ম্যানিলা যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা অর্থ ফেরতে ফিলিপাইনকে অনুরোধ নিউইয়র্ক ফেডের
কালাম আজাদ : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশকে অর্থ ফেরত দিতে ফিলিপাইনকে অনুরোধ জানিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জেনারেল কাউন্সেল এলমোর ও কাপুলেকে পাঠিয়েছে বলে শুক্রবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। একই সঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থ উদ্ধার ত্বরান্বিত করতে আগামী সপ্তাহে ম্যানিলা যেতে পারেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা।
‘নিউইয়র্ক ফেড আস্ক ফিলিপিন্স টু রিকোভার বাংলাদেশ মানি’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুনের ২৩ তারিখ ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের জেনারেল কাউন্সেল টমাস ব্যাক্সটার চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সহযোগিতা করতে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ‘সব ধরনের কার্যকর’ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) যে প্রক্রিয়ায় অর্থ স্থানান্তর করেছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। অর্থ স্থানান্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রিজাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ছিল অথচ তাদের কয়েকজন কর্মকর্তার হাত দিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ সরানোর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বলে ব্যাক্সটারের চিঠিতে বলা হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রিজার্ভ চুরিসংক্রান্ত প্রতিবেদন হাতে পেতে কয়েক সপ্তাহ ‘দেনদরবার’ করতে হয়েছিল নিউইয়র্ক ফেডকে। মার্চে ফায়ার আইয়ের দেওয়া প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে রিজার্ভ চুরির জন্য তৃতীয় একটি পক্ষকে দায়ী করা হয়। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেওয়া চিঠি এবং ফায়ার আইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ফেডারেল রিজার্ভের কেউ মন্তব্য করেননি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা রয়টার্সের সঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। একইসঙ্গে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, তদন্তাধীন কোনো বিষয় নিয়ে তারা কোনো ধরনের মন্তব্য করবে না। আর রিজাল ব্যাংকিং করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলেছে, রিজার্ভ চুরির টাকা উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংককে সব ধরনের সহযোগিতা তারা করবে।
এ ব্যাপারে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সিজার ভিরাতা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিৎ যারা অর্থ ছাড়ের ভুয়া মেসেজ পাঠিয়েছিল, তাদের খুঁজে বের করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও নিউইয়র্ক ফেডের মধ্যে আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি ‘উচ্চ পর্যায়ের’ বৈঠক হবে। টাকা উদ্ধারের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে ওই সভায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক নিউইয়র্ক ফেডের সঙ্গে চুক্তির বাধ্যবাধকতা মেনে চলেছে কী না- সে বিষয়েও ওই বৈঠকে আলোচনা হবে বলে ফেডারেল রিজার্ভের এক কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে রয়টার্স।
প্রসঙ্গত, গত ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে (৫ ফেব্রুয়ারি) সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সরানোর চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে চারটি মেসেজের মাধ্যমে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকে সরিয়ে নেওয়া হয় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। রিজাল ব্যাংকে যাওয়া টাকার একটি বড় অংশ পরে ফিলিপাইনের জুয়ার টেবিলে চলে যায়। এর মধ্যে দেড় কোটি ডলার এক ক্যাসিনো মালিক ফিলিপাইন সরকারের হাতে ফেরত দেন। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ওই টাকা ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়েছে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম