মানবিক বাংলাদেশ এবং অমানবিকতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিবেকের অবস্থান
আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক)
মিয়ানমারের আর্মি যদি মানুষ মারে সেটা অবশ্যই জেনোসাইড। যে রক্ষক সে যদি ভক্ষক হয় সেটাকে জেনোসাইড বলতেই পারি আমরা। এবং এইটাই সত্য। একজন নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হবে, নারীকে অত্যাচার করা ও মায়ের সামনে পঁচিশ-তিরিশ বছরের ছেলেকে জবাই করা হবে। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিবে। তিনমাসের শিশুকে টেনে ছিঁড়ে ফেলবে এটাকে জেনোসাইড বলব না তো, বলব কাকে? মানুষের যে অধিকার পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সে অধিকারকে ভূলুন্ঠিত করা হচ্ছে।
শিল্পী সমাজ চায় এক লোকমা খাবার ভাগ করে খেতে। রোহিঙ্গারা অসহায়। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমাদের লিমিটেশন আছে। আমরা দুঃখের কথা বলতে পারি। প্রতিবাদ জানাতে পারি। শিল্পীর কোনো দেশ নেই। বিশ্বকে আমরা বলতে পারি যে রাখাইনে জেনোসাইড হচ্ছে। হত্যা করা হচ্ছে। অত্যাচার করা হচ্ছে। আগুনে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। রেপড হচ্ছে তরুণীরা। এসব জেনোসাইডের চেয়েও তো খারাপ। এসব বলার কোনো ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি না। যে দেশের প্রধান সে এখন পুতুল হয়ে গেছে ড্রইংরুমে তাকে সাজিয়ে রাখা যায়, তার নাম সুচি। তিনি তার হাত দিয়ে কিভাবে নোবেল পুরষ্কার নিলেন তাও আবার শান্তির। তিনি করছেনটা কি। বুঝলাম তার হাত-পা বাধা মিয়ানমার আর্মির হাতে। মানুষ মরতে চায় না। জীবনটাকে প্রচ- ভালোবাসে মানুষ। আমার মনে হয় তার সমস্ত ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল। বুঝলাম তার কিছুই করার নেই। কিন্তু তিনি তো প্রতিবাদ করতে পারেন। রাজনীতি ছেড়ে দিতে পারেন। সে যদি ওপেন ডিক্লেয়ার দেয় যে আমি আর পলিটিক্স করব না। আপনাদের যা করার করেন। তাকে দেওয়া হয়েছে নোবেল পুরষ্কার। আমি মনে করি না সে নোবেল পাওয়ার উপযুক্ত।
হিউম্যান রাইট বলে একটা কথা আছে। তার রাইট হল তার ল্যান্ডে। তার বাপ-দাদার ভিটায়। রাখাইন একটা আলাদা রাজ্য। তাদের নাগরিক অধিকার সেখানে। আমাদের বাংলাদেশে নয়। তারা নির্যাতিত। এর জন্য আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আশ্রয় দিতে পারি। খাদ্য দিতে পারি। কিন্তু নাগরিক অধিকার দিতে পারি না। সেটা তাদের মিয়ানমার থেকেই নিতে হবে। সেখান থেকে তাড়িয়ে দেবে আর তারা এখানে এসে বলবে আমাদের সিটিজেন শীপ দাও তাহলে তো হবে না। তাহলে ভিকটিম হবে আমার দেশ। রোহিঙ্গারা যেভাবে এখানে এসেছে। হত্যা, অন্যায় অত্যাচার কাঁধে নিয়ে। ওই মুর্হূতে অন্য কোনো দেশ হয়তো এত মানুষ ঢুকতে দিত না। আরও তো বহুদেশ এই ধরনের অধিবাসীদের ঢুকতে দিয়েছে। আমাদের এখানে যেভাবে মানুষ আসছে। সেখানে উদার মন নিয়ে সহায়তা