অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের মুখে ৫৩ বিচারক
সাজ্জাদুল হক : অনিয়ম, দুর্নীতি, বিচারিক অসততা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে সারা দেশের অর্ধশতাধিক বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তের পর সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে। অধিকাংশ তদন্ত কমিটি দীর্ঘদিনেও প্রতিবেদন দাখিল না করায় অভিযোগ থাকা বিচারকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে করে অভিযোগকারীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার অফিসে এসব বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়। এ-সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জেএ) কমিটি অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করে। আর ওই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
বিচারকদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি দেখভাল করে জিএ কমিটি। বর্তমান জেএ কমিটির প্রধান হলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। কমিটির সদস্যরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। কোনো অভিযোগ আসার পর কমিটির পক্ষ থেকে যাচাই-বাছাই শেষে তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। সে অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও ন্যায়বিচার বঞ্চিত করার অভিযোগে সারা দেশে ৫৩ জন বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। কিছু কিছু তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হওয়ার পর কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও অধিকাংশ তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। অন্যদিকে অভিযুক্ত বিচারকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য জেলার অন্য বিচারক দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। এতে করে অভিযোগের বিষয়ে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
যেসব বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ- মাদারীপুরের সাবেক জেলা জজ মো. আতাউর রহমান, দিনাজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শেখ মো. আখতার উল আলম, ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা জজ মো. আরিফুর রহমান, কক্সবাজারের সাবেক মুখ্য বিচারিক হাকিম সৈয়দ হুমায়ুন আজাদ, কক্সবাজারের সাবেক জেলা জজ মো. মোক্তার আহমেদ, খাগড়াছড়ির মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. আসাদুজ্জামান খান, কুষ্টিয়ার সাবেক অতিরিক্ত জেলা জজ টিএম মুসা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাবেক মুখ্য বিচারিক হাকিম একেএম মোস্তাকিনুর রহমান, চাঁদপুর জেলা জজ মফিজুল ইসলাম, ভোলা জেলা ও দায়রা জজ ফেরদৌস আহমেদ, ঢাকা জেলার সাবেক বিশেষ জজ রেজাউর ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ শিরিন কবিতা আক্তার, রাজবাড়ী জেলার সাবেক মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. নুর আলী, নীলফামারী জেলার সাবেক জজ মাহমুদুল কবির, খুলনা জেলার সাবেক অতিরিক্ত জেলা জজ মঈনুল হক, ফরিদপুর জেলার সাবেক বিশেষ জজ এস এম জহুরুল ইসলাম।
ঢাকা জেলার সাবেক যুগ্ম জজ মো. আল-মামুন, কক্সবাজারের সাবেক জেলা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদার, কুড়িগ্রাম জেলার সাবেক সিজেএম মো. রেজাউল করিম সরকার, ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত জেলা জজ মো. জুয়েল রানা (তার বিরুদ্ধে একসঙ্গে তিনটি অভিযোগের তদন্ত চলছে), রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাবেক জেলা জজ গোলাম আহমেদ খলিলুর রহমান, সাবেক যুগ্ম জেলা জজ মো. আবুল হোসেন খন্দকার, সাবেক যুগ্ম জেলা জজ সাইফুর রহমান সিদ্দিকী, শেখ রাজিয়া সুলতানা, যুগ্ম জেলা জজ মাকসুদুর রহমান, যুগ্ম জেলা জজ মো. মামুন-অর-রশিদ, যুগ্ম জেলা জজ মো. মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম জেলা জজ মো. সামসুজ্জামান, যুগ্ম জেলা জজ রিপতি কুমার বিশ্বাস (তার বিরুদ্ধে একত্রে দুটি অভিযোগের তদন্ত চলছে), অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম নুরুল আলম মোহাম্মদ নিপু, যুগ্ম জেলা জজ মো. আশরাফুজ্জামান জিলানী, যুগ্ম জেলা জজ মোহতাজ বিনতে হামিদ, সিনিয়র সহকারী জজ মাহবুব আলী মুয়াদ ও সিনিয়র সহকারী জজ মো. তাজউল ইসলাম।
সিনিয়র সহকারী জজ মো. আবদুল মতিন, সিনিয়র সহকারী জজ মো. জাভেদ ইমাম, সিনিয়র সহকারী জজ সুব্রত কুমার মল্লিক, সিনিয়র সহকারী জজ আ. বা. মো. নাহিদুজ্জামান, মোহাম্মদ শরীফ হোসেন, সিনিয়র সহকারী জজ আবদুল্লাহ আল মাসুম, সাইফুল ইলাহী, সিনিয়র সহকারী জজ বেগম আয়েশা সিদ্দিকী, সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মদ এমদুল্লাহ, সিনিয়র সহকারী জজ মোসাম্মৎ আরিফুন্নাহার, সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, সিনিয়র সহকারী জজ আকবর আলী খান, সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, সিনিয়র সহকারী জজ মো. নুরু মিয়া, সিনিয়র সহকারী জজ মুক্তা পারভীন, সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মদ হোসেন, সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মদ এনামুল হক বসুনিয়া ও সিনিয়র সহকারী জজ ফরিদ আলম।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বিচার বিভাগ স্বাধীন ও তা সুপ্রিম কোর্টের আওতাধীন। এখন কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া বা তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করতে হয়। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনেকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এনটিভি