বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে রাষ্ট্রের ভূমিকা অনেক বেশি
সুলতানা কামাল
বাল্যবিবাহ আইনের স্পিরিটের সঙ্গে একমত নই আমরা। মানবাধিকার সংরক্ষণে আমি কাজ করে আসছি চল্লিশ বছর ধরে। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনটি মেনে নিতে আসলে আমরা বাধ্য হয়েছি। ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনটি’, ‘আমরাও পারি’ মোটেও সমর্থন করে না। এ বিষয়ে আইন যেহেতু হয়েছে আমাদের হাতে আসলে কিছু করার নেই। তবে আমরা যেটা পারি সেটা হলো আইনটাকে বদলাতে ক্যাম্পেইন করে যেতে পারি। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধকল্পে গঠিত জাতীয় কমিটি কিভাবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করবে আমি জানি না। এ ধরনের কমিটির মাধ্যমে বাল্যবিবাহ নিরোধ করা যাবে না।
বাল্যবাবিবাহ প্রতিরোধে প্রয়োজন অ্যাওয়ারনেস। এখানে অ্যাওয়ারনেসের বিকল্প নেই। প্রতিটি মেয়ে নিজেকে জানা, নিজের অধিকার সংরক্ষণ করা, সামনের দিনগুলোতে যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে তার জীবনে তা মোকাবিলা করার প্রস্তুত নেওয়া। তবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সাধারণের চেয়ে রাষ্ট্রের কর্তব্য অনেক বেশি। এখানে রাষ্ট্রকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দেওয়া শহিদেরা এমন বাংলাদেশ চাননি যেখানে থাকবে বৈষম্য। যেখানে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকবে। নৈতিকভাবে রাষ্ট্রের কাছে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে। মানুষ যাতে সঠিক বিচার পেতে পারে সেই ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। মানুষ যাতে সঠিক বিচার পাওয়া, স্বস্তির সঙ্গে বাঁচতে পারে রাষ্ট্রকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
বাল্যবিবাহ সাধারণ মানুষের সচেতনতাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। পরিবার এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পরিবার যদি তার পরিবারের মেয়ে সদস্যটিকে অল্প বয়সে বিয়ে না দেয় তাহলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ সম্ভব। সমাজকেও এখানে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। সকলের সম্মিলিত চেষ্টা থাকলে বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করা না গেলেও কমিয়ে আনা সম্ভব। এ লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কাজ করা উচিত।
পরিচিতি: মানবাধিকারকর্মী/সম্পাদনা: আশিক রহমান