করছে সরকার। দেশের মানুষ। কেউ বাধা দিচ্ছে না। মানবতা দেখাচ্ছে। মানবতা দেখানোর জন্য তাদেরকে সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়েছে। এখন তারা যদি বলে একমাসও হয়নি আমরা সিটিজেনশীপ চাই। ইমপসিবল, আমি সেটা মানতে রাজি নই। এরা কারা, কেন এলো এটার বিচারই হলো না। যে সমস্ত আর্মি এই ঘটনাটা ঘটিয়েছে। সচেতন মানুষ যারা, পৃথিবীর বড় বড় মানুষ, যারা হিউম্যান রাইটসের কথা বলেন। পৃথিবীর যে কোনো ক্রাইসিসে জাতিসংঘ হাজির হয়। এখানে জাতিসংঘ এখনো হাজির হচ্ছে না। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষী বাহিনীর ওই জায়গায় যাওয়া উচিত। সিটিজেনশীপ কি মামুর হাতের মোয়া? ভারতে যখন গিয়েছিলাম একাত্তরে আমাদের কি সিটিজেনশীপ দিয়েছে? ট্রেনিং দিয়েছে, খাবার দিয়েছে, থাকতে দিয়েছে, পয়সা দিয়েছে। সারা পৃথিবীতে ইন্দিরা গান্ধী ভিক্ষা করেছিলেন। বলেছিলেন, এদের রিলিফ দেওয়া হোক। তাদেরকে স্বীকৃতি দাও যে বাংলাদেশ তাদের। আমাদের কন্ট্রোলে তো ছিল কিছু। এদের ওখানে কি হয়েছে। এখনো তো খুন, হত্যা এসবই আমরা দেখছি। তারাও তো স্বাধীনতা চাইতে পারে। এরা বাংলাদেশের মানুষকে বিয়ে করতে চাইবে। এটা এক ধরনের ব্যাড পলিটিক্স। সেটা সরকার দেখবে। এই ধরনের ব্যাড পলিটিক্স মেনে নেওয়া যায় না। এদেশের নাগরিকের কোনো রায় যদি সরকার চায় তখন আমরা বলবো এমনিই তো আমরা খেতে পাই না। আমাদের থাকার ব্যবস্থা নেই। তার ওপর এই ধরনের চাপ সৃষ্টি করলে আমরা তো সেটা সহ্য করতে পারবো না। মানবতার কারণে আমাদের প্রাইম মিনিস্টার যে বলেছে যে ভাগ করে খাবো। ভাগ করে খেলাম। কিন্তু প্রতিদিন না। প্রতিদিন তো ভাগ দেওয়া যাবে না। প্রতিদিন আমি হাত পেতে থাকব সেটা তো হবে না। ছয়মাস-বছর-দুই বছর পারি। রোহিঙ্গারা আগে যারা ছিল তারাও আছে। ওখানে কি ঘটেছে তা না জেনে কোনো কমেন্ট করা ঠিক না।
এখানে যারা আগে ছিল তাদের সহযোগিতায় তারা মোবাইলের সীম কিনছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে যারা অতি আপ্যায়ন করতে চায় তাদের দ্বারা কিনতে পারে। টুপি নিয়ে যারা আল্লাহ খোদারে ডাকে। সে রকম ঈমানদার লোক সবাই তো না।এর মধ্যে কিছু ব্যবসায়ী আছেন না। থাকতে পারে। পৃথিবীর সব দেশেই এটা হয়। দুঃখকে ক্যাপিটাল করে অনেকেই পয়সা কামাই করে। এ রকম হতে পারে। প্রথম আমার দেশ আমার মাটি তারপর হলো অন্য কথা। এদের তো ঢুকতে দেওয়া হয়েছে মানবতার কারণে। হত্যা করছে, মেরে ফেলছে, দৌঁড়ায় পালিয়ে আসছে আমার বাড়িতে। আমি কি তাদের হত্যা করব নাকি!। আমি তো অমানুষ না। যারা হত্যা করছে, মিলিটারী হত্যা করা মানে কি? এর মতো জঘন্য ব্যাপার পৃথিবীতে নেই। আমাদের দেশে হয়েছে আমরা দেখেছি। এ জন্যই আমরা সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। এ ধরনের হত্যা নিন্দনীয়।
পরিচিতি: চলচ্চিত্র অভিনেতা
মতামত গ্রহণ: সানিম আহমেদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান