সুচির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা হওয়া উচিত কেন?
ডা. জাকির হোসেন
মিয়ানমারে আরাকান রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বার্মিজ জাতীয়তা আইন প্রণয়ন করার পর থেকে রোহিঙ্গাদের বার্মিজ নাগরিক হিসেবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। নাগরিত্ব হরণ করেই ক্ষান্ত হয়নি বার্মিজ সরকার, তাদের মুক্তভাবে চলাফেরা এবং উচ্চশিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সরকারি অনুমতি ছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভ্রমণের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে রাখা হয়েছে। বহুদিনের সামরিক শাসনের যাতাকলে পিষ্ট এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সবশের্ষ আশা ছিল, শান্তিতে নোবেল জয়ী গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সুচি’র হাত ধরে কোনোদিন মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরে এলে হয়তো এই নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর ধীরে ধীরে নির্যাতনের মাত্রা কমে আসবে। বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দেরও সুচি’র কাছে এই প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু এই নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কপালে যেন কোনো সুখের বালাই লেখা ছিল না। সুচি’র শাসনামলে এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠী স্মরণকালের ভয়াবহতম হত্যাযজ্ঞের শিকার হচ্ছে। সুচি’র শাসনামলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর এবারের চলমান মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে। নির্যাতনের চরম পর্যায়েও গোটা বিশ্ব অনেক বিশ্বাস ও আশা নিয়ে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী দেশটির স্টেট কাউন্সিলরের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা শান্তির আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সকল আশা হতাশায় পরিণত হয় যখন সেনা অভিযান শুরুর ২৬তম দিনে জাতির উদ্দেশে তিনি ভাষণ দেওয়া শুরু করেন। তিনি জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দেন তাতে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতনের ঘটনাকে শুধু অস্বীকারই নয়, বরং রোহিঙ্গা শব্দটি একবারের জন্যও উচ্চারণ করেননি। এছাড়াও রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থাগুলো, বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের সমালোচনা এবং হুশিয়ারিকে প্রত্যাখ্যান করে অনেকটা হুমকি দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণে ভীত নয় মিয়ানমার। সুচি’র এই ঔদ্ধত্যে হতবাক হওয়ার কিছু নেই। সুচি খুব ভাল করেই জানেন, চীনের জাতীয় স্বার্থের জন্য মিয়ানমার খুব গুরত্বপূর্ণ। আর সেই চীনকে টেক্কা দিয়ে মিয়ানমারকে কেনো মোড়ল রাষ্ট্র কিছু করতে পারবে না। পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অনেক গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে কিংবা বিশেষ কোনো ট্রাইবুনালের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। তাই এখনই প্রকৃত সময় মিয়ানমারের এই গণহত্যার প্রকৃত হোতাদের চিহ্নিত করা এবং সুচি সহ সে দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের বিচারের আওয়াতায় আনার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করা। বিশ্বে মানবধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন তাদেরকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে কোনো একদিন এই গণহত্যার দায় থেকে মিয়ানমার এবং সে দেশের চিহ্নিত ব্যক্তিবর্গ সাজা পাবে।
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট/সম্পাদনা: আশিক রহমান