাতছানি তাকে কিছুতেই হাতছাড়া হতে দেওয়া যাবে না। সমস্যার চাপ যত বড় হোক না কেন, আমাদেরকে মোকাবিলা করতেই হবে। আর এই মোকাবিলার জন্য দরকার সুষ্ঠু নেতৃত্ব। প্রজ্ঞা আর সাহস ছাড়া এর সমাধান অসম্ভব। মনে পড়ছে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর কথা। একাত্তরের ভয়াবহ দিনগুলোতে আমরা পালিয়েছিলাম ভারতে। সে সমস্যার চাপ ছিল আরও বেশি। দলে দলে বাঙালির ভারত পালানোর সংখ্যা পৌঁছেছিল কোটিতে। সে সময়কালে দুনিয়াও ছিল আরেক
ধরনের। পাকিস্তান তখন অনেক বেশী শক্তিশালী একটি দেশ। তার গভীর গোপন দোস্ত আমেরিকা তখন এক নম্বরে। সঙ্গে ছিল চীন। এই তিন দেশের মোকাবিলা কোনো কথার কথা ছিল না । শুধু রাশিয়া বা সোভিয়েত ইউনিয়নকে পাশে নিয়ে ইউরোপ আমেরিকা চীনের বিরোধিতার মুখে অসাধ্য সাধন করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। সে প্রজ্ঞা আর মেধা ছিল তার রক্তে। বাকিটা এসেছিল সাধনা, ধৈর্য আর সাহসের মাধ্যমে।
আজকের বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল দেখে আমার মনে হচ্ছে ঠিক তেমন একজন নেতার প্রয়োজন। ভালো করে ভেবে দেখুন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই একমাত্র নেতা যিনি এর সমাধানে ভূমিকা রাখবেন। আজকের বাংলাদেশে তার ইমেজ অনেক বেশি উজ্জ্বল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তার ভাবমূর্তি এখন অন্য জায়গায়। জার্মানির মতো দেশে নির্বাচনের আগে এঙ্গেলার প্রচারণায় তিনি এবং শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি কোনো সাধারণ বিষয় না। আমি এখানে মানে সিডনিতে এদেশের মূলধারার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি তাদের ভেতর আগে খালেদা জিয়া ও বিএনপি নিয়ে যে ধারণা ছিল তা কেটে গিয়ে এখন কেবল শেখ হাসিনাকেই চেনেন তারা। আমাদের সমাজ জাতি বা দেশ কিছুতেই কাউকে মান্য করার বিষয় নেই। থাকলে আমরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কূটতর্কে মাততাম না। সে সমাজে একশ্রেণির ধর্মান্ধ উগ্র আর লেখাপড়া জানা নামের কথিত সুশীলরাই তাকে সহ্য করতে পারে না। রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভক্ত অথচ অন্তরে জামায়াত পোশাকে আধুনিক অথচ মনে পাকি বা বাংলাদেশের আগ পাশ তলা খেয়ে মৌলবাদের উপাসকেরাই তাকে পছন্দ করে না। আর কিছু জ্ঞানপাপী যারা দেশ ও দেশের বাইরে অধ্যাপনা বা এজাতীয় কিছু করে নিজেদের মহা পন্ডিত ভাবেন তারাই শেখ হাসিনার ঘোর বিরোধী। কারণ তাদের ধারণা শেখ হাসিনার পরের পদটা তাদের প্রাপ্য।
এদের কথা শুনে কাজ হবে না। আজ যে সমস্যা তার সমাধান দিবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। গতকাল তিনি মুখ খুলেছেন। স্পষ্ট করে বলেছেন, সব রোহিঙ্গাই ফিরিয়ে নিতে হবে। দেশের ভেতর ধর্ম সম্প্রদায় বা অন্য কারণে যত আবেগ আর অনুভূতি থাক না কেন, সমস্যা রাজনৈতিক। এর সমাধান এখন আন্তর্জাতিকভাবে করার বিকল্প নেই। কাঁচা আবেগ বা উন্মাদনা ছড়ানোর একজনও কোনো রোহিঙ্গাকে বাড়িতে রাখবেন না। দায় সরকারের। দায় জাতির। তাই আবেগের পরিবর্তে বাস্তবোচিত সিদ্বান্ত এখন জরুরি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রক্তে সমাধানের উত্তরাধিকার আছে। তার পিতা জাতির জনক স্বাধীন দেশ থেকে ভারতীয় সেনাদের নিয়ে যেতে ভারতকে খুব বেশি সময় দেননি। এবং তার কারণ তার ইমেজ। আমার মতো অনেকেই মানবেন, শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুখ খুললে বা ভূমিকা রাখলে ভারত-চীন-আমেরিকাসহ অনেকেই বিষয়টি আবার ভাবতে বাধ্য হবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে এখন চীন ও ভারতের যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক তাতে তারা চাইলেই মুখ ফেরাতে পারবে না। আমেরিকার জন কেরিকে মুখের ওপর না বলতে পারা আমেরিকার সেবাদাস নোবেল বিজয়ীকে দমিয়ে রাখা শেখ হাসিনা এবারও তার সমূর্তিতে ফিরে সমস্যার সমাধান দিন এটাই আমরা চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি খুব ভালো জানেন, এত এত রোহিঙ্গা পালন এবং তাদের অনিশ্চিত জীবনের দায় বাংলাদেশ নিতে পারবে না। আন্তর্জাতিক সাহায্যের নামে চাল ডালের দিন শেষ। এর যোগ্য সমাধান আর তাদের বাধ্য করতে আপনি একাত্তরের ইন্দিরা গান্ধীর মতো কঠিন ও প্রাজ্ঞতায় জ্বলে উঠুন । আপনি পারবেন এটাই জাতির বিশ্বাস।
লেখক : অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট