রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আইনজীবী সমিতির সাত দফা দাবি অত্যন্ত কার্যকর ও সময়োপযোগি
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সেচ্ছাসেবী সংস্থা হিসেবে বা যে কোনো সহৃদয়বান ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অনেক কিছু করতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সেভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সাত দফা দাবি জানিয়েছে। কিন্তু বিষয়টি দাঁড়িয়েছে সরকারের তৎপরতার মধ্যে যদি পরিপক্কতা না থাকে, যদি সরকার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন না হয়, তাহলে সে জায়গায় এসব পরিকল্পনা খুব বড় প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না। সরকারের তৎপরতার মধ্যে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, জাতিসংঘ বা অন্য কোনো ফোরামে প্রধানমন্ত্রী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারে যে গণহত্যা চলছে এই শব্দগুলো উচ্চারণই করেনি। জেনোসাইড শব্দ অন্যরা বলছে এবং সারা পৃথিবী বলছে এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার জেনোসাইড শব্দটা বলছে না। চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের অর্থনৈতিক এবং ভ-ূরাজনৈতিক সম্পর্ক আছে। রাশিয়া এবং জাপানেরও আছে। এমনকি ভারতেরও সম্পর্ক আছে। একই সঙ্গে এই চারটি দেশের সঙ্গে আমাদেরও ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ আছে। চীন আমাদের এখানে পায়রা সমুদ্র বন্দর করছে। এবং রাশিয়া পাবনার রূপপুরে পারণমানবিক প্রকল্প করছে। চীন থেকে আমরা সাবমেরিন এবং সমরাস্ত্র ক্রয় করছি। রাশিয়ার কাছ থেকে সমরাস্ত্র কিনা হচ্ছে। এমনকি গ্যাস ও বিদ্যুতের চুক্তি হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি রয়েছে। এই দেশগুলোতে বিশেষ দূত পাঠিয়ে আলাপ-আলোচনা করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেই। কিংবা এদের সঙ্গে জাতিসংঘের অধিবেশন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী বসে আলাদা আলাদা ভাবে বসে যারা ওই দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করা, সেটাও আমরা দেখছি না।
সুতরাং সব কিছু মিলে সরকারের যে একটা কূটনৈতিক চাপ বা বড় ধরনের এক্সিলারেশন বা বড় ধরনের একটা ধাক্কা দেওয়া সারা পৃথিবীর দেশ গুলোকে আমাদের সঙ্গে যারা উন্নয়নের সহযোগী কিংবা একই সঙ্গে যারা মিয়ানমারের উন্নয়নের সহযোগী তাদের উপরে, সেটা দেখছি না। সেই জায়গায়টাতে সরকার বড় দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছে। এক্ষেত্রে তারা আরও একটি জিনিস করতে পারতো। ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় মিয়ানমারের সঙ্গে যে এগ্রিমেন্টের ভিত্তিতে শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন করা হয়েছিল, তারপরে ১৯৯১ -১৯৯২ সালে ওই চুক্তির উপরে আরও কিছু সংযোজন করে বেগম খালেদা জিয়ার আমলে সবাইকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। সেই গুলোকে বেসপয়েন্ট ধরেও কিন্তু সরকার ওই দেশগুলোর সঙ্গে আলাপ করতে পারে। সেটা তো তারা করছে না। সেই ক্ষেত্রে ছোট ছোট ফোরাম থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে যে, এগুলোর মাধ্যমে একটা আবেদন সৃষ্টি হোক। সেই চেষ্টাটা করেছে আইনজীবী সমিতি। যে সাত দফা অত্যন্ত কার্যকর ও সময়োপযোগি।
ভারত, চীন এবং রাশিয়ার নিরবতা রোহিঙ্গা সংকটকে দীর্ঘায়িত করার আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকার যদি তৎপর হয় এবং এই দেশগুলোকে সঙ্গে যদি একটা কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চাপও সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে কিছুটা কাজ হবে। রাশিয়া, চীন ও জাপানের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দর কষাকষি আছে। সেখানে সবাইকে আমরা একটা কৌশলগত প্রলোভনের মধ্যে নিয়ে আসতে পারি। তাদের সঙ্গে আমরা অর্থনৈতিক কূটনীতি চালাতে পারি। সেটাও তো সরকার করছে না। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র মানবিক আবেদন ও মানবিক সাহায্যের মধ্যে যদি সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে এদের প্রত্যাবর্তন দীর্ঘায়িত হতে পারে। সেখানে অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যেটা পাকিস্তানী নাগরিক যারা আটকা পরেছিলেন সেই ১৯৭২ সাল থেকে, এরকম একটা দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনায় তারা এখানে থেকে যায় কিনা।
পরিচিতি: যুগ্ম-মহাসচিব, বিএনপি
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